গুরু রুমি ও হিন্দুস্তানি শিষ্য
ইকবালঃ
অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন চোখ থেকে জারি থাকে রক্তের ফোয়ারা
সমকালীন জ্ঞানে দ্বীন দুনিয়া ত্রস্ত ক্ষতিগ্রস্ত৷
রুমিঃ
জ্ঞান কে শরীরে আঘাত হানো, সাপাকৃতিতে বক্রে যাবে৷
হৃদয়ে আঘাত করো,বন্ধু হয়ে হৃদ্ধ করবে!
ইকবালঃ
হে, ব্যথায় কাতর প্রেমিকদের ইমাম!
মনে গেঁথে আছে তোমার সে উচ্চমার্গীয় কথা৷
শুকনো মগজ,খরা প্রান,আর ঠুনকো দেহে
কোত্থেকে তবে আসে প্রেয়সীর সুমহান সুর৷
বর্তমান আটকে আছে বেসুরো সেতারে
অবিশ্বাস,অপ্রমাণ আর অনুপস্থিতি তে৷
বলতো,কি খবর তার,রহস্য কি?
আদতে প্রেয়সী কি,তার সুর কি?
রুমিঃ
সব গানে যেমন সবার জন্য সমান বার্তা নেই৷
তেমনি,ডুমুর সব পাখির খাবার না৷
ইকবালঃ
আমি পড়ে নিয়েছি প্রাচ্য প্রতিচ্যের তাবৎ ইলম৷
তবু কেন প্রাণে ব্যাথা জাগে না?
রুমিঃ
সব হৃদয়হীন দের কাছে গিয়েছিলে,অসুস্থ হয়ে গেছো৷
আমাদের কাছে আসো,সুস্থ হয়ে উঠো!
ইকবালঃ
হে! তোমার দৃষ্টি আমার হৃদয় উন্মোচন করে দিয়েছে৷
বুঝিয়ে দাও আমাকে “জিহাদ ” এর গূঢ়ার্থ৷
রুমিঃ
সত্যের নির্দেশে সত্যের নকশা বদলে দাও
বন্ধুর পাথর দিয়ে বন্ধুর কাঁচ ভেঙে দাও৷
ইকবালঃ
প্রাচ্যের চোখ নেশাগ্রস্ত প্রতিচ্যের রঙে,
জান্নাতী হুর থেকেও বুঝি খুবসুরত প্রতিচ্য হুর?
রুমিঃ
চাকচিক্যময় হয় রৌপ্যালংকার ৷
তার থেকেও কি শরীরে,কাপড়ে কালি পড়ে না?
ইকাবালঃ
হায়! বিদ্যালয়ের তপ্ত লোহিতের জোয়ান দল
পশ্চিমের জাদুগরদের চাকচিক্যের শিকার৷
রুমিঃ
পাখা গজানোর আগেই যদি পাখি উড়তে যায়
তৎক্ষনাত বিড়ালের খাবারে পরিনত হয়৷
ইকবালঃ
কতকাল বিবাদ চলবে রাস্ট্রে আর চার্চে?
কোনটি শ্রেষ্ঠ, দেহ না মন?
রুমিঃ
রাতের অন্ধকারে ঝনঝন করে উঠে ব্রোঞ্জের মুদ্রা৷
সুনিপুণ মুক্তা মানিক অপেক্ষা করে ভোরের আলোর৷
ইকবালঃ
মানুষের রহস্যের ব্যাপারে আমাকে জানাও
মাটির প্রতিটি ধুলিকে চাঁদোয়া রঙে রাঙাও৷
তোমার চোখ আলোয় আলোয় পূর্ণ৷
আমায় বলতো মানুষের লক্ষ্য কি হবে,নলেজ নাকি ভিশন?
রুমিঃ
আপাদমস্তক মানুষ অস্তিত্বে “দৃষ্টি” ছাড়া বাকি সব ফেলনা৷
দৃষ্টিবান সেই-ই যার আছে অন্তর্দৃষ্টি ।
ইকবালঃ
তোমার বচনে নেচে উঠে পূর্বের ভূমি
উম্মত তো মরতে বসেছে ব্যাথায়৷
রুমিঃ
প্রতিটি ধ্বংসপ্রাপ্ত উম্মত ,
ধ্বংসের আগে পাথর’কে চন্দন জ্ঞান করেছিল৷
ইকবালঃ
এখন মুসলিমের মাঝে নেই সে রঙ ও ঘ্রাণ
কেমন ঠান্ডা হয়ে রয় তার লহু৷
রুমিঃ
যতক্ষন ব্যাথায় কাতরে উঠে না হৃদয়বানের প্রাণ
ততক্ষণ খোদা কোন জাতিকে লজ্জিত করে না৷
ইকবালঃ
যদিও অস্তিত্বের বাজার রোশনাই শূন্য
বলে দাও আমাকে, কোন সওদায় মানবের লাভ?
রুমিঃ
চালাকী বিক্রি করে হয়রানি কিনে নাও
চালাকি অনুমান তবে পাগলামি হচ্ছে নজর৷
ইকবালঃ
হে মাস্ত প্রেমিকদের প্রেমিক!
আমার বুঝে আসে না “ইচ্ছাশক্তি ” আর “ভাগ্য লিপি” কথা দুটির মানে।
রুমিঃ
ঈগল এর পাখা স্থান করে নেয় রাজার মুকুটে
কাকের পাখা পরে রয় অরক্ষিত ভাগাড়ে৷
ইকবালঃ
রাজার জীবন নাকি দরবেশী জীবন?
কি ছিল পয়গম্বরের জীবনালেখ্য?
রুমিঃ
আমাদের দ্বীন নীতি হলো প্রচেষ্টা আর সম্মুখারোহন৷
ঈসার দ্বীন নীতি হলো পাহাড় বেয়ে গুহায় গমন৷
ইকবালঃ
কিভাবে বশে আসবে মাটির শরীর
কি উপায়ে জেগে উঠবে সিনার সুপ্ত দিল?
রুমিঃ
বান্দা হও! আর ঘুরে বেড়াও তামাম জগৎ ময়!
থেমো না, যতক্ষণ না আসে খাটিয়ায় উঠার ডাক!
ইকবালঃ
দ্বীনের রহস্য ও বোধে আসে না৷
কিভাবে বুঝে আসবে কেয়ামতের বিশবাস?
রুমিঃ
তবে কেয়ামত হয়ে কেয়ামত কে দেখো!
সব কিছু দেখার এই একটাই উপায়৷
ইকবালঃ
তোমাতে প্রোজ্জ্বল কায়ানাতের হৃদয়
কিভাবে দৃঢ় হবে জাতির হায়াতকাল?
রুমিঃ
শস্যবীজ হও যদি পাখিরা খেয়ে ফেলবে
কুঁড়ি হয়ে রও যদি কীটনাশকে ঝরে পড়বে৷
শস্যবীজ গোপন রেখো,আপাদমস্তক বৃক্ষ হয়ে উঠবে
কুঁড়ি,মুকুল সামলে রেখো পত্র পল্লবে সুশোভিত হয়ে উঠবে৷
ইকবালঃ
কিভাবে মিলবে জ্ঞান প্রজ্ঞার সুরঙ্গ পথ?
কি প্রকারে হৃদয়ে আসবে দহন,বেদন,রোদন?
রুমিঃ
জ্ঞান প্রজ্ঞা আসে হালাল রিযিক থেকে
প্রেমে বরকত আসবে হালাল রিযিক থেকে৷
অনুবাদক পরিচিতি :
মাজহার আল হাসান
ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রায়োগিক ভাষাবিজ্ঞান-আল্লামা তাবাতাবায়ি ইউনিভার্সিটি, ইরান