ফ্রান্সে অনেক মহাপুরুষ পয়দা হইছে। যেমন নেপোলিয়ন, রুশো, ভলতেয়ার, দেকার্ত, পাসকাল, শার্ল দ্য গল প্রমুখ। আর মডার্ন আর্টিস্ট যে কত পয়দা হইছে তা হাতে গুনে শেষ করা যাবে না। তাইলে অহন সওয়াল হইল: রাসুল স. নিয়া এদের এত চুলকানি কেন? তারে নিয়া খোঁচাখুঁচি করতে এরা এত পাগলা হইয়া গেল কেন?
এর কারণ হইল ফ্রান্স যে ইউরোপীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির সবচাইতে উৎকর্ষ দেখাইছে সেইখানে রাসুল স. ও তার প্রচারিত ইসলাম একটা এন্টি-থিসিস। ফরাসিরা বুইঝা গেছে এই রাসুল স. ও তার ইসলাম এমন একটা প্যারাডাইম যার মধ্যে ইউরোপীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তনের বিপ্লবী সম্ভাবনা বিদ্যমান।
রাসুল স. এমন এক মানবসন্তান যিনি রক্তমাংসের সাধারণ মানুষের মত বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে মানব ইন্দ্রিয়কে শৃঙ্খলিত করে জয় করেছেন, কোনো সাধু সন্ন্যাসিগীরি করেন নাই। যিনি সবধরনের অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, প্রয়োজনে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন, রাজনীতি করেছেন, রাষ্ট্রনেতা হয়েছেন। আবার এসব পার্থিব ভূমিকা আঞ্জাম দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি নিয়মিত ও নিবিড় নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ইবাদাতের মধ্যে নিজেকে ও তার অনুসারীদেরকে নিমজ্জিত রেখেছেন ।
তিনি মানুষের অতি কাছের মানুষ ছিলেন। আবার তাদের দৈনন্দিন জীবনের এত কাছে থেকেই একটি আখলাকী ও আখিরাতি পারলৌকিক জীবনচর্যার উদাহরণ তৈরি করেছেন। মানবিক থেকেই পারমার্থিক সম্ভাবনা ও সাফল্যের নিদর্শন হয়েছেন। এটাই তার প্রতি বিশ্বব্যাপী মানুষের আকর্ষণের মূল কারণ।
ইউরোপ কিংবা ফ্রান্স এই ধরনের মানুষ তৈরি করতে পারে নাই। তারা হয় ইন্দ্রিয়ভোগসর্বস্ব বিলাসিতার সংস্কৃতিতে লিপ্ত মানুষ তৈরি করেছে অথবা এমন কিছু অতিমানবিক ও মিথিকাল সাধু সন্ন্যাসী বা সেইন্ট তৈরি করেছে যা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার অতীত। এই কারণে ফ্রান্স ও ইউরোপ রাসুল স. ও তার প্রচারিত ইসলামকে সহ্য করতে পারে না। কারণে অকারণে রাসুল স.-কে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ও বিদ্বেষ প্রকাশ করে।
এটি ফরাসি কিংবা বৃহত্তর অর্থে আধুনিক ইউরোপীয় মানসের গভীরে ইসলাম নিয়ে যে হীনমন্যতা ও ভবিষ্যত সমূহ পরাজয়ের ভীতি রয়েছে তারই ক্ষণে ক্ষণে বিকৃত প্রকাশের একটি সাম্প্রতিক নমুনা।
লেখক পরিচিতি:
মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত,গবেষক, লেখক,কবি