তারানা-ই হিন্দী
সারা বিশ্বে’র মধ্যে শ্রেষ্ঠতম আমাদের এই হিন্দুস্তান
আমরা এদেশের বুলবুল,
এদেশ আমাদের গুলিস্তান
বিদেশ বিভুয়ে-ও যদি পড়ে থাকি তবুও এদেশ থাকে আমাদের হৃদয়ে ।
তুমি মনে কোর আমি সেখানেই থাকি যেখানে আমার হৃদয় বিরাজে
ঐ পর্বত সবচেয়ে উঁচু, যেন আসমানের নিকটতম প্রতিবেশী
জেনো ওরা আমাদের সান্ত্রী, ওরা আমাদের নিরাপত্তা রক্ষী
সহস্র নদী আর তটিনী এদেশের কোলে কুলু কুলু বয়
এদেশের প্রাণজ ফুলবাগান জেনো অনেকের ঈর্ষা জাগায়
হে গঙ্গা নদীর তরঙ্গমালা, তোমার কি সেই দিনের কথা মনে পড়ে?
যেদিন তোমার তীরে আমাদের অভিযাত্রীদল স্থায়ী আবাস গড়ে
ধর্ম তো শেখায়নি নিজেদের মধ্যে গড়তে বিভেদ-বিদ্বেষ
আমরা সবাই হিন্দী, হিন্দুস্তান-ই আমাদের দেশ ।
গ্রীক, মিশর ও রোম সব পতিত হয়েছে এই বিশ্ব থেকে
অথচ আমাদের নাম ও নিশানা আজ অবধি টিকে আছে
একথা বলা যায় যে আমাদের অস্তিত্ব মিটে যাবার জন্য নয়
যদিও শতাব্দীর পর শতাব্দী ছিলাম পরস্পর শত্রু তা নিশ্চয়
ইকবাল! এই জগতে কেউ-ই আমাদের আপনজন নয়
গোপন ব্যাথার সমব্যথী হবে কে আছে এমন এ বিশ্বময়।
তরানা-ই -মিল্লী
চীন ও আরব আমাদের,
হিন্দুস্তান আমাদের
আমরা মুসলমান;
সারা বিশ্ব-ই দেশ আমাদের
তাওহীদের আমানত বহন করছি সিনায় আমাদের
সহজ নয় মিটিয়ে ফেলা নাম ও নিশান আমাদের
এই পৃথিবীর মূর্তিশালায় প্রথম ঐ ঘর খোদার
আমরাই তার প্রহরী,
সেটিও প্রহরী আমাদের
তলোয়ারের ছায়ায় পালিত হয়েছে যৌবন সকলের
সরু চাঁদের মত খঞ্জর ঐ জাতীয় নিশান আমাদের
পাশ্চাত্যের উপত্যকায় ছড়িয়ে দিয়েছি আযান সুমধুর
থেমে যায় নি কোনো কিছুতেই অগ্রাভিযান আমাদের
হে আসমান!
মিথ্যা কভু দাবাতে পারেনি আমাদের
শতবার তুমি পরীক্ষা নিয়েছো আমাদের সকলের
হে আন্দালুসের গুলিস্তান!
তোমার কি মনে পড়ে সে প্রহর
যখন তোমার শাখা-প্রশাখায় ছিল আমাদের প্রিয়তম নীড়?
হে দজলার লহরী!
তুমিও তো ঠিকঠাক চিনেছো আমাকে
আজও তোমার স্রোতপ্রবাহে আমাদের বীরগাঁথা বয়ে চলে
পবিত্র পৃথিবী!
মৃত্যুকে বরণ করে রেখেছি তোমার সম্মান
তোমার শিরায় শিরায় আজও আমাদের শোণিত প্রবহমান
হেজাযের নেতা আমাদের কাফেলার নায়ক
তার নাম-ই আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি-বাহক
ইকবালের গান যেন জাগরণী ঘন্টাধ্বনি আমাদের
আবার যেন হয়েছে চলমান কাফেলাযান সকলের।
কবি পরিচিতি:
মূল :আল্লামা ইকবাল
তর্জমা: মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত
লেখক,
গবেষণক,
কবি