আল্লামা ইকবালের প্রতি শ্রদ্ধা
আজ ৯ই নভেম্বর। আল্লামা ইকবালের ১৪৩ তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, ছিলেন একাধারে কবি, দার্শনিক, ডক্টর, ব্যারিস্টার, রজানিতিবিদ ও অধ্যাপক। ইকবাল একটি গৌরব ও চেতনার নাম। ইকবাল একটি মুসলিম যুবকের প্রতিচ্ছবি। শেষ রাতের তাহজ্জুদের কান্নার রোনাজারি। ইশকে রাসুলের উত্তাল তরঙ্গের বারিধারা। নিপীড়িত, নিগৃহীত মানবতার আর্ত চিৎকার। অবিচার, জুলুমের বিপক্ষে ইস্পাত প্রতিবাদ। ভোগবাদী, বস্তুবাদী সভ্যতার অহংকারের প্রাসাধকে ভূকম্পনে চূর্ণ করার হাতিয়ার। ভোগবাদী দর্শন, চিন্তা ও যুক্তির ইটে আঘাতকারী এক নাম আল্লামা ইকবাল। সবচেয়ে বেশি আলোকিত করেছেন উন্নতমানের সাড়াজাগানো কবিতার মাধ্যমে। অসংখ্য মানুষের হৃদয় আলোকিত করেছেন ,ইসলামী ভাবধারায় কবিতা লিখে পুনরুত্থানের জয়গান খেয়েছেন।
কালামে রাব্বানির তাফসীরকে কবিতার ভাষায় মানুষের সামনে উপস্থাপন করার শৈল্পিক মাধুর্য আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন। তার চিন্তার গভীরতা, উন্নত চরিত্র, ক্ষুরধার লেখনী ও বক্তৃতা, আন্দোলিত করেছে মোসলমানদের একটি উন্নত সমাজ বিনির্মাণে। তিনি আহবান করেছেন আল্লাহর একত্ত্ববাদ ও রিসালাতের আলোয় এমন একটি সমাজ ও সভ্যতা নির্মাণের আন্দোলন, যেখানে প্রতিটি মানুষ ফিরে পাবে সত্যিকারের আল্লাহর খিলাফত। সাম্য, ন্যায়বিচার, সম্মান ও আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা পাবে।
ইকবালের খুদি দর্শন আধ্যাত্যবাদ ও বাস্তবতার সমন্বয়ের মেকানিজম। যেখানে তিনি বলেছেন রাতের বেলায় আল্লাহর ইবাদতে সুফি হতে আর দিনের বেলায় সত্য ও ন্যায়ের পথে মুজাহিদ হতে। আল্লাহর প্রেম এতটাই অনুভব করতেন যে ,তিনি প্রতিটি মুসলিম যুবকের অন্তরে সেই ইশক অনুভব করার দোয়া করেছেন।
“জাওয়ানো কো শু’জে দি গর বকশে দে
মেরে ইশক, মেরে নজর বকশে দে।”
অর্থাৎ
হে আল্লাহ আমার অন্তরে যে প্রেমের জোয়ার বইয়ে দিয়েছ, যে অন্তরদৃষ্টি দান করেছ, প্রতিটি মুসলিম যুবকের অন্তরে সেই ইশক ও অন্তরচক্ষু দান করো।
তিনি অন্য একটি গজলে লিখেন,
“মিনারে দিলপে আপনা খুদা কা নুযূল দেখ
ইয়ে ইন্তেজারে মাহদি ও ঈসা ছোড় দে”
অর্থাৎ
তোমার হৃদয়ের মিনারে আল্লাহ পাকের তাজাল্লীর অবতরণ দেখ, মাহদি ও ঈসার অপেক্ষা ছেড়ে দাও।
মুসলিম যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,
“খুদি কি কার বুলন্দ ইতনা কি হর তাকদির ছে পেহলে
খুদা বান্দ পুছে, বাতা তেরা রিজা কিয়া হায়্য।”
অর্থাৎ
তোমার স্বত্বাকে ইবাদত, মেহনত, চেষ্টা, সাধনায় এতটা উন্নত কর তোমার ফলাফল নির্ধারণের জন্য আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে জানতে চান তোমার কি চাহিদা।
সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে ইসলামী সংস্কৃতি ও সাহিত্যের চর্চার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মুসলিম মনিষীদের আদর্শ, চিন্তা, চেতনা যুগ যুগ ধরে অবদন রাখছে মানবতাবাদী কল্যাণমূলক ও আদর্শীক জীবন গঠনে। আল্লামা ইকবাল তাদের অন্যতম। আমাদের সমাজে ইকবাল সাহিত্যের অধিক চর্চা সময়ের দাবি। সমাজে কবির অভাব নেই কিন্তু আল্লামা ইকবালের মত কবির বড়ই অভাব। চরিত্রহীন, কলুষিত সমাজের সংস্কারে ইকবালের মত আরও হাজারো ইকবাল খুবই দরকার।
জন্মদিনে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি, আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন।
লেখক পরিচিতি:
মোঃ খালেদ হোসেন
লেখক, পিএইচ ডি, গবেষক
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া।