স্পিরিচ্যুয়াল জার্নি অনেক সময় মাঝ পথে হোঁচট খায় ৷ নবীন সাধক ডিভাইন স্পিরিটের সন্ধানে অধ্যয়ন , চিন্তা ,মজলিশে আলাপ এবং শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে থাকেন ৷ জার্নিটা শুরু হয় মোহাবিষ্ট হয়ে , কনশাসনেস বাড়ার সাথে ভাঙা গড়া শুরু হয়, ঝড় জলোচ্ছ্বাস ভূকম্পনের মতো বস্তুবাদী পাথুরে দুনিয়া তুলার মতো উড়তে থাকে ৷ তবে এ ঝঞ্চার পূর্বাভাসে অনেকে পথ হারিয়ে বসেন কিংবা উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলেন , হারিয়ে ফেলেন গন্তব্য ৷
অনেকের কাছে গন্তব্যের চেয়ে পথটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে , আত্মউন্নয়নের চেয়ে উন্নয়নের হাতিয়ার গুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে ৷ অধ্যয়ন অন্তর্দৃষ্টি তৈরী না করে নিজেই মূর্তি হয়ে উঠে ,গন্তব্য ভুলে জার্নিটাই মূর্তি হয়ে উঠে ৷ পথ আর অধ্যয়নের পূজা চলতে থাকে ৷ আবার যিনি পথ খুঁজতে সাহায্য করেন ,পথ ভুলে সে উস্তাদ শিষ্যের কাছে মূর্তি হয়ে উঠেন ৷ পথ আর পদ্ধতি নিজেই মূর্তি হয়ে উঠলে সাধক পূজারী ব্যতীত আর কিছু হয় না , গন্তব্য বহু দূরে অবস্থান করে ৷

উদ্দেশ্য আর গন্তব্য পরিষ্কার জানা না থাকলে , সাধক খেই হারিয়ে ফেলেন ,জীবন আর কর্মের সম্মিলন নষ্ট হয়ে একটা একরোখা বৈচিত্রহীন অসামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনকে উপস্থিত করেন, আশপাশের লোক প্রশ্ন তুলে উদ্দেশ্যহীন জীবন নিয়ে , এক সময় নবীন সাধক তার স্পিরিচ্যুয়াল জার্নি নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়েন ৷ অধ্যয়ন হলে ইবাদতের খোঁজ থাকে না , ইবাদত হলে সামাজিক- পারিবারিক দায়িত্ব হারিয়ে বসে ৷ এমন একপেশে সাধনা উস্তাদ , শিষ্য এবং মজলিশ সবার জন্যই বোঝা, এতে অনাগত সাধকেরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেন , সাধনা পদ্ধতির বরকত নিয়েও প্রশ্ন উঠে , অথচ ব্যর্থতার দায় অক্ষম সাধকের , উস্তাদেরও না , মজলিসেরও না ৷

মুসলিমদের যে আধ্যাত্মিক সাধনা তার প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর সাথে ব্যাক্তি মানুষের অঙ্গীকার , চুক্তি বা মিছাক সম্পর্কে দুনিয়ার জীবনে অবগত হওয়া এবং দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে সে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করা , অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরকালের জীবনে প্রবেশ করা ৷ মূল কথা হলো রূহ প্রাপ্ত হয়ে জীব থেকে মানুষে উন্নীত হওয়া, ব্যক্তিগত চুক্তির কিতাব আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করা এবং কিতাব অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা ৷
আল কুরআন এবং আল্লাহর রাসূল (সা:) এর সাধনার জীবন অনুসরণ করে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে উঠার নাম আধ্যাত্মিক সাধনা ; সে সাধনায় ঘর থাকবে পরিবার থাকবে ;কুরআন সাধনা , অধ্যয়ন , ধর্ম প্রচার , ইবাদত থাকবে; সমাজ -রাজনীতি , সমাজ কল্যাণ , মানব সেবা , সংগ্রাম , ব্যর্থতা- সাফল্য , বাস্তবতা, জীবিকা , অর্থ-সাচ্ছন্দ্য , সামাজিক মর্যাদা , আত্মসম্মান সবই থাকবে ; সে জীবন মানুষের সমাজ বিচ্ছিন্ন সন্ন্যাসীর জীবনের মতো হবে না ৷ সাধারণ মানুষের মাঝে থেকে আল্লাহ ও মানুষের হক পূরণ করেই সফল হওয়া লাগবে ৷
অসম্পূর্ণ , বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন নবীদের জীবন পদ্ধতি নয় , মানুষ ও আলাহর যোগাযোগের মধ্য দিয়ে আল্লাহর দেয়া মহাকিতাব আল কু’রানের সাধনায় যে জীবন সে জীবন পূর্ণতার , চির প্রশান্তির ৷
আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন ৷

লেখক পরিচিতি:

আলী নাছের খান
সমাজচিন্তক
আইনজীবী
উদ্যোক্তা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *