বিবর্ণ চোখ

তোমার চোখদুটো এতো বিবর্ণ কেন?
রাতজেগে করা হয় বুঝি আর্তনাদ ?
আমার চোখ দেখো,
চোখে পর্দা,
রংছটা সেই চোখ কিছুই বলেনা !
পৌষ মাসের কুয়াশায় লাল চোখ ঢাকা পড়েছে।
অথচ তোমার চোখ!

কষ্টের ফোয়ারায় সে যেনো কতোকাল ভেসেছে
ঘুমন্ত হয়েও জেগে আছে আহত সে চোখ ।
রাতের পর রাত আঁধারে জ্বলেছে সে চোখ,
সেখানে কালো রেখা স্পষ্ট ।

তোমার চোখদুটো এতো বেদনাহত কেন?
ফোড়ার মতো ফুলে আছে সে চোখ,
আঘাত করলেই ঝরঝর করে ঝরে পড়বে জল।
জমে রাখা সব কষ্ট বিষাদ আর যন্ত্রণা !
কিসের এতো কষ্ট শুনি?

তোমার চোখও কি আমার মতো অনেককাল ধরে কাঁদে?
কালবৈশাখী ঝড়ের মতো সে-ও কি খুব বেশি ক্ষিপ্ত?
নাকি জ্যৈষ্ঠের খরা মেখে সে চোখ পিপাসায় কাতর হয়ে জ্বলছে?
আষাঢ়ের জল তবে মেখে নাও সে চোখে,
তাকে অনেক বেশিই ঝরতে দাও..
শরতের শুভ্রতায় সে চোখ যদি ভেসে থাকে,
তাকে অনেক বেশিই মলিন লাগে !

আকাশের রং কয়জন ধরতে পারে বলো?
দেখো,তোমার চোখদুটি কেমন ক্ষ্যাপা হয়ে আছে!
শীতার্তদের মতো কেমন থরথর করে কাঁপছে সে চোখের পাতা ।
মুমূর্ষু রোগীর মতোই ভীত,
শ্রান্ত আর করুণ সে চোখ ।
তাকে চৈত্রের তিক্ততায় জমিয়ে রেখোনা।
শ্যেনদৃষ্টির আঁড়ালে তাকে যে অনেক বেশিই কাঁদতে হবে!

তৃষ্ণাতুর মরূদ্যান সে চোখকে কাঁদতে দাও,
এই চোখে অভিশাপ লাগতে দিয়োনা,
তোমার চোখেও কি তবে কারো অভিশপ্ত ছায়া পড়েছে!
যাঁর স্মৃতিতে যন্ত্রণারা চোখ গলিয়ে ঝরছে!
তোমারও কি আমার মতোই কান্না করার অসুখ!
রক্তজবার হাসি মেখে তোমারও কি গোপনে ব্যথা লাগে?
তোমারও কি আমার মতোই অক্সিজেনের অভাব?
খুব যতনে আঁড়চোখে নিঃশ্বাসের ধূলা উড়াও ?
তুমিও কি আমার মতোই অনেক বেশি হাসো !

লোকচক্ষুর অগোচরে নিঃসঙ্গতায় ভাসো ?
তোমারও কি ভিড়ের মাঝে বড্ড একা লাগে?
হাসির মেলায় তুমিও কি গোপন জায়গা খুঁজো!
খুব যতনে কষ্টকে নিয়ে দিনাতিপাত করো ?
তুমিও কি রাত জেগে বিষণ্ণ তারা গুনো?
তুমিও কি আমার মতোই নোনাজলে ভাসো !
সে চোখ কি অনেক বেশিই পুড়ে গেছে তবে?
তোমার চোখও কি গভীর ছন্নছাড়া হয়ে কাউকে খুঁজে ফেরে?
তুমিও কি আমার মতো বড্ড বেশি কাতর!
আচ্ছা;
তোমার চোখদুটো এতো বিবর্ণ কেন !

কবি পরিচিতি:
মাহবুবা স্মৃতি
কবি,
ছোট গল্পকার
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *