অন্ধকার একটা ঘর ।নিস্তব্ধ,শ্বাস রুদ্ধকর।নিঃসঙ্গ, অসহায়-আপনি বসে আছেন ঘরের একটি কোনে,মাথা নিচু করে।জীবনের নানা প্রতিকূলতা আপনাকে চেপে ধরেছে,আপনি হাল ছেড়ে দিয়েছেন।কারণ এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়ার কোন উপায় আপনার জানা নেই। কিন্তু হঠাৎ স্বর্গীয় কোন কন্ঠে ভেসে আসে মনোমুগ্ধকর এক আহ্বান,
“হাইয়ালাল ফালাআ———-“। সাফল্যের দিকে এসো।মুসলিম হিসেবে আমাদের বিভিন্ন দায়িত্ব আছে।যা আল্লাহ ‘তায়ালা পবিত্র কুরআন ও রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত -এর মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ ফেরেশতা, জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে তার পবিত্র বাণী পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কাছে এবং তিনিই আমাদের নানা কর্তব্য গুলো জানিয়ে দিয়েছেন।
রোজা,হজ্জ,যাকাত এসব ফরজগুলো এভাবেই আমাদের কাছে এসেছে। কিন্তু আল্লাহর একটি আদেশ রয়েছে, যা বাকি আদেশগুলো থেকে ভিন্ন।
আল্লাহ যখন আমাদের উপর নামাজ ফরজ করলেন, তিনি সেই আদেশ ফেরেশতাদের মাধ্যমে পাঠাননি।বরং তার প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদ (সাঃ)- কে পৃথিবী থেকে সপ্তম আসমানের উপরে নিয়ে গিয়েছিলেন।যেখানে স্বয়ং জিবরাইল (আঃ)ও যাওয়ার অনুমতি পাননি।
নামাজ হচ্ছে এমন একটি ইবাদাত, যেখানে আমাদের শরীর ও অন্তর দুটো মিলেই আল্লাহর কাছে নতো হয়।শরীর ও অন্তর দুটোর দিকেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আমাদের দেহকে না খাইয়ে রাখলে বা ক্ষতিকর বস্তু খাওয়ালে যেমন আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি,তেমনি নিয়মিত নামাজ না পড়লে আমাদের অন্তর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ সমস্যার মূলেই রয়েছে অন্তরের অসুস্থতা। চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, কত মানুষ আছে যাদের দেখলে মনে হয় মানুষের সুন্দর জীবন যাপন করার জন্য যা যা প্রয়োজন সবই তাদের আছে। তবু্ও কেন এতো অশান্তি, কেন এতো বুক ভরা আক্ষেপ ?বর্তমান একজন বাবা-মা তার সন্তান ফজরের নামাজ বাদ দিলে যত না কষ্ট পায়,তার চেয়ে লক্ষ্য গুনে কষ্ট পায় পরীক্ষায় GPA-5 না পেলে।
দিনে পাঁচবার মুয়াজ্জিনের হৃদয় জুড়িয়ে যাওয়া কন্ঠ আমাদের আহবান জানায়।সাফল্যের দিকে ছুটে যাওয়ার জন্য।মুসলিম হিসেবে আমরা জানি এবং বুঝি নামাজ পড়াটা আসলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ পড়লে আমাদের ভালো লাগে। অন্তরে এক অতুলনীয় শান্তি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কোন না কোন কারণে আমাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অভ্যাসটা গড়ে তুলতে পারছি না। অথচ যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে তাদের জিজ্ঞেস করলে দেখবেন,তাদের পক্ষে নামাজ ছেড়ে দেওয়াটাই বেশি কঠিন। নামাজের ওয়াক্ত গড়িয়ে যেতে থাকলে তাদের মনের মধ্যে এক অস্বস্তি কাজ করতে থাকে।তারা কি তাহলে এভাবেই জন্মেছেন? তাদের মস্তিষ্ক কি অন্যদের থেকে ভিন্ন ভাবে কাজ করে?বাস্তবে আপনি যদি এক ওয়াক্ত নামাজও না পড়ে থাকেন,আপনার পক্ষেও খুব সহজেই সেই অবস্থায় যাওয়া সম্ভব।
আজকে আপনার মনে হচ্ছে ফজরের সময় কাঁচা ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করাটা অসম্ভব।আগামীকাল সেই আপনারই মনে হবে ফজরের সময় নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে থাকাটা অসম্ভব। প্রথমত,আমাদেরকে আমাদের মস্তিষ্ককে বুঝতে হবে।আমরা যখন যেকোনো নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে যাই, আমাদের মস্তিষ্কে সেই কাজটার সাথে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। আস্তে আস্তে সেই কাজটি আমাদের জন্য আরও সহজ হতে থাকে।মূল কথা হচ্ছে,আমাদেরকে বুঝতে হবে যে,প্রথমদিকে নামাজ পড়তে কষ্ট হলেও যতো দিন যাবে নামাজ পড়াটা আমাদের জন্য ততো সহজ হতে থাকবে।
বলা যেতে পারে, ৩-৬ মাস যদি আমরা নিয়মিত নামাজ পড়তে থাকি এবং সেই সাথে আল্লাহর কাছে অনেক অনেক দোয়া করি, যেন তিনি আমাদের জন্য নামাজটাকে সহজ করে দেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ এটি আমাদের জন্য একটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।ভাবছেন টানা ৩-৪ মাস আমি নামাজ কীভাবে পড়বো ! ভেবে দেখুন, কতো মানুষ যারা নামাজ পড়ে না,কিন্তু রমজান মাসে রোজা রাখে। তাদের জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন, প্রথমদিনে রোজা রাখাটা অনেক কষ্টকর ছিল। কিন্তু ২৯ তম দিনে মনে হবে রোজা কোনদিক দিয়ে গেল টেরই পেলাম না।
তাই আমরা নামাজ পড়ার অভ্যাসটা ধারাবাহিকভাবেই গড়ে তুলতে পারি।আমি যদি বর্তমানে এক ওয়াক্ত নামাজও না পড়ে থাকি তাহলে আমি প্রথমে যেকোনো একটি নামাজ বাছাই করবো।ধরে নিই মাগরিবের নামাজ।আমি নিজেকে চ্যালেঞ্জ করবো আজ থেকে যতো যাই হোক না কেন আমি মাগরিবের নামাজ মাগরিবের ওয়াক্তেই পড়বো।যেখানেই থাকিনা কেন, আমি মাগরিবের ওয়াক্তেই নামাজ পড়ে ফেলবো।এভাবে নিয়মিত পড়তে পারলে তার মানে আমি পরবর্তী ধাপে উঠে গেলাম। এখন আমি মাগরিবের পাশাপাশি আসরের নামাজটাও টার্গেট করতে পারি। এভাবে করে আমরা আস্তে আস্তে নিয়মিত নামাজ পড়ার অভ্যাসটা গড়ে তুলতে পারি। বিষ্ময়কর বিষয় হল এই যে,আপনি যখন এভাবে একটু একটু করে নামাজ পড়ার অভ্যাসটা গড়ে তুলবেন তখন দেখবেন কেমন করে যেন আপনার জীবনের বাকি সব কাজগুলোও সহজ হয়ে যাচ্ছে ।মনে হবে,এই তো সেদিনও মনে হচ্ছিল জীবনে এতো সমস্যা, এতো বাধা-বিপত্তি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সবকিছু সুন্দরভাবে গুছিয়ে গিয়েছে।ছোটখাট কিছু সমস্যা আসলেও নিজেকে আর অসহায় মনে হবে না।
পরিশেষে আমাদেরকে একটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে আমরা যদি মেনে নিই যে,আল্লাহ আমাদের রব এবং পবিত্র কুরআন তাঁর প্রেরিত কিতাব তাহলে আমাদের অবশ্যই নামাজ কায়েম করতে হবে।কারণ নামাজ শুধু আমাদের আখিরাতকেই সুন্দর করবে না,বরং বর্তমানকেও সুন্দর করবে।এই মুহূর্তে যতো সমস্যা, যতো বাধা-বিপত্তি সবকিছুর সমাধান করবে।নামাজ আমাদের অন্তরের শূন্যতাকে দুরীভূত করে জীবনের উদ্দেশ্যকে পূর্ণতা দান করবে।
তাই আসুন আমরা এখন থেকে, এই মুহূর্ত থেকে অঙ্গীকার করি,আমরা যেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিয়মিত নামাজ আদায় করতে পারি।
লেখকঃ
রিফফাত আরা রাহা
হোম ইকোনমিক্স কলেজ, (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)