Allama Iqbal's contribution to the awakening of personality and thought
আত্মোপলব্ধি , আত্মপ্রত্যয় ও আত্মবিকাশের ন্যায় কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষ উচ্চ আদর্শের পথে এগিয়ে যায় । কঠোর সংগ্রাম ও অর্জিত অন্তর্নিহিত শক্তির ফলে সে হয়ে ওঠে মর্যাদাবান । হেরা গুহার ধ্যান ও মিরাজের প্রাপ্তি নিয়ে একজন মরদ-ই মুমিন ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে আল্লাহর পরিকল্পনার একনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠে । এই রূপ মর্যাদা অর্জন করতে সে কখনোই দুর্নীতি , মিথ্যা , হত্যা ও অনৈতিকতার সাথে আপোস করবে না । শয়তানি অপশক্তির কাছে অবনমিত না হয়ে স্বীয় আত্মাকে উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টায় রত থাকবে । আল্লামা ইকবাল তার বালে জিবরিল কাব্যে বলেছেন ,”তোমার আত্মাকে এমন উন্নত করে তোল,যেন তকদীর লেখার আগে আল্লাহ তোমার কাছে জানতে চান; বল,কি তোমার আকাঙ্ক্ষা “।
একজন মুমিন এই রূপ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে গেলে তাকে আল্লাহর প্রতি আনুগত, কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন এবং পরম করুণাময় আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীতে পূর্ণ মনোযোগ স্থাপন করতে হবে । আল্লামা ইকবাল ব্যক্তি সত্ত্বাকে সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বলতর বলে অভিহিত করেছেন কিন্তু অবশ্যই সেটা ব্যক্তির সৎ ও উন্নত কর্মফলের দ্বারা নির্ণিত হবে । তিনি বলেন, ” You have come here shining more brightly than the sun which lightens the whole world. Iive in such a way as to throw light over every atom of dust .” অর্থাৎ “তুমি সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বলতর আলো নিয়ে পৃথিবীতে এসেছ, যে সূর্য সারা পৃথিবীকে আলো দেয় । এমন করে জীবন যাপন করো যাতে প্রতিটি ধূলিকনা আলোকিত হয় । ” আবার জালালুদ্দিন রুমীর মতে মরদ-ই -মুমিনই সৃষ্টির মূখ্য উদ্দেশ্য । যদিও গাছ থেকে ফল হয় কিন্তু ফল থেকেই গাছের সৃষ্টি । রুমী বলেন ,” মর্দে মুমিন দরবেশী পোষাকের নীচে বাদশা ।মর্দে মুমিন নিঃস্বতার মধ্যে সম্পদ ।মর্দে মুমিন বায়ু ও মাটির সঙ্গে সম্পর্কহীন ।মর্দে মুমিন পানি ও আগুনের সঙ্গে সম্পর্কহীন ।মর্দে মুমিন সিন্ধুর মতো সীমাহীন ।মর্দে মুমিন বিনা মেঘে করে মুক্তা বর্ষণ ।”
পবিত্র কুরআন মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ঘোষণা দিয়েছেন । মানুষের অতীত, বর্তমান ও তকদীর সম্বন্ধে কুরআনের অভিমত সুস্পষ্ট । পবিত্র কুরআনের সূরা আল আহযাবের ৭২ আয়াতে ব্যক্তিত্বের ঘোষণা সুনির্দিষ্ট । ” নিশ্চয়ই আমরা আকাশ পৃথিবী এবং পর্বতমালার কাছে এ গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত করতে প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু তারা সে ভার বহন করতে অস্বীকার জ্ঞাপন করল এবং শঙ্কা প্রকাশ করল । মানুষ সে দায়িত্ব গ্রহণ করল , কিন্তু সে অন্যায় ও অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে ।” অর্থাৎ ব্যক্তিত্বের দানকে কুরআন “গচ্ছিত বস্তু “বলে বর্ণনা করেছেন । মানব সত্তা যদিও শ্রেষ্ঠতম উপাদানে সৃষ্টি কিন্তু পরবর্তীতে সে নিন্ম হোতে নিন্ম স্তরে নেমে এসেছে । কেবল ব্যক্তিত্ব দ্বারাই সে উচ্চতর স্তর অর্থাৎ ইনসানে কামিলে উন্নীত হতে পারে । কিন্তু মানুষের অজ্ঞতার দরুন সে তার মর্যাদার আসন থেকে কেবলই বেরিয়ে যাচ্ছে ।
আল্লামা ইকবালের মতে কর্মই হচ্ছে জীবনের কেন্দ্রবিন্দু । তার জীবনের দিকে আলোকপাত করলে দেখতে পাই ,তিনি প্রাতঃকালে উঠে নামাজ পড়তেন । নামাজ শেষে কুরআন পাঠ করতেন । সকালে তেমন কিছু খেতেন না । দুপুরে একসাথে খাবার খেতেন । রাতে কখনো কখনো শুধু নুন চা । এবং গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ সম্পাদন করতেন । তিনি যখন “আসরারে খুদীতে” বললেন “রুমীর প্রতিভায় অনুপ্রাণিত আমি” তখন রুমীর বাণীর কথা মনে পড়ে যায়, ” যদি দীর্ঘস্থায়ী গৌরব চাও নিদ্রাকে প্রশ্রয় দিও না ।যদি পুড়তে চাও ভালোবাসায়তবে কখনো নিদ্রামগ্ন হয়ো না ।কত রজনীই তো বৃথা গেলো ।আজ রাতে প্রভুর প্রেমে প্রভাত দর্শন করো ।নিদ্রার কাছে আর ফিরো না । “
মহান লক্ষ্যকে উপলব্ধি করে সত্য ন্যায় ও ইনসাফের সাথে কঠোর কর্মসাধনায় পরম সত্যের পথ নির্মিত হয় । শুধু কল্পনা আর নির্বিকার দর্শকের কোন মূল্য নেই । আল্লামা ইকবাল তার “পায়ামে মাশরিকে” বলেছেন, ” ভুলে যাও অশান্ত- চঞ্চল পতঙ্গের কাহিনী ।কাহিনী তার ব্যথিত করে আমার কর্ণকে ।কেবল সেই পতঙ্গই হচ্ছে সত্যিকার পতঙ্গ ,সংগ্রামে যে সক্রিয়, আর যে গ্রাস করতে পারে অগ্নিশিখাকে “। আল্লামা ইকবাল ঈগল ও বাজ পাখিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা অধ্যাবসায় ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে মানব ব্যক্তিত্বের সামনে তুলে ধরেছেন । এক ঈগল আরেক ঈগলকে নির্দেশ দিচ্ছে সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী জীবন যাপন করতে । তিনি তার “পায়ামে মাশরিকে” বলেছেন, ” জমিন থেকে আমাদের খাদ্য সংগ্রহ করা পাপ ,কারণ আকাশের বিপুল প্রসার খোদার দান আমাদের জাতির কাছে ।”
সামাজিক রাজনৈতিক নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার সমাধান হতে পারে কেবল সকল প্রকার কুসংস্কার , ধর্মান্ধতা ও মূর্খ মনোভাবের শৃঙ্খল মুক্ত করার মাধ্যমে । আল্লামা ইকবাল বলেছেন, “হেনরী বার্গসঁ সংগতভাবেই বলেছেন যে ,সহজাত বৃত্তি উচ্চতর ধরণের জ্ঞানমাত্র ,যার মধ্য দিয়ে আমরা প্রকৃতি ও বাস্তবের উপলব্ধি করতে পারি অখণ্ড সমগ্র হিসেবে, যেমন করে আমরা চিত্র বা সংগীত সুরের অর্থ উপলব্ধি করি ।” উচ্চতর মর্যাদায় উন্নীত হতে গেলে শুষ্ক বুদ্ধির রাজ্য থেকে প্রেম ও সহজাত বৃত্তির উষ্ণতায় প্রত্যাবর্তন করতে হবে । আল্লামা ইকবাল বলেছেন,
” চেয়ো না পথ নির্দেশ বুদ্ধি থেকে, রয়েছে যার সহস্র চাতুরি ।
এসো প্রেমের কাছে- শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে যে উদ্দেশ্যের ঐক্য দ্বারা ।”
( পায়ামে মাশরিক )
“জ্ঞান যদি হয় বক্র ও ঈর্ষাপ্রোণোদিত,
কাজ করে যায় সে বিরাট অন্ধের মতো ,
আমাদের আঁখির সম্মুখে ।”
( জাভিদ নামা )”
আধুনিক জ্ঞান হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় অন্ধ,
মূর্তি নির্মাণ, মূর্তি বিক্রয় , মূর্তি পূজা !
শৃঙ্খলিত প্রকৃতির কারাগারে ,
এখনো সে অতিক্রম করেনি ইন্দ্রিয়- গ্রাহ্যের সীমানা ।”
(আসরারে খুদী)
“অতিক্রম করে যাও বুদ্ধির সীমারেখা সে কেবল তোমার পথের প্রদীপ,
সে নয় তোমার মনযিল “।
(বালে জিবরিল)
ইকবালের লক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞানজাত শক্তি এবং প্রেম বা সহজাত বৃত্তি থেকে উদ্ভূত দৃষ্টিভঙ্গীর সমন্বয় সাধন । তার চিন্তা ধারায় শক্তি বর্জিত দৃষ্টিভঙ্গি নৈতিক উচ্চতা আনয়ন করে কিন্তু স্থায়ী সংস্কৃতির জন্ম দেয় না । “গ্যেটের ” মতো তিনিও শয়তানকে দেখেন বুদ্ধি বৃত্তির সমাবেশরূপে । কিন্তু প্রেম দ্বারা তা চালিত না হওয়ায় হয়েছে ভয়ঙ্কর ধ্বংসের পন্থা । তিনি উপলব্ধি করেছেন , শয়তানের শক্তির সাথে আদমের শক্তির সংযোগ না হোলে মানবাত্মার পূর্ণতা পায় না । জালালুদ্দিন রুমী প্রেম ও প্রেমিকের মর্যাদা উচ্চ স্থানে উন্নীত করেছেন । তিনি বলেছেন, ” মূর্খদের সঙ্গে বেশিক্ষণ থেকো না ,তাদের কথা বার্তায় পাথর মারো ।কেবল মাত্র প্রেমিকের সঙ্গে চলো ।কাদাজলে পড়লে ,আত্মার আয়নাও জং ধরে “।
বলা হয়ে থাকে যে মিরাজে হজরত মুহাম্মদ (দঃ) এর সহচর ছিলেন যেমন জিব্রাইল তেমনি ইকবালের আধ্যাত্মিক সঙ্গী ছিলেন মৌলানা জালালুদ্দিন রুমী । তাইতো “জাভিদ নামায়” ইকবাল প্রেম বর্জিত জ্ঞান শয়তানের ন্যায় বিদ্রোহী এবং প্রেমে অনুরঞ্জিত জ্ঞান স্বর্গীয় গুণের অধিকারী বলেছেন ।
“আত্মা যখন সংরক্ষিত হয় প্রেম দ্বারা, সে হয়ে ওঠে বিশ্বের বিধান কর্তা ।”
(আসরারে খুদী)
“আত্মা সংরক্ষিত হলে বুদ্ধির দ্বারা সে হয় ঈর্ষার বস্তু জিবরিলের কাছে,
সংরক্ষিত হলে প্রেম দ্বারা,
হয়ে ওঠে সে ইসরাফিলের শিংগাধ্বনি ।”
(বালে জিবরিল)
“অতিক্রম করো বুদ্ধিকে আর সংগ্রাম করো প্রেমের সমুদ্র তরঙ্গের সাথে,
কারণ বুদ্ধির ক্ষুদ্র স্রোতস্বীনি বুকে নেই কোন মনি মুক্তা “।
(পায়ামে মাশরিক)
“যতক্ষণ জ্ঞান লাভ করে প্রেমের আশীর্বাদ,
ততক্ষণ সে থাকে ধারণার রঙে বিচিত্রিত ।”(জাভিদ নামা)”
প্রেম হচ্ছে উপদেষ্টা বুদ্ধির,
অন্তরের ও দৃষ্টির।
যদি প্রেমই না থাকে ,
তাহলে ধর্ম আর উপদেশ ব্যর্থ কল্পনার বোতখানা ছাড়া কিছু না । “
(বালে জিবরিল) “
একটি অতি সূক্ষ্ম আলোক বিন্দুর নাম আত্মা,
সেই হোল জীবনালোক ,
আমাদের ধূলোরাশির ভেতরে প্রেম দ্বারা হয় সে অধিকতর স্থায়ী,
অধিকতর জীবন্ত জলন্ত প্রোজ্জ্বল ।
তোমার ধূলিমুস্টিকে পরিণত করো সুবর্ণে ।
চুম্বন করো এক পরিপূর্ণ মানবের প্রবেশ পথ ।
আশেক হও অনুক্ষণ তোমার মাশুকের অনুরাগে ।
যেন তুমি সঞ্চালন করতে পারো পক্ষ পৌঁছতে আল্লাহর নৈকট্য ।”
(আসরারে খুদী)
মোমেন আর প্রেম পরস্পর নির্ভরশীল,
যা কিছু অসম্ভব আমাদের কাছে ,
প্রেমের কাছে তা সম্ভব,
বুদ্ধির মূলধন হচ্ছে আশংকা আর সন্দেহ,
বিশ্বাস আর দৃঢ়তা অপরিহার্য প্রেমের কাছে;
বুদ্ধি গড়ে তোল ভাঙ্গার জন্য,
প্রেম ধ্বংস করে গড়ার উন্মাদনায় ।
বুদ্ধি বলে বেঁচে থাকো সুখে সন্তোষে ,
প্রেম বলে শিক্ষা করো বশ্যতা,
আর অর্জন করো স্বাধীনতা ।”
(রমুজে বেখুদী)
আল্লামা ইকবাল “আসরারে খুদীতে” পূর্ণ মানুষের পরিচয় দিয়েছেন । তিনি হজরত মুহাম্মদ ( দঃ) কে পূর্ণ মনুষ্যের আদর্শ রূপে গ্রহণ করেছেন । “রমুজে বেখুদীতে” বলেছেন, “সামাজিক অস্তিত্ব ব্যক্তির পরস্পর মিলনের উপর নির্ভর করে এবং এর পূর্ণতা নির্ভর করে নবুয়তের উপর ” । হযরত মুহাম্মদ (দঃ) সাম্য স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি হিসেবে একত্ববাদের প্রচার করেছেন । পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম মিল্লাতের কেন্দ্র পবিত্র কা’বা । এবং মুসলিম মিল্লাতের লক্ষ্য একাত্ববাদের সংরক্ষণ ও প্রচার ।
ইকবাল রূপকের সাহায্যে মুসলিম মিল্লাতকে এভাবে দেখিয়েছেন । পাখিরা গাছের শিশির খায় , শিশিরের মধ্যে একখণ্ড হীরক পড়ে ছিল এবং শিশিরের মতোই সেটি সূর্য্যকিরণে জ্বল জ্বল করছিল । একটি পাখি শিশির ভ্রমে সেই হীরক খণ্ড খেতে গিয়ে তার ঠোঁট হীরকের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে গেল । তখন সে হীরক ছেড়ে শিশির খেতে গেল । ইকবাল মুসলিমদের বলেছেন তোমরা হিরক হয়ে ওঠো । কেউ ইচ্ছা করলেই তোমাদের খেতে পারবে না ।তিনি “আসরারে খুদীর” নবম অধ্যায়ে বলেছেন, “যখন তুমি সৃষ্টি হয়েছিলে মৃত্তিকা থেকে, তোমার সৃষ্টির উপাদানে মিশ্রিত ছিল প্রেম আর ভয় !ইহকালের ভয়, পরকালের ভয় , মৃত্যুর ভয় ,স্বর্গ মর্তের শত ব্যথা বেদনার ভয়;আর প্রেম-ঐশ্বর্যের আর শক্তির প্রেম, দেশ প্রেম, নিজের ; স্বজনদের আর পত্নীর প্রেম ।লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহ-র রশ্মি যতোক্ষণ আছে তোমার হস্তে ,করতে পারবে তুমি ব্যর্থ সকল ভয়ের আক্রমণকে ।আল্লাহ যার দেহের ভেতরে আত্মার মতো,অহমিকার কাছে শির তার নত হয় না ।ভীতি পায় না প্রবেশ- পথ তার বুকে ,আত্মা তার আর কাউকে করে না ভয়আল্লাহ ছাড়া ।”
একজন সৎ মানুষের জীবন চালিত হবে সক্রিয় প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের দ্বারা ।কর্মবিমুখ চিশ্চল অথবা ঘৃণ্য আরাম আয়েশের মধ্য দিয়ে নয় । মানুষের সৃষ্টি প্রবনতাই সব চাইতে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ । ইকবালের মতে ব্যক্তিত্বের ক্রমবিকাশ হচ্ছে একটা সৃষ্টি ধর্মী কর্মধারা । যেখানে মানুষ একটা সক্রিয় ভূমিকায় অভিনয় করে এবং তার কর্মের দ্বারা পারিপার্শ্বিকতাকে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে জয় করতে থাকে । ব্যক্তি বা সমাজের আত্মবিকাশ কেবল তখনই সম্ভব যখন আত্মা স্বীয় সাংস্কৃতিক কৃতিত্ব ও উত্তরাধিকার থেকে অনুপ্রেরণা ও শক্তি সঞ্চয় করে । তবে আত্মা যখনই ভিক্ষাবৃত্তি , পরনির্ভরশীলতা ও দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে যায় তখনই সে দুর্বল হয়ে পড়ে । ব্যক্তি ও সমাজ আত্মনির্ভরশীল না হলে তার আত্মশক্তি ধ্বংস হয়ে যায় । আল্লামা ইকবাল বলেছেন,
” আর কত কাল ,ওরে হৃদয়পতঙ্গের মতো এ অগ্নি জ্বালা ?
কতকাল এড়িয়ে চলা সত্যিকার মনুষ্যত্বের পথ ?দগ্ধ করো একবার নিজেকে তোমার আপন অগ্নি শিখায় ।
আর কতকাল ঘুরে মরবে ,
অপরের অগ্নির চারিপাশে ?
(পায়ামে মাশরিক)
“ভিক্ষা অবনমিত করে আত্মাকে,
আর বঞ্চিত করে আত্মার সিনাইকেআলোক থেকে ।
দারিদ্র গ্রহণ করে উৎকট আকার ভিক্ষাবৃত্তিতে;
ভিক্ষা ভিক্ষুককে করে তোলে দরিদ্রতর ।
(আসরারে খুদী: চতুর্থ অধ্যায়)
“ঋণী হয়ো না পশ্চিমের কাঁচ- নির্মাতাদের কাছে,গড়ে তোল তোমার সোরাহী ও জামহিন্দের কর্দম থেকে ।”
(বালে জিবরিল)
“তোমরা শিক্ষা করছো আর আহরণ করেছোঅপরের জ্ঞান ,
আর রঞ্জিত করেছো তোমাদের মুখমণ্ডল তাদের বর্ণরাগ দিয়ে,
তোমার ওষ্ঠ দিয়ে বেরোয় ধার করা কথা,
ধার করা আকাঙ্ক্ষা বাসা বেঁধেছে তোমার হৃদয়ে !
তা হোলে দাহন করো তোমার আত্মাকেনিজস্ব অগ্নিতে !
ব্যক্তি হয়ে ওঠে অতুলনীয় আত্ম উপলব্ধিতে ,
জাতি তখনই হয়ে ওঠে সত্যিকার জাতিযখন সে করে না আপোস “।
(রুমুজে বেখুদী)
ইকবাল পাশ্চাত্যের জ্ঞানকে অগ্রাহ্য করেননি । তিনি তাদের গবেষণা, বিজ্ঞান ও যুগান্তকারী উদ্ভাবনকে সাগ্রহে অভিনন্দিত করেছেন । কিন্তু মুসলমান কেবল তাদের বিনোদন ও ফূর্তির দিকটিই গ্রহণ করেছে । এখানেই তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন । দেখা যায় এতে মুসলমানের আত্মসম্মান বোধ দুর্বল হয়ে পড়ে । এই লজ্জাকর উন্মাদনা আর নির্লজ্জতা মানব মর্যাদার জন্য হানিকর যার ফলে ব্যক্তি হয়ে ওঠে ভেড়ার ন্যায় দুর্বল ও গাধার ন্যায় নির্বোধ । আল্লামা ইকবাল বলেছেন,
” আর কতকাল তুমি আকাঙ্ক্ষা করবে দাসত্ব,
আর শিশুর মতো আরোহন করতে নলের উপর ?
যে প্রকৃতি নিবন্ধ রাখে তার দৃষ্টি আকাশের দিকে,
হয়ে পড়ে হীনতরদান গ্রহণের দ্বারা ।
যদিও দরিদ্র হতভাগ্য তুমি ।
আর অভাবের যাতনায় বিচঞ্চল,
তবুও কামনা করো না তোমার দিনের অন্ন অপরের অনুগ্রহ থেকে ।
(আসরারে খুদী: চতুর্থ অধ্যায়)
বিদেশী সংস্কৃতি ,অনুকরণ ও ভিক্ষাবৃত্তির পুঁজিতে পুস্তক মুখস্থকরণ হয়ে উঠেছে শিক্ষার মানদণ্ড । আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি । দাঁড়ানোর পূর্বে আমাদের চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলা হয়েছে । পেটের মধ্যে আত্মা খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টায় গোটা শিক্ষা জীবন কেটে যায় । জাতির সৃষ্টিধর্মী প্রতিভার বিকাশ পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে । কেবল কেরানি আর চাপরাশি সৃষ্টির লক্ষ্যে সমগ্র জাতি উঠে পড়ে লেগেছে । একাত্ববাদের অনুপস্থিতির ফলে স্বাধীনতা, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ব আজ বিপন্ন । ইকবাল বলেছেন,
” আর কতকাল তুমি আশ্রয় নেবে অপরের পক্ষপুটে ?
উড্ডীন হোতে শেখো মুক্ত পক্ষ হয়ে,
বাগিচার বসন্তবাসে ।
( পায়ামে মাশরিক)
“কেটে নাও তোমার পথ তোমার আপন কুঠারে ।
অপরের পায়ে চলা পথের অনুসরণ করা পাপ ,যদি তুমি অর্জন করো কিছু অতুলনীয় ও মৌলিক,
তখন পাপও হয়ে ওঠে পুণ্য ।
(পায়ামে মাশরিক)
“চিন্তা ও কর্মের মৌলিকতা কি ?
বিপ্লবের আহ্বান!
চিন্তা ও কর্মের মৌলিকতা কি ?
জাতীয় জীবনের রেনেসাঁ ।
এই হচ্ছে জীবন রহস্যের উৎস-যা স্ফটিক প্রস্তরকে পরিণত করেস্বচ্ছতম মোতিতে ।
(বালে জিবরিল)
আল্লামা ইকবাল বার্গসেঁর মতোই বিশ্বাস করেন বুদ্ধির বিবর্তন ঘটেছে কর্মের মধ্যে এবং কর্মের সহায়তাই তার লক্ষ্য । আমরা চিন্তা করার জন্য বেঁচে থাকি না বরং বেঁচে থাকার জন্য চিন্তা করি । ইকবাল বলেছেন,
” বিজ্ঞান হোল একটি যন্ত্র আত্ম সংরক্ষণের ,
বিজ্ঞান একটা পন্থা ,
আত্মাকে শক্তিশালী করবার ।
বিজ্ঞান ও কলা জীবনের ভৃত্যযে ভৃত্য জন্ম নিয়েছে ও পালিত হয়েছেতার আপন গৃহে !
(আসরারে খুদী: দ্বিতীয় অধ্যায়)
ধরা- বাঁধা নৈতিক জ্ঞান কোন ভাবেই বলিষ্ঠ ও আদর্শিক শিক্ষা দিতে পারে না । নীতিবানদের নির্বাচন ক্ষমতা যেমন থাকে তেমনি স্বাধীন ইচ্ছাও থাকে । এবং দেখা যায় সমাজ বিচ্ছিন্ন জীবনে নৈতিক শিক্ষার আদান-প্রদান সেভাবে গড়ে ওঠে না । স্বাধীন সত্ত্বা সমূহের স্বেচ্ছাকৃত সহযোগিতা ছাড়াও সম্ভব নয় । আমাদের কর্মের গতি নির্ধারণ ও আত্মার বিবর্তনকে রূপদানের জন্য নবনব উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য সৃষ্টি করা । সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ অবিরাম অনুসন্ধানই এনে দেয় জীবনের নিগৃঢ় অর্থ । ইকবাল বলেছেন,
” জীবন সংরক্ষিত হয় উদ্দেশ্যে দ্বারা,
কাফেলার বাঁশি বাজে অবিরাম গন্তব্য পথের সীমানায় পৌছাবার জন্য চাওয়ার মাঝেই মানুষের জীবন ,
উৎসমূল তার লুকায়িত আকাঙ্ক্ষার ভেতরে,
আকাঙ্ক্ষাকে রাখো জীবন্ত করে তোমার অন্তর তলে,
আকাঙ্ক্ষা একটি ফাঁদ আদর্শকে ধরে রাখবার ,
কর্ম গ্রন্থকে বেঁধে রাখবার যন্ত্র,
সে হলো আকাঙ্ক্ষা- যে জীবনকে করে ঐশ্বর্যশালী ,
জ্ঞান তার গর্ভের সন্তান ।
(আসরারে খুদী)
ফ্রেডারিক নিটশে ব্যক্তিত্বের দার্শনিক তত্ত্ব ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রচার করেন । এখানে সাধারণ মানুষ কিছুই নয় তিনি কেবল অতিমানবের সন্ধান করেছেন । তার অতিমানব কেবল আত্ম প্রতিষ্ঠার অনুসন্ধান করবে । নিটশে খ্রিস্টান ধর্মকে দাস – ধর্ম নামে অভিহিত করেছেন । অতিমানব দাস ধর্ম মানবে না কেবল প্রভু ধর্ম মানবে । এই অতিমানবের ধারণা নিয়ে জার্মানিতে হিটলারিজম ও ইতালিতে ফ্যাসিজম গড়ে ওঠে । পবিত্র কুরআন বলেছে “আনতুম খায়রা উম্মতিন (তোমরা হচ্ছ শ্রেষ্ঠ মানবের দল ) । জাভিদ নামায় ইকবাল বলেছেন, “বেহেশত আর দোজখের মাঝে হাল্লাজের ন্যায় অস্থির চিত্তে জার্মানির প্রখ্যাত দার্শনিক নিটশে প্রলাপ করছে । তিনি হজরত মুহাম্মদ (দঃ) এর সময়ে জন্মে নাই বলে সঠিক পথের দেখা পায়নি ।”
ইকবাল আরো বলেন আশাবাদী ব্রাউনিঙের কাছে বিশ্বের সব কিছু চমৎকার আবার হতাশাবাদী শোপেনহেয়ারের কাছে বিশ্ব চিরন্তন দুঃখের আগার । পবিত্র কুরআনের শিক্ষা মানব আচরণের উন্নতি বিধান ও প্রাকৃতিক শক্তির উপর তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার সম্ভাবনায় বিশ্বাসী ,তা আশাবাদ বা হতাশাবাদ কিছুই না । ফার্সি ভাষার কুরআন বলে খ্যাত মসনবিতে জালালুদ্দিন রুমী ইনসানে কামিলের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন । ইকবাল মার্কসকে ইব্রাহিমের বংশীয় বলে জাভিদ নামায় উল্লেখ করেছেন । ইকবাল দাস ক্যাপিটালের স্রষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ” মুলধন পুস্তকের কর্তা ইব্রাহীমের বংশীয়।অর্থাৎ তিনি ছিলেন জিবরিল রহিত এক পয়গম্বর । যেহেতু তার অসত্যের সহিত সত্য মিশিত ছিল ।তাঁর হৃদয় ছিল ভক্ত আর মস্তিষ্ক ছিল পাষণ্ড । পাশ্চাত্য জাতিগণ তাহাদের স্বর্গকে হারাইয়া ফেলিয়াছে,তাহারা পেটের মধ্যে প্রাণের সন্ধান করে ।দেহ হইতে বর্ণ গন্ধ লয় না পবিত্র প্রাণ ,সমাজতন্ত্র পেট ভিন্ন অন্য ব্যাপার জানে না ।”
যুক্তিবাদের শেষ পরিণতি হচ্ছে নিটশের নাস্তিকতায় এবং হারবার্ট স্পেন্সারের সংশয়বাদে । আর এই উভয় মতবাদই মানুষ সমাজ- সভ্যতা , ইহকাল – পরকালের জন্য ক্ষতিকর । ইকবাল , বার্গসোঁ , জেমস প্রত্যক্ষ ভাবে হোক আর পরোক্ষভাবে হোক প্রেমের , বিশ্বাসের এবং ভক্তির গৌরব ঘোষণা করেছেন । তবে রুমী বা ইকবাল ব্যক্তিত্বের পয়গাম নিয়ে যে আলোকপাত করেছেন তা কুরআনের মধ্যেই রয়েছে । অধ্যাপক নিকলসনের কাছে এক চিঠিতে ইকবাল ব্যক্তিত্বের তিনটি অবস্থার বৈশিষ্ট্যের কথা বলেন ,
“বিধি ব্যবস্থার প্রতি অনুগত, আত্মসংযম এবং ঐশ্বরিক প্রতিনিধিত্ব ।”আবার মানব মন সম্পর্কে সাইয়েদাইনকে এক চিঠিতে ইকবাল লিখেন “আমার বিশ্বাস লিবনিজের পরমাণুতত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য সম্পর্কে আপনি অবগত রয়েছেন । তার মতে মানব মন হচ্ছে বাইরের শক্তিকে আত্মস্থ করতে সক্ষম অবরুদ্ধ মন । আমার মত হচ্ছে এই যে ,মানব মন প্রকৃতির দিক দিয়েই অপরিহার্য রূপে বাইরের শক্তি আত্মস্থ করবার শক্তি সম্পন্ন ।”
হজরত মুহাম্মদ ( দঃ) বলেন ,ইসলামের ধর্মীয় অনুভূতির তাৎপর্য হলো আল্লাহর গুণাবলীতে মানব চরিত্রকে ভূষিত করা । ইকবাল তার “Reconstruction religious thought in islam” গ্রন্থে বলেছেন ,”কুরআন অনুসারে জ্ঞানের তিনটি মূল সূত্র হলো ইতিহাস, প্রকৃতি এবং অনুভূতির অন্তর্নিহিত ঐক্য । একমাত্র সূফীরাই শেষোক্ত সূত্রের অর্থ বোঝার চেষ্টা করেছেন । হাল্লাজের আনাল হক (আমিই সৃষ্টি ধর্মী সত্য) কথাটি-সম্পর্কে ফরাসি প্রাচ্যবিদ মঁসিয়ে ম্যাসিনন বলেন সমুদ্রে বারি-বিন্দু যেমন লীন হয়ে যায় আল্লাহর মধ্যেও মানুষের সত্ত্বা তেমনি লীন হয়ে যায় হাল্লাজ এ কথা বলেননি । তার অমর ভাষায় এ দাবিই করেছেন যে , আল্লাহর বিরাট ব্যক্তিত্বের মধ্যে মানুষের খুদী অবিনশ্বর ভাবে বেঁচে থাকে ।” মানুষ শুধু খলিফা নয় বরং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন সৃষ্টি । কেবল ইনসানে কামিলের মধ্যেই সর্বোচ্চ শক্তি ও জ্ঞানের সমন্বয় ঘটে । ইবনুল আরাবী বলেন “ইনসানে কামিল-ই দুনিয়ায় আল্লাহর এক ক্ষুদ্র নমুনা ।” তাই আল্লাহর গুণে গুণান্বিত উন্নত চরিত্রের অধিকারী এবং প্রেম পূর্ণ শক্তির অধিকারী ব্যক্তিই ইনসানে কামিল ।
ইমাম গাযালী, রুমী, ইকবাল, আরাবী, নিটশে, দান্তে, গ্যোতে ব্যক্তিত্বের রুহানিয়াত সৃষ্টির কথা ভেবেছেন । যদিও তাদের ব্যক্তিত্বের দার্শনিক ব্যাখ্যা ভিন্ন ভিন্ন । কিন্তু সবার ভাবনা ছিল এই অতিমানব বা ইনসানে কামিল যিনি সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবেন । অন্যায়- অবিচার, জুলুম- নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে কন্ঠ হবে সোচ্চার । তারা ভেবেছেন এই ইনসানে কামিলের আদর্শিক জীবন সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে । সৎ চিন্তা ও উন্নত ব্যক্তিত্ব এবং স্বাধীন চেতা মানবই কেবল সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর । যে দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে নয়া পৃথিবী গঠন করবে । শেষ করবো আল্লামা ইকবালের বাণীতে, ” When the mountain loses it’s self It turns into sands And complains that the sea Surges over it.”অর্থাৎ পর্বত যখন নিজের ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলে তখন সে ধূলো হয়ে যায় এবং অনুযোগ করে বলে যে,সাগর তার বুকের উপর দিয়ে যাচ্ছে ।
তথ্য নির্দেশ:
১.আসরারে খুদী-সৈয়দ আবদুল মান্নান ১৯৪৫ অনুবাদ ।
২ বালে জীবরীল- মীজানুর রহমান ১৯৬০ অনুবাদ ।
৩ বাঙ্গ-ই দরা -মনিরুদ্দীন ইউসুফ ১৯৬০ অনুবাদ ।
৪ হেজাজের সওগাত -গোলাম সামাদানী কোরেশী ১৯৬২ অনুবাদ ।
৫ ইকবাল থেকে (জাভিদ নামা)-শঙ্খ ঘোষ ২০১২ অনুবাদ ।
৬ পয়ামই মাশরিক- নজরুল ইসলাম ২০১৩ অনুবাদ ।
৭ জবরই কলীম- মনিরুদ্দীন ইউসুফ ১৯৬০ অনুবাদ ।
৮ জাভিদ নামা- এ জে আরবারি অনুবাদ ।
৯ রমুজ-ই বিখুদী- মির্জা সুলতান আহমদ অনুবাদ ।
১০ ইকবালের পয়গাম – এস ওয়াজেদ আলী
১১ ইকবাল – ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
১২ দেশে বিদেশে ইকবাল সংকলন।
১৩ ইকবালের শিক্ষা দর্শন- গোলাম সাইদিন ।
১৪ ইকবাল সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি- নুরজাহান ।
১৫ ইকবাল প্রতিভা -মোহাম্মদ গোলাম রসুল ১৯৮০
১৬ মৌলানার মন (রুমির কবিতা)- হাবীবুল্লাহ সিরাজী অনুবাদ ।
১৭ Reconstruction religious though in islam-Allama Iqbal
১৮ Iqbal his art and thought – Syed Abdul Vahid
১৯ Iqbal the poet of tomorrow – Abdur Rahim
২০ Iqbal as a thinker – Muhammad Ashraf
২১ Iqbal the philosopher -Abdul Hai
২২Development of metaphysics in persia -Allama Iqbal
২৩ The Holy Quran – Abdullah Yusuf Ali
লেখক পরিচিতি:
আবদুল কাদের জিলানী
সম্পাদক