Bengali nationalism and Rabindranath

আমাদের বাংলা ভাষার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দি ভাষাকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন । আমি যখন এই কথা চিন্তা করি তখন কবি দার্শনিক রবীন্দ্রনাথের চেয়ে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পন্ন রবীন্দ্রনাথ আমার মানসপটে ভেসে ওঠে । মাতৃভাষার প্রতি অত্যধিক দরদ থাকা রবীন্দ্রনাথ যখন মাতৃভাষাকে মাতৃদুগ্ধের সাথে তুলনা করেছিলেন তখন তাকে ভাষা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের মহান পুরুষ বলে মনে হয়েছিল! আবার যখন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও ক্ষিতিমোহন সেনকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি বানানোর জন্য শান্তি নিকেতন প্রতিষ্ঠা করে বিপ্লব করেছিলেন তখন তাকে কৌশলী ও স্বার্দবাদী রাজনীতিবিদ বলে মনে হয়েছে ।

সুভাষ বসু হিন্দিকে রাষ্ট্র ভাষা করার কথা বলেন । তখন পূর্বাসার সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য রবীন্দ্রনাথকে অবহিত করে বলেন

“কংগ্রেস সভাপতি হিন্দিঐকেই রাষ্ট্র ভাষা বলে ঘোষণা করেছেন । এতে বাঙালির কি দুঃখিত হবার কারণ নেই ? বহুসমৃদ্ধ বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হবার গৌরব থেকে বঞ্চিত হল কোন অপরাধে ?এ বিষয়ে আপনার অভিমত প্রার্থনা করি ।[১]”

এই চিঠির জবাবে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন

“বাংলা ভাষাকে কংগ্রেস যদি বিশ্বভারতের রাষ্ট্র ভাষা বলে গণ্য না করে তা হলে এ নিয়ে আমি আপত্তি করতে পারব না । কংগ্রেসের কর্তব্য কংগ্রেসের হাতে । আমি সভ্য শ্রেণীতেও নেই । তোমরা যদি চেষ্টা করতে চাও কোরো ,,তোমাদের বয়স অল্প, যথেষ্ট সময় আছে” ।[২]

যদিও রবীন্দ্রনাথ অকপটে স্বীকার করেছেন “আমি হিন্দি জানি না ।কিন্তু আমাদের আশ্রমের একটি বন্ধুর কাছ থেকে প্রথমে আমি হিন্দী সাহিত্যের আশ্চর্য রত্নসমূহের কিছু কিছু পরিচয় লাভ করেছি।

,,আমি বুঝলাম যে হিন্দী ভাষার ক্ষেত্রে ভাবের এমন সোনার ফসল ফলেছে সে ভাষা যদি কিছু দিন আকৃষ্ট হয়ে পড়ে থাকে ,তবু তার স্বাভাবিক উর্বরতা মরতে পারে না; সেখানে আবার চাষের সুদিন আসবে এবং পৌষ মাসে নবান্ন- উৎসব ঘটবে “।[৩]

মহাত্মা গান্ধী ,জওয়াহেরলাল নেহরু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মতো বড় বড় রাজনীতিবিদেরা যখন রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষাকে বেছে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ তখন হিন্দিভাষী মাড়োয়ারির অর্থ সহায়তায় হিন্দি ভবন তৈরি করেন এবং শান্তি নিকেতনে হিন্দি চর্চা শুরু করেন । তখন আমার চোখে মাতৃভাষা বাংলার চেতনায় উজ্জীবিত রবীন্দ্রনাথকে সাহিত্য অনুরাগীর চেয়ে ধর্মানুরাগী ও সুচিন্তিত রাজনীতিবিদ বলে বেশি মনে হয়েছে ।

আমাদের ড. শহীদুল্লাহ ১৯২৫ সালে বিশ্বভারতীর এক কনফারেন্সে হিন্দি ও উর্দু ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষার গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন । কিন্তু শান্তি নিকেতনের হিন্দিভাষীদের কাছে তার কথা গুরুত্ব পায়নি । রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষায় লেখালেখি করেছেন । এবং বাংলা ভাষার প্রতি তার স্নেহ মমতা কম ছিল না । তাহলে হিন্দি ভাষার প্রতি তার যে টান অনুভব হয়েছে সে গুলো তাহলে কি ?
তবে কি ধর্ম বিবেচনায় সংস্কৃতি চর্চা এবং রাজনীতি বিবেচনায় হিন্দি ভাষাকে মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে তিনি কি হিন্দি ভাষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন?

বাংলা ভাষা ভাষিদের বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষা আয়ত্ত ও জ্ঞান করা প্রয়োজন এটাই কি তিনি উপলব্ধি করেছিলেন! রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়লে দেখবেন তিনি উপনিষদের অনুপ্রেরণায় তার চিন্তা ধারা প্রকাশ করেছেন । আমি এটাকে নেতিবাচক হিসেবে পরখ করছি না । আল্লামা ইকবাল কুরআনের অনুপ্রেরণায় তার চিন্তা ধারা প্রকাশ করেছেন । মুসলমানদের ইসলামের অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত করার জন্য চেষ্টা করেছেন । তাই রবীন্দ্রনাথের উপনিষদের প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়া এবং সংস্কৃতি ও হিন্দি ভাষার মাধ্যমে একটি বাঙালি হিন্দি ও সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের চিন্তা দোষের কিছু না ।।
রবীন্দ্রনাথ কোন ভাবেই ছোট খাটো রাজনীতিবিদ ছিলেন না । ভাষার মাধ্যমে যেমন গোটা ভারতকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে চেয়েছেন তেমনি ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত করে জাতীয়তাবাদ প্রচার করেছেন ।

তথ্য নির্দেশ:

[১] মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান- বাংলার সূর্য আজ আর অস্ত যায় না ।
[২] মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান- বাংলার সূর্য আজ আর অস্ত যায় না ।
[৩] প্রাগুক্ত

লেখক পরিচিতি: আবদুল কাদের জিলানী

সম্পাদক

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *