Modern slavery

যৌনতা সৃষ্টির জন্য সর্বোচ্চ শক্তি; যা দিয়ে সে স্রষ্টাকে ছুঁতে পারে। মানুষ সৃষ্টি করতে পারে মানুষকে। অবশ্য ‘হও’ বললে হয়ে যাওয়ার মতো না। প্রলয়ঙ্কর ধ্বংসের পরে পৃথিবীতে স্থাপন করতে পারে নতুন সভ্যতা। ক্ষমতা যেমন ‘আলো’ হয়ে উঠতে পারে; তেমন অন্ধকারও। বিশেষ করে যথার্থ ব্যবহার জ্ঞান না থাকলে।

কোরান বলেছে নারী শষ্যক্ষেত্র। নিষ্প্রাণ মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে বেদুইনদের সামনে এক পুরুষ বলছেন, নারী শষ্যক্ষেত্র। হান্টার গেদারার সমাজ ব্যবস্থাকে অতিক্রম করে মানুষ স্থায়ী হতে পেরেছিল এগ্রিকালচারাল রেভোল্যুশনের জন্য। সেই স্থায়ী হওয়াই নগরায়নের সূচনা; সূচনা মানব সভ্যতার। অস্থির এবং যাযাবর পুরুষ যেন হান্টার গেদারার যুগের শিকরহীন সত্তা।

একখণ্ড শষ্যক্ষেত্রের মতো নারী তাকে স্থায়ী সভ্যতায় প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। সুযোগ দেয় সমাজের শরীরে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে স্থাপন করার। এইজন্য মুসলিম সমাজব্যবস্থার বহু ক্ষেত্রে বিবাহিত হওয়া যোগ্যতার মাপকাঠি। অনুরূপ প্রতিটা ধর্মই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বুঝতে ও বুঝাতে চেয়েছে যৌনতাকে। কারণ, যখন রাষ্ট্র ও আইনের জন্ম হয় নি; তখনো ধর্ম আর যৌনতা ছিলো।

কওমি মাদরাসা অব্দি যৌনতা ঘটিত কারণে সমালোচিত হয়েছে বেশ। এর মানে এই না; তাদের বিশ্বাসে ঘাটতি আছে। এর মানে, যৌনতার ক্ষমতা ও প্যাটার্ন নিয়ে সচেতনতা যথেষ্ট না। এর সর্বোত্তম জবাবটা আল্লাহ সূরা হাদিদে দিয়েছেন। সংসার ছেড়ে আল্লাহর জন্য সন্ন্যাসী হবার কথা আল্লাহ বলেন নি; মানুষই আবিষ্কার করেছে।

কিন্তু তাও তো ভাল মতো করতে পারে না। ব্যবসা, ধর্ম, রাজনীতি- যা-ই হোক; বিবাহিতদের দীর্ঘ সময়ের জন্য আরেক জায়গায় পড়ে থাকা না ধর্মসম্মত; না প্রকৃতিসম্মত। যৌনতা ট্যাবু বানিয়ে গিঁট মেরে রাখার জিনিস না। ধর্মের নামে এসেটিক জীবন বেছে নিলেও স্থিরতা সহজ না সবার জন্য। উপরন্তু বৃদ্ধি পায় বিকৃত কাম। প্রবল প্রতাপশালী ব্যক্তিও দাসে পরিণত হতে পারে। যতো বড় শক্তি; ততো বড় দাসত্ব।

শিল্প বিপ্লব বাড়িয়ে দেয় যৌনতার কদর। মানুষই একমাত্র উৎপাদনযন্ত্র; যা নতুন উৎপাদনযন্ত্র তৈরি করতে পারে। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সত্যিই এটা বিপ্লব। তারপর জাতীয়তাবাদ, আদমশুমারি এবং গণতন্ত্র। আন্দোলন আর ভোটের যুগে মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জরুরত আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। ফলে যৌনতা কখনো প্রত্যক্ষ, কখনো পরোক্ষভাবে মালিকে পরিণত হলো; মানুষ যেখানে দাস।

হররোজ মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলা আপনার মুখ থেকে পতিতা প্রসঙ্গে কিছু বেরোবে না। বেরোবে না তাদের পুনর্বাসন কিংবা অন্তত বেঁচে থাকার মতো একটা জীবনের অধিকারের আলাপ। কারণ আপনার মস্তিষ্ক যৌনতাকে দিনের আলোয় রিপ্রেস করতে শিখেছে; রাতের আঁধারে তোষামুদ। এর বাইরের কিছু ইনপুট দিতে গেলেই, ‘৪০৪ -সাম এরর ফাউন্ড’।  

মোটামুটি সাবালক হবার পরেই ধর্মের কাছ থেকে বিয়ের অনুমোদন আদায় করে নেয়া যায়। রাষ্ট্র সেই অনুমতি দেয় আঠারো কিংবা একুশ বছর বয়সে। এরপরেও আপনি বিয়ে করেন না। একটা অর্থনৈতিক সংগতি করে তিরিশ, বত্রিশ কিংবা আরো পরে সংসার খুঁজতে চান। বুঝতে পারছেন আপনার দাসত্ব? ধর্ম না; আইনও না; এক অদৃশ্য বিশ্বব্যবস্থার পায়ে মাথা রেখে আপনি পড়ছেন, “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা”।

লেখক পরিচিতি –
আহমেদ দীন রুমী
ইসলামী স্টাডিস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *