Divine Book -The Holly Quran
অবাক কান্ড ! বই আছে কিন্তু বইয়ে লেখকের নাম নেই। হয়তো বা ছাপানোর ভুল। আরো এক কপি। নাহ্ তাতে ও নেই। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে ই যেন চায়না। আরো এক কপি , আক্কেল গুড়–ম তাতে ও তো নেই। এমনটাতো হবার কথা নয়। বই থাকবে তাতে লেখকের নাম থাকবেনা। বিস্ময়ের মাত্রায় যেন যোগ হয়েছে খুঁজে বের করার এক অজেয়নেশা। লেখকের নাম চাই- ই ,যে করে হোক- যেভাবেই হোক, যত সময়ই লাগুক, হাল কোনভাবেই ছাড়া হবে না। দমবার পাত্র তো নয়ই। এ দৃঢ় প্রত্যয়ের মাত্রা যেন তপ্ত মরুর ভর দুপুরের খই ফোটা বালুকা রাশির থেকে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটন্ত ঘোড়ার উল্কা বেগের ধাবমান গতির সাথে তুলনীয় -এমনতর ভাবে আগ্রহের মাত্রাটা বেড়েই চলছে। এক দোকান – আরেক দোকান, এভাবে করে সমগ্র বই পাড়ায় খোঁজা শেষ। কিন্তু লেখকের নামের দেখাই তো মিলছেনা।লেখকের নামের দেখা না পাওয়ায় মনের অস্থিরতাগুলো যেন আরো বেশি করে জ্বালা দিচ্ছে। ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুপাতের লাভার মত এর চলার তীব্রতা বেড়েই চলছে। বর্ষার ভারী বর্ষন শেষে খরস্রোতা নদীর পানিতে যেভাবে যৌবন আসে, মরা নদী ফিরে পায় হারানো যৌবন তার চেয়ে ও বেশি জ্বালা দিচ্ছে মনের অস্থিরতা গুলো।এটা আবার কোন অ™ভ’ত ধরনের বই। থাকগে-ও সব ,নাম নেই তো হয়েছে কি ? এবার খুঁজে দেখি এটার ভেতরে কি আছে ? শুরু হয় এই নবতর বই অধ্যয়নের যাত্রা। কি আশ্চ্যর্য ! যতই পড়া এগুচ্ছে ততই বিস্ময়ের ঘোর লাগছে। এত সুন্দর,এত তৃপ্তিদায়ক,এর আগেতো অনেক বই পড়েছি এমনটাতো কখনো মনে হয়নি। অধ্যয়নের মাত্রায় নতুন করে গতি বাড়ছে। আর যতই অধ্যয়নের গতি বাড়ছে ,ততই মনের মনিকোটায় কষ্টের জমাট বাধা বরফের পাহাড় সদৃশ ব্যথাগুলো যেন গলে গলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। মনের মধ্যে কে যেন ঢেলে দিচ্ছে তৃপ্তির এক প্রশান্তি। মনের অশান্ত সাগরে যে ঝড়ো হাওয়া বইছিল ,তা আস্তে আস্তে করে নিঃশেষ হয়ে শান্ত সুবোধ বালকের মতো হয়ে যাচ্ছে। হয়ে যাচ্ছে শীতকালের নিস্তরংগ শান্ত পুকুরের পানির মত। এই অধ্যয়নের যাত্রা চালু রাখতেই হবে, লেখকের দেখা হউক আর নাই-ই হউক ।
প্রিয় পাঠক! এটা ছিল একজন বিখ্যাত ব্যক্তির মনের অবস্থা। সত্তর দশকের সাড়া জাগানো পপসংগীত শিল্পী ক্যাট্স ষ্টীভেন্স এর অস্থির মনোভাবের প্রকাশ।সারা দুনিয়াজোড়া খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব।ছিল অর্থের বৈভব,ছিল প্রাচুর্যের পাহাড়। কিন্তু ছিল না মনের মধ্যে শান্তি। অশান্তির শকুনেরা কুরে কুরে খাচ্ছিল তার শান্তির শ্বেত কপোতগুলিকে। মনের সমুদ্রে সারাক্ষন বইত অশান্তির সাইক্লোন।যেথায় ছিল তপ্তমরুর লু-হাওয়া,যা ক্ষনে ক্ষনে ঝলসে দিচ্ছিল চিন্তার নরম জমিনের ফসলগুলোকে যেগুলো বেড়ে উঠছিল পাশ্চাত্যের আলো হাওয়ায় লকলকিয়ে,তরতরিয়ে।অবাধ স্বাধীনতায় মনের কোন চাহিদাই তার অপূরনীয় কখনই থাকতনা। বহু জায়গায় গেলেন প্রশান্তির পরশ পেতে। যত যান ততই যেন শান্তির শ্বেত কপোত দূরে সরে যেতে লাগল, যোজন যোজন দূরে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন জেরুজালেম যাবেন, ঈসা মসীহ এর পবিত্র জন্মভ’মি ,পবিত্র তীর্থধাম। যেই ভাবা সেই কাজ। সিদ্ধান্ত দ্রæততার সাথে কার্যকরও করলেন। সেখানে গিয়ে অনাকাংখিত ভাবে পেয়ে গেলেন এই অ™ভ’ত, অত্যাশ্চর্য বইয়ের সন্ধান। বইটা ছিল আরবী আর ইংরেজী ভার্সনে। অধ্যয়নের শুরুতে হোচ্ট খেলেন,অবাক হলেন। তার চক্ষু চড়ক গাছ। যখন শুরুতে পড়লেন ,“এটা এমন একখানা বই যাতে নেই কোন ভুল,নেই কোন সন্দেহ করার মত কোন বিষয়”। এটা এক রকম র্দুলংঘেয়,অজেয় এক চ্যলেঞ্জ। এতদিন তিনি জানতেন,সবার মত জানতেন -কোন বই কেউ লিখলে ভ’মিকায় লিখে দেয় বইটাতে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে ,কারো নজরে এলে তা যেন দয়া করে দেখিয়ে দেন,পরবর্তিতে তা আরও সুন্দর,পরিবর্তন,পরিমার্জন,পরিবর্ধন করে উপহার দেয়া হবে। কিন্তু এই বইটা পড়তে গিয়ে তিনি বার বার অবাক হচ্ছেন, চিন্তার সূত্র বার বার ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, কিভাবে সম্ভব এটা ,চিন্তার সূত্র হোচট খাচ্ছে।এই বইটা চিন্তার জগতে তুলছে বিশাল ঝড়। এও কি সম্ভব ভুল কিংবা সন্দেহ মুক্ত বই। তাবৎ দুনিয়ায় কোন লেখক নেই, যিনি এ ধরনের এক চ্যলেঞ্জ দিতে পারেন। অধ্যয়নের এক পর্যায়ে আরও এক ধাক্কা খেলেন,যখন তিনি পড়লেন যে ,“এই বইযের কোন একটি অধ্যায় কিংবা তার কোন একটি পংক্তির সমত’ল্য কোন একটি পংক্তি বা অধ্যায় সমগ্র জ্বীন কিংবা মানুষ একা কিংবা সম্মিলিত ভাবে পরস্পর পরস্পরকে যদি সর্বাত্মক সহযোগিতা করে,তাহলেও রচনা করতে পারবেনা ”।
চ্যলেঞ্জ! আপনি ও কি অবাক হচ্ছেন না এ ধরনের চ্যলেঞ্জ পৃথিবীর ইতিহাসে কেউকি কখনো শুনেছে,না ছুড়ে দিয়েছে? আর তা দিয়ে থাকলে আদৌ কি তা টিকে ছিল কখনো ? থাকবার কথাও নয়। এখনো যদি কেউ এধরনের চ্যলেঞ্জ দিতে চায় তাকে আমরা তা প্রমান করতে বলব,আর যদি তা প্রমান করতে সক্ষম না হয় তাহলে সে সবার কাছে হেয় প্রতিপন্ন হবে,উপহাসের পাত্রে পরিণত হবে, হবে ঠাট্টার পাত্র। প্রিয় পাঠক! আপনি অবাক হচ্ছেন ! এ রকম এক দূর্দান্ত চ্যলেঞ্জ ! তাহলে আপনি নিজে ও চেষ্টা করে খুঁজে দেখতে পারেন। বার বার চেষ্টা করেও সফল হতে পারবেন না। সফলতার খাতার কোন পাতাই আপনাকে কষ্ট করে খুলতে হবেনা ,যা এ পর্যন্ত প্রমানিত সত্য ।
এটা এমন একটা বই,যার কোন না কোন একটি অংশ,যা কিনা ছেলে,বুড়ো,যুবক -যুবতী সব বয়সীরা পাঠ করে।এটা পড়ে তারা মিটায় তাদের মনের ক্লান্তিকর জ্বালাগুলো। পৃথিবীর যে কোন বই থেকে এটা বেশি পড়া হয়। শুধু কি তাই ,বহু বহুগুন বেশি পড়া হয়। যেমন এম.এ ক্লাশের পড়াটা যেমন কোন প্রাইমারী কিংবা হাইস্কুলের কিংবা কলেজের কোন শিক্ষার্থী কিংবা কোন কৃষক পড়েনা কিন্তু এই বইয়ের বেলায় তা সম্পূর্ন ব্যতিক্রম। বিস্ময়কর মনে হলেও সত্য যে ,পুরো বইটা মুখস্থ করে ফেলেছে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় এককোটিরও বেশি। পৃথিবীতে এত বড় কলেবরের কোন বই হুবহু দাড়ি,কমা,সেমিকোলন সহ মুখস্থ করার এবং তা বছরের পর বছর ধরে মনে রাখার ঘটনা দ্বিতীয় আর একটি ও নজির নেই এবং তা কোন মতে সম্ভব ও নয়।
আপনার বিস্ময়ের মাত্রায় আরও এক ধাপ। এই বইটার কপিগুলো বিশ্বের প্রতি দেশে,প্রতি সমাজে হুবহু একই রকম।কোন একটি লাইন,বাক্য,শব্দ,অক্ষর,বর্ণবিন্যাস,এমনকি দাড়ি,কমা, সেমিকোলন, বরং তা শুদ্ধ করে পড়ার ও উচ্চারন ভংগিমা সর্বত্রই একই রকম। এমনকি হাজার বছর আগের কপি এখনকার কপি তাতে ও কোন কম বেশি নেই। আপনি ও চাইলে তা প্রমান করে দেখতে পারেন। পৃথিবীর পাশ্চাত্য কিংবা প্রতিচ্যের যে প্রান্তে-ই থাকুকনা কেন, যে প্রান্ত থেকে-ই এবং যে সময়ের এ বইয়ের কপি সংগ্রহ করুন না কেন ,দেখবেন তা হুবহু ,অবিকল,অবিকৃত। এরকম আপনি আর কোন ্বই পাবেন না। প্রয়োজন মনে করলে নিজে এ ধরনের পরীক্ষায় অবতীর্ন হতে পারেন। পৃথিবীতে এই বইটার আলো দেওয়ার যাত্রার শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত সুদীর্ঘকালের সময় পর্যন্ত নেই কোন পরিবর্তন ,পরিবর্ধন,পরিমার্জন। এ বইটা যে হুবহু থাকবে পৃথিবীর লয় পর্যন্ত তা অবশ্য এ বইয়ে বলা আছে।
বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে গননার ক্ষেত্রে মানুষের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার। সেই কম্পিউটার এই অত্যাশ্চর্য় বইটি সম্পর্কে মন্তব্য করেছে ,“ পৃথিবীর সমস্থ মানুষ যদি সম্মিলিতভাবে পৃথিবীর সমস্থ বয়স জুড়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পরিশ্রম করে যেত অনুরূপ একখানা বই রচনার জন্য ,তবু ও তা চিরদিন থেকে যেত সম্ভাব্যতার সীমানা থেকে অনেক দূরে। এ বইয়ে যে সব নিয়মকানুন শৃংখলা মানা হয়েছে ,১৯ সংখ্যার জটিল জালকে যেভাবে এটে দেওয়া হয়েছে,এর মধ্যে তেমনিভাবে সমশব্দে,সমবাক্য, সংখ্যায় সমান সংখ্যক অক্ষরে,অনুরূপ বৈশিষ্ট্যের একখানা বই রচনার জন্য সময়ের প্রয়োজন পড়ত ৬২৬ ী ১০২৬ বৎসর। উল্লেখিত সেপট্রিলিয়ান সংখ্যাটির মান কত ? এর পরিমাপ ভাষায় প্রকাশ করা সুকঠিন।এবং তা অনুধাবনের অনেক বাইরে। সংখ্যাগত ভাবে এর প্রকাশ (৬২৬,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০) ৬২৬এর পরে ২৬টি শূণ্য। প্রিয় পাঠক ! আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে যে, পৃথিবীর বর্তমান বয়স ৪৫০ কোটি বৎসর। একটু তুলনা করুন জনসংখ্যার হিসেবে পৃথিবীর বর্তমান পরিস্থিতি-ই যদি শীর্ষতম হিসেবে ধরে নেই অর্থ্যাৎ পৃথিবীর ৫০০কোটি(যা পরিবর্তনশীল)মানুষকে পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই বইটির অনুরূপ একখানি বই লেখার কাজে নিয়োজিত বলে ধরে নেই,উক্ত কম্পিটার লব্ধ ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, মানবজাতির এই মহাসম্মিলন প্রসূত কাজের অগ্রগতির মাত্রায় মান হবে (৪৫,০০০,০০০,০০০ ী ৫,০০০,০০০,০০০)=২২.৫ ী ১০১৯ কর্মবৎসর,যা কিনা সেপট্রিলিয়ন সংখ্যাটির একশতকোটি ভাগের মাত্র ৩৫ ভাগের সমান। অর্থাৎ পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যার সমান সংখ্যক মানুষ যদি পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে থাকত ,তার পরিমান হত সমুদয় প্রকল্পটির মোট কাজকে একশতকোটি ভাগ করে তা থেকে মাত্র ৩৫ ভাগ নিলে যতটুকু পরিমান হয় ঠিক ততটুকু (০.০০০,০০০,০৩৫) যা হিমালয়ের পাদদেশের ছোট্ট একটা নুড়ির তুল্য। আর এ প্রকল্পের শর্ত হল এই যে, প্রতিটি মানুষের আয়ুস্কাল ৪৫০ কোটি বৎসর হওয়া বাঞ্চনীয়। ভাবাবেগহীন ,পক্ষপাত দোষমুক্ত ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের এই রায় কি বিস্ময়ের সৃষ্টি করে না ? প্রিয় পাঠক ! এই রকম একটি বিষয় সম্পর্কে কি জানতে ইচ্ছে করে না ?
আরও অবাক হওয়া ব্যপার ! এই বইটিতে আছে বিজ্ঞান বিষয়ক সাতশত থিওরী। যে সমস্ত তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ক, বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষতার যুগে এসে বিজ্ঞান তার ছিটেফোটা মাত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। এই বইয়ের একটা অধ্যায়ের শুরুতে বলা হয়েছে ,“ শপথ ,এই বিজ্ঞানময় বইয়ের ”। এই বইয়ের এক জায়গায় বলা হয়েছে ,“মহাশূন্যে যা আছে সবই ঘুরছে”। এ তথ্যটা সত্য বলে স্বীকৃত হয়েছে বিজ্ঞানের জগতে Ñ এ কথা বলার প্রায় হাজার- বারশত বৎসর পর। আছে, মানব সৃষ্টির ক্রমবিকাশের ধারা Ñ এত সুন্দর করে,যা পাঠক অধ্যয়ন করা মাত্র সহজে বুঝতে সক্ষম। সৃষ্টির শুরুটা কেমন ছিল,কেমন করে এ পর্যায়ে আসল,সবগুলি বলে দেয়া আছে বিশদভাবে।এই বইয়ের আরো একটা থিওরী,“ মহাশূন্য প্রতিদিন বাড়চেছ” যা বর্তমানে “বিগব্যং থিওরী” নামে পরিচিত। দেয়া আছে, কিভাবে এই সাজানো পৃথিবীটা ধ্বংস হবে তার বিবরন।
সম্মানিত পাঠক ! এটা এমন একটা বই ,যার পরতে পরতে আলোচনায় আছে,শুধু কি কোন জাতি ,না শুধু কোন শ্রেনি, না কোন গোষ্ঠীর -কল্যাণ ও মংগলের কথা। না এমনটা, অবশ্যই নয়। আছে, সমগ্র মানবমন্ডলীর কল্যান ও মংগলের কথা। মানব জাতির প্রতিটি সমস্যার স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান । আছে, সমাজ বিকাশের ধারা গুলি ,সমাজের পরতে পরতে জমে থাকা সামাজিক আইনের নামে শৃংখলিত মানবসমস্যার উত্তরনের সহজতর সমাধানের সুন্দরতম পথ নির্দেশনা। সমাজের প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ অধিকার পাবার এক নিশ্চয়তাপত্র,এক অমোঘ বিধান। এ পথ নির্দেশনায় সমাজের পালাবদলে ,ইতিহাস তার নতুন গতিপথে চলে সৃষ্টি করেছে এমন এক অধ্যায়ের ,যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে শুধু লিপিবদ্ধ থাকবে, এমনটাই শুধু নয়, তা দ্যুতি ছড়াবে পৃথিবীর লয় পর্যন্ত। আছে মানব সমাজ কি করলে অধঃপতনের চরমতম নিম্নে ঠাই নেবে তার বিশদ বিবরন।
নিশ্চয় আপনি জানেন, মানব সমাজের দুটো অংশ-নর ও নারী। একটি অন্যটির পরিúূরক। ইতিহাস সাক্ষী ,সর্বকালে ,সর্বযুগে ,সর্ব সমাজে নারীর মর্যাদা ছিল অবহেলিত। নারী হল ভোগের সামগ্রী। বিভিন্ন উপায়ে- বিভিন্ন সমাজে তাকে ভোগ করা হত, এখনও তা চলছে । সমাজপতিরা নারীকে ভোগ করার জন্য কোন সংখ্যা সীমা রাখ্তনা । যখন খুশি তালাক দিত ,আবার ফিরিয়ে নিত। বর্তমানে অবাধে ভোগ করার জন্য নারীর সমান অধিকারের ধুঁয়া তোলা হচ্ছে ,নারীর প্রগতির নামে নারীর ভোগের পেয়ালা পূর্ন করে চলছে। অশ্লীলতা,বেহায়াপনা, উচ্ছৃংখলতা, লজ্জ্বাহীনতার একমহাপ্লাবন সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা- নারীকে শুধু মাত্র ভোগের সামগ্রীতে পরিণত করার জন্য। নারী যে একজন মানুষ-আলাদা স্বত্ত¡ার অধিকারী,তা কোনভাবেই স্বীকার করতনা ,যা এখনও কোন কোন সমাজে বিদ্যমান । অসহায় মানুষ, কন্যা সন্তান বোঝা হবে এই ভয়ে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে জীবিত দাফন করত। আর আজকের আধুনিক যুগে এসে কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার আগেই মেডিক্যাল টেষ্টের মাধ্যমে তাকে দুনিয়ায় আসতেই দিচ্ছে না। ফলাফল হচ্ছে, সেই সমস্ত সমাজে নারী পুরুষের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটি ধর্মে তো বলা হচ্ছে ঈভ তথা-নারী হল শয়তানের বাহন , আরেক ধর্মে নারীর কোন সম্পত্তির অধিকারই স্বীকার করা হচ্ছেনা। এভাবে করে বিভিন্ন অজুহাতে নারীকে তার সামাজিক অধিকার , অর্থনৈতিক অধিকার সহ তার প্রাপ্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রিয় পাঠক ! এই বইটার ৩য় অধ্যায়ের মধ্যে শুধু নারীর অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে। নারী কিভাবে তার সমস্ত অধিকারগুলো কত সহজে, সুন্দরভাবে ফিরে পেয়ে তা নিজের প্রয়োজনে ভোগ করতে পারবে ।
কী নেই এই বইয়ে ? এতে আছে অর্থনীতির অনেক সহজ ,সরল নীতিমালা। অর্থনৈতিক উন্নতির এক রোডম্যাপ। অর্থের প্রবাহ যাতে কোন একটি শ্রেণির, কিংবা গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি না হয়ে পড়ে,তার সুন্দরতম ও সহজ দিকনির্দেশনা। এ নিদের্শনায় চলে ,সমাজের বিভেদ দূর হয়ে যাবে। থাকবেনা উচু-নিচু ,ধনী-দরিদ্রের বৈষ্যমের দেওয়াল। শান্তির সুবাতাস সেই সমাজে হু হু করে বইতে শুরু করবে। ফিরে পাবে প্রতিটি মানুষ তার জন্মগত অধিকারÑ তথা অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ইত্যাদির মৌলিক অধিকার। আইনানুগ ভোগের এক নিশ্চয়তাপত্র। সমাজের কাউকে না খেয়ে মরতে হবে না। কাঁদবেনা বিচারের বানী নিভৃতে। অধিকারহারা মানুষের আহাজারী Ñআর রোনাজারীতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠবেনা।এককথায় মানব সমাজের সব ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরনের এক সহজতম প্রেসক্রিপ্সান।
অবাক করা ব্যপার ! আর যিনি এই বইয়ের প্রবক্তা তিনি নিজের জীবনের কোন অধ্যায়ে গেলেন না কোন পাঠশালা কিংবা কোন কলেজ বা কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন শিক্ষায়তনের দরজায়। না পারতেন লিখতে ,আর না পারতেন পড়তে। নিরেট নিরক্ষর মানুষ। তবে ছিলেন ঐ সমাজের সবচেয়ে ভদ্র,নম্র,বিনয়ী,বিশ^াসী,সত্যবাদি,পরোপকারী,সৎ ও সত্যপ্রকাশে অবিচল প্রতিবাদী এক কথায়- মানবীয় গুনাবলীর সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম বিকাশ ছিল তার মধ্যে পূর্ণ মাত্রায়। হঠাৎÑই বয়স যখন চল্লিশ ,তখনই এই বইয়ের কথাগুলো বলতে শুরু করলেন। সেই সময়টা ছিল সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। এই বইয়ের উজ্জ্বল আলোয় নি¯প্রভ হয়ে গেল তাবৎকালের সমস্ত সাহিত্যের উর্বর ফসলগুলো।গোত্রের,,স্থানের,কালের ,সমাজের ,দেশের গন্ডি পেরিয়ে Ñ ছড়িয়ে গেল পৃথিবীর প্রতিটি কোনায়। অন্ধকারের কালো গলিপথ গুলোতে জ্বলে উঠল আলোর মশাল ।যাত্রা শুরু হল এক আলোর মিছিলের । এ মিছিলে শরীক হতে লাগল পথহারা,দিশেহারা,দিকভ্রান্ত মানুষগুলো। দিন যত পেরুতে লাগল, এ মিছিল ততই বড় হতে লাগল। সময়-সুযোগ ,কালের প্রভাবে এ মিছিল আরো বড় হতে লাগল । অধিকার বঞ্চিত মানুষেরা ফিরে পেল তাদের ন্যায্য অধিকার । এমনটাই পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করেছে প্রায় চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে।
ইতিহাস সাক্ষী! এই বইটি একদল অসভ্য,অশিক্ষিত, বর্বর, নিষ্ঠুর, নির্দয়,দুর্ধর্ষ,মরুচারী বেদুইন Ñউট ,ছাগল, ভেড়া, দুম্বার রাখালÑএর হাতে তুলে দিয়েছিল রাজদন্ড, মাথায় তুলে দিয়েছিল রাজমকুট। এই বইয়ের যথাযথ নির্দেশনায় তারা এটা করতে পেরেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি করেছিল সর্বস্তরের এক আমূল পরিবর্তনের।এক বৈপ্লবিক সংস্কারেরÑ যার দূর্বার স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সমাজের সব জলুম অন্যায়-অত্যাচারের। শিকড়সহ মুলোৎপাটন করেছিল সকল ধরনের অনাচার,অবিচারের।ধুলিস্মাৎ করে দিয়েছিল উচু-নিচু, কালো-সাদা ,ধনী-দরিদ্র, অভিজাত- ক্রীতদাস কিংবা খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যকার সমাজপতিদের সৃষ্টি করা বিভেদ-বৈষম্যের দেওয়াল,সৃষ্টি করেছিল এক সাম্যবাদী মানবদরদী সমাজ ব্যবস্থার।
প্রিয় পাঠক ! চলমান সংঘাতময় পৃথিবীর মানুষদেরকে শান্তির সুবাতাস দিতে হলে ফিরে আসতেÑই হবে এই বইটার দিকনির্দেশনার দিকে, অনুসরন করতেÑই হবে এই বইয়ের অনুসৃত নীতিমালাগুলোকে, যেগুলো প্রায় চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে মেনে নিয়ে ঘোর তমসাপূর্ন অন্ধকার কালিমার পর্দা দিয়ে ঢাকা পৃথিবী এসেছিল আলোর রাজপথে । সৃষ্টি করেছিল এক সোনালী অধ্যায়ের যার কথা পৃথিবীর ইতিহাস মনে রাখবে তার লয় পর্যন্ত ।
আপনার কি জানতে ইচ্ছে করে না কি সেই বইয়ের নাম! এই বিস্ময়কর অত্যাশ্চর্য বইটার নাম হল ,আল-কোরআন। আরবী কোরআন শব্দের অর্থ হল সবচেয়ে বেশি পঠিত বই। আল শব্দ-ব্যবহার করে বলা হয়েছে শুধু মাত্র এই বইটাই। এই বইটা হল মহান আল্লাহর বানী , যা তিনি লওহে মাহফুজে এবং কোরআন মুখস্থকারীদের অন্তরে সংরক্ষন করে রেখেছেন ।
প্রিয় পাঠক ! অনেক কথাই বলা হল , ধৈর্য্য নিয়ে আপনি বক্তব্য শ্রবন করেছেন । নিশ্চয়ই এতক্ষনে আপনার মনে স্বাভাবিক নিয়মে জানতে ইচ্ছে করছে ঐ ব্যক্তিটার নাম ? এই ব্যক্তিটার বর্তমান নাম ইউসুফ ইসলাম।
আপনি যদি চান ! আপনি আপনার ব্যক্তিগত,পারিবারিক,সামাজিক, রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,দেশীয় ও আন্তর্জাতিকসহ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপনার ক্ষুদ্র গন্ডি থেকে শুরু করে জীবনের যেকোন পর্যায়ের ,যেকোন সময়ের সব ধরনের সমস্যার উত্তরনের জন্য এই বইয়ের দিকনির্দেশনা গুলো অনুসরন করে দেখতে পারেন। তবে শর্ত হল এই যে , ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা রাখতে হবে, মন্দ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ও ভালকে গ্রহন করার আকাংখা এবং এ আকাংখা বাস্তবায়িত করার ইচ্ছা থাকতে হবে, দুনিয়ায় যারা এমন ভাবে জীবনযাপন করে যা মানবিক গুনাবলী বাদ দিয়ে পশুর মত লাগামহীন ভাবে অর্থাৎ নিজেদের কৃতকর্ম সঠিক বা শুদ্ধ কিনা তা যাচাই করার প্রয়োজনও মনে করে না এর মানে হল Ñ যে দিকে সবাই চলছে বা তার প্রবৃত্তি তাকে যে দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে অথবা যে দিকে মন চায় সেদিকে চলতে অভ্যস্ত তাদের মত হওয়া চলবে না। এ ছাড়া ও আপনাকে এই বই অধ্যয়ন করতে গেলে এই বই সম্পর্কে পূর্বতন সমস্ত ধারণা গুলো যতটা সম্ভব মন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। নিজের চিন্তার জগতকে সম্প্রসারিত করে স্থান, কাল, পাত্র, জাতি, ধর্ম ইত্যাদির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে খোলা মন নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে , অনুসরন ও অনুধাবন করার জন্য দৃঢ়চিত্তে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলেই অতীতের সবার মত কাংখিত,বাঞ্চিত, চাহিত, চিরন্তন, শ্বাশত, আলোকিত সত্যের রাজপথের দিশা পাবেনই।
এক অত্যাশ্চর্য বই –
অধ্যাপক মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ