পথ-ভােলা কবি !
পথ-ভােলা কবি !
গােলাপ ফুলের পল্লবে বাঁধি’ ঘর।
গন্ধের গুড়া সঞ্চয় করি’ সারাটি জনম ভর ,
বুলবুলিদের কণ্ঠে পুরিয়া ছড়াইছ দেশে দেশে ; রামধনুকের ‘সাত-রঙা পথে চলেছে তা ভেসে ভেসে।
হে রঙিলা কবি !
তোমার সাকীর রঙিন ঠোঁটেতে ঢুকে’
ফুলের বরণ, গজলের গানে ছড়াইছ মিঠে সুখে। তারি এতটুকু বাঁশীতে পুরিয়া আমরা দিওয়ানা হয়ে। বিকাই কত না সমরকন্দ বোখারার সুখালয়ে। জায়নামাজের পাটি ভিজে যায় তােমার ‘সুরা’র স্রোতে;
হীরামন-তােতা ডানা মেলে উড়ে বন্ধ সে খাঁচা হতে।
তোমার কথা তাে মেহেদির পাতা, ঘষিতে সে রঙ ধরি’
ডুগু ডুগু করে ; নতুন বধূরা অধর পেয়ালা করি। বিলাইয়া দেয় দয়িতের ঠোঁটে সুখ-বাসরের রাতে। চাঁদ যে ছড়ায় জ্যোছনা-মদিরা জেগে তাহাদের সাথে।
ওগো দরবেশ !
চলিয়াছ তুমি খোরমা-খেজুর ছায়ে
মেশক হ’তে সে কস্তুরী-বাস ছড়ায়ে মরুর বায়ে ;
ভূত-ভবিষ্য-বর্তমানেরে মুঠার মাঝারে ধরি,
তুমি কারিকর, গড়েছ তাদের মনের মতন করি।
মহাকাল তব আজ্ঞাবাহক, নখ -ইঙ্গিতে তব
কত দেশে দেশে ভাঙিছে গড়িছে ইতিহাস অভিনব।
ইসমে-আজম পড়িয়া চলেছ অন্তরীক্ষ থেকে ;
জীবন-কুসুম ফুটিয়া উঠিছে বেহেশত গায়ে মেখে।
আমি কি তােমারে ডাক দিব আজ আমাদের আঙিনায়,
এইখানে এই ভাঙা কুঁড়ে- ঘরে কলাপাতা- ঘেরা ছায়!
ক্ষুধার আহার মেলেনি যাদের ,পরের ক্ষুধার লাগি’
রচিতেছে সুধা লাঙল খুঁড়িয়া দিবস রজনী জাগি,
কদাকার এই ধরণীরে যারা করেছে ফসল-বাগ,
তাহাদের পেটে জ্বলিছে চুল্লি দারুণ ক্ষুধার আগ।
তুমি কি ক্ষণেক দাঁড়াবে হেতায় তাহাদের ভাষা হয়ে ,
হানিবে আঘাত অসাম্য-ভরা আজিকার লােকালয়ে ?
গরীবের তরে তখত্ -তাউস্ আজো ত হয়নি গড়া;
কি ক’রে পড়িবে তােমার নান্দী গােরস্তানের মড়া ?
মিথ্যা তােমারে আহ্বানি’ কবি করিলাম অপমান ;
আমরা আজিও প্রস্তুত নহি লইতে তােমার দান।
মানুষেরে মােরা দিতে পারি নাই মানুষের অধিকার;
মানুষেরে লয়ে শিখিয়াছি শুধু বিকি-কিনি কারবার।
অহমিকা ভরে একের কথারে পুরিতে আরের মুখে ব্যর্থ প্রয়াস করিয়া ফিরিছি আমরা নকল সুখে। হানাে হাননা কবি, আমাদের পরে ‘নিদারুণ অভিশাপ ‘;
জ্বলে পুড়ে যাক্ দাহনে তাহার অতীতের কৃত পাপ ৷৷
তথ্য সূত্র: মাহে নাও পত্রিকা