Tao Te Ching- Lao Tzu
১.
যে তাও অনুসরণযোগ্য সে তো চিরন্তন তাও নয় ।
যে নামে নামকরণ করা যায় ,সে তো চিরন্তন নাম নয় ।
স্বর্গ মর্ত্যের উৎসের তো নাম নেই ।
অথচ দশ হাজার জিনিসের উৎপত্তি তো নামকরণেই ।
তাই না চেয়ে তুমি রহস্য দেখতে পাও ।
সারাক্ষণ চেয়ে অভিব্যাক্তিগুলো তুমি দেখতে পাও। এরা দুটোই এক –
যখন তারা দেখা দেয় তখন তাদের আলাদা আলাদা নাম ।
এই সাদৃশ্যই রহস্য ,
রহস্যের রহস্য ;
সকল বিস্ময়ের প্রবেশদ্বার ।
২.
জগতে সবাই সুন্দরকে চেনে সুন্দরভাবে ।
এর মাঝেই রয়েছে কদাকার ।
সকলেই ভালোকে চেনে ভালোভাবে ।
এর মাঝেই রয়েছে মন্দ ।
তাই হওয়া আর না -হওয়া পরস্পরকে সৃষ্টি করে । অসুবিধা ও সুবিধা পরস্পরকে সাধন করে ।
দীর্ঘ ও হ্রস্ব পরস্পরের সীমা নির্ধারণ করে ।
উঁচু ও নিচু পরস্পরের উপর নির্ভর করে ।
শব্দ ও কণ্ঠস্বর পরস্পরের সমন্বয় সাধন করে।
সম্মুখ ও পশ্চাৎ পরস্পরকে অনুসরণ করে ।
তাই পরমজ্ঞানী নির্লিপ্ত কর্মের মাঝে বাস করেন।এবং বিনা বাক্যে শিক্ষা দেন ।
এখানে দশ হাজার জিনিসের উৎপত্তি,
কিন্তু তারা স্বতন্ত্র নয় ।
তাই পরমজ্ঞানী উৎপাদন করেন, কিন্তু অধিকার করেন না;
কাজ করেন ,প্রত্যাশা করেন না ,
এবং সাফল্য লাভ করেন ,কিন্তু সাফল্যকর্মে মগ্ন থাকেন না ।
ঠিক যে কারণেই তার সাফল্য তাঁকে কখনো ছেড়ে যায় না ।
৩.
তুমি যদি কীর্তিমানের স্তাবকতা না করো;
অন্যরা বিবাদে লিপ্ত হবে না ।
তুমি যদি বিরল ধনরত্নে মূল্য না দাও ,
অন্যরা অপহরণ করা থেকে বিরত থাকবে ।
যদি লোকে কাম্য জিনিস না দেখে ,
তবে তারা উত্তেজিত হবে না ।
তাই পরম জ্ঞানী শাসন করেন ,
তিনি মানুষের মন শোধন করেন ।
তাদের উদর পূরণ করেন ।
তাদের উচ্চাশা দুর্বল করেন ,
এবং তাদের হাড় শক্ত করেন ।
মানুষকে চাতুরী ও কামনা ছাড়া রাখা হলে, বুদ্ধিজীবীরা সাহস পাবে না অনধিকারচর্চায় । ছলনাহীন কাজে, ব্যবস্থাপনার অভাব হয় না ।
৪.
তাও এত বিশাল যে তুমি এ ব্যবহার করো,
তবু সব সময় কিছু থেকে যায় ।
এ কি গভীর!
মনে হয় দশ হাজার সহস্র জিনিসের পূর্বপুরুষ ।
এ ধার ভোঁতা করে ,
গিঁট খুলে দেয় ,
দ্যুতিকে নরম করে,
জগৎ- সংসারকে একত্র করে ,
এ এতই সম্পূর্ণ ,
তবু মনে হয় বাকি আছে ।
এ শিশু কার আমি জানি না –
উচ্চে সমাসীন প্রাগৈতিহাসিক প্রথম পূর্বপুরুষের পূর্বেকার ।
৫.
স্বর্গ ও মর্ত্য মহানুভব নয় ।
আর তারা মানুষকে ভাবে খড়ের কুকুর ।
পরমজ্ঞানী মহানুভব নন ,
এবং সব জিনিসকে তিনি খড়ের কুকুর ভাবেন ।
স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝের স্থানটা হাপরের মত,
খালি করলে শেষ হয় না ;
মোচড় দিলে আরো বেরিয়ে আসে ।
অনেক কথা বলে তদন্ত করা ,
মাঝপথ ধরে রাখার মতো নয় ।
৬.
উপত্যকার আত্মা অমর ।
একে বলা হয় রহস্যময়ী নারী ।
রহস্যময়ী নারীর উন্মোচনকে বলা হয় ‘স্বর্গ এবং মর্ত্যের মূল ‘।
মনে হয় বিরামহীনভাবে রইবে ।
বিনা প্রয়াসে একে ব্যবহার করো ।
৭.
স্বর্গ মর্ত্য চিরকাল থাকে ,
স্বর্গ ও মর্ত্য চিরকাল থাকতে পারার কারণ ,
তারা নিজেরা জন্ম দেয় না ;
তাই তারা সব সময় প্রানবন্ত ।
তাই পরমজ্ঞানী নিজেকে সবশেষে রেখে প্রথম ।
তিনি তাঁর সত্তার বাইরে ,
এবং তাই তার আত্মা টিকে থাকে ।
তাঁর আত্মাহীনতার মধ্য দিয়েই ,
তিনি নিজেকে প্রকৃষ্ট করেছেন ?
৮.
সবচেয়ে ভালো জলের মতন ।
বিনা চেষ্টায়,
জল সকল জিনিসের মঙ্গল সাধন করে ।
তবে,
এ থাকে এমন জায়গায় যা মানুষকে ঘৃনা করে।
তাই এ তো তাও- এর মতন ।
বাসের জন্য পৃথিবী ভালো ।
মনের জন্য গভীরতা ভালো ।
দানের জন্য ভালো সময়জ্ঞান ।
কথার জন্য ভালো সততা ।
সরকারের জন্য ভালো আত্মকর্তৃত্ব ।
কাজের ব্যাপারে ভালো সামর্থ্য ।
তুমি যদি কোন্দল না করো,
কেউ তোমাকে দোষারোপ করবে না ।
৯.
উপচিয়ে ভর্তি করার চেয়ে থামা ভালো ।
অতি ধারালো তরবারি বেশিদিন টেকে না ।
স্বর্ণ ও রত্নাদি ভরা ঘর পাহারা দেওয়া যায় না ।
ধন ও গুণের দেমাক হয় তোমার কাল ।
কাজ শেষ হলে সরে যাও ।
এই হচ্ছে স্বর্গের পথ ।
১০.
উত্তেজিত পদার্থ আত্মাটিকে প্রশমিত করতে,
এবং একের মধ্যে ধরে রাখতে,
তুমি কি বিচ্ছিন্নতা পরিহার করতে পারবে ?
মানসিক চাপ থেকে মুক্তির ওপর,
তোমার শক্তি কেন্দ্রীভূত করতে,
তুমি কি শিশুর মতন হতে পারবে ?
তোমার অন্তর্দৃষ্টিকে শোধন করার জন্য ,
তুমি কি তা অব্যাহত রাখতে পারবে ?
জনগণকে ভালবাসতে এবং রাজ্য শাসন করতে,
তুমি কি অতি -পরিচালনা পরিহার করতে পারবে?স্বর্গের দ্বার উন্মুক্ত ও রুদ্ধ করতে,
তুমি কি নারী হতে পারবে ?
সারা বিশ্বকে আলোকিত করতে ,
তুমি কি যুক্তিবাদ থেকে মুক্ত হতে পারবে ?
একে জন্ম দাও এবং লালন করো ।
উৎপাদন করো ,কিন্তু অধিকার করো না ।
প্রত্যাশা ছাড়াই কাজ করো ।
উৎকর্ষ সাধন করো, কিন্তু দায়িত্ব নিও না ।
একেই বলে রহস্যময় গুণ।
মুল :লাওজি
তর্জমা: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান