The impact of Western thought and civilization on the Muslim world
বিংশ শতাব্দীর প্রভাববিস্তারকারী প্রতিভাবান আলিমে দীন ও মুসলিম চিন্তানায়কদের অন্যতম একজন ছিলেন আবুল হাসান আলী নদবী রহ. (১৯১৩-১৯৯৯)। উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে বিংশ শতাব্দীর সময়সীমায় তাঁর মতো এমন উঁচুমানের মনীষার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া কঠিন। চিন্তা ও কর্মের ইতিহাসে তিনি তাঁর সময়ের একজন সুযোগ্য প্রতিনিধিরূপে প্রাতঃস্মরণীয় হবেন যা বলা বাহুল্য।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বড় বড় ইসলামী তানজীম-সংগঠন ও তাজদীদ তথা জাগরণ ও সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা ছিল। দল-মত-দেশ নির্বিশেষে তিনি সশ্রদ্ধ মুল্যায়নে সকলের কাছে ছিলেন সমাদৃত। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তার ব্যাপকতা, আধুনিক ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অসহায় এবং অবক্ষয়প্রাপ্ত মুসলিম উম্মাহর প্রতি দরদ ও দায়িত্বশীলতা, বিশ্বমানবতার মুক্তির আকুলতা ও কল্যাণকামিতা প্রভৃতি গুণবৈশিষ্ট্য তাঁকে শুধু তাঁর দেশেই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ করে তোলেনি, বরং তাঁর স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করেছে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও ।
সত্যি বলতে, তাঁর কর্ম, সাধনা ও অবদানের পরিমাণ ও পরিসরকে ইউরোপের একটা একাডেমি’র সাথে তুলনা করা চলে অনায়াসে। তাঁর কর্মমুখর জীবনের উজ্জ্বল ও উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হচ্ছে তাঁর রচনাকর্ম। ইতিহাস, সভ্যতা, সমাজ, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন অর্থাৎ জীবন ও জগৎ সংশ্লিষ্ট বিচিত্র বিষয়ে কলম ধরেছেন তিনি। ছোট-বড় মিলে তাঁর রচনার সংখ্যা প্রায় দুইশ’। মাতৃভাষা উর্দুতে যেমন লিখতেন, আরবি ভাষায়ও লিখতেন। যদিও আরবি ভাষায় লেখায় অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তাঁর অধিকাংশ গ্রন্থ আরবি, ফার্সি, ইংরেজি, হিন্দি, তুর্কি এবং বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং হয়ে চলছে। আরবি ভাষায় রচিত তাঁর গ্রন্থগুলি আরববিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলে। আরবের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক হিসেবেও তার একাধিক গ্রন্থ গৃহীত ও পঠিত হয়ে থাকে ।
এক.
নদবীর গ্রন্থরাজির মধ্যে সবচেয়ে মুল্যবান এবং প্রণিধানযোগ্য গ্রন্থটি হচ্ছে “মা জা খাসিরাল আলামু বি ইনহিতাতিল মুসলিমীন”।[১] গ্রন্থটির বিষয়বস্তু ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করে গবেষক মুসা আল হাফিজ বলেছেন, ‘এ গ্রন্থে তিনি ইসলামি সভ্যতার উদ্ভব, বিকাশ এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে তার তুলনামূলক আলোচনায় এমন এক আলোচনাপদ্ধতি প্রবর্তন করেন, যা ইতিহাসমুখী আলোচনায় অভিনব, চমকপ্রদ এবং তারচেয়েও বেশি অনন্য। গ্রন্থটি প্রকাশিত হবার সাথে সাথে প্রাচ্যের নিস্তরঙ্গ চিন্তায় এক অসাধারণ কম্পনের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে। বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে এ ছিল অনবদ্য এক বিকিরণ।’[২] আরবিভাষায় তাঁর রচিত সর্বাধিক পাঠকপ্রিয় এই বই প্রকাশিত হবার পরপরই আরববিশ্বের বোদ্ধামহলের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে। দামেস্ক ইউনিভার্সিটির শরীয়া বিভাগের স্কলার ও খ্যাতিমান লেখক প্রফেসর মুহাম্মদ আলবারিক রহ. এই গ্রন্থকে ‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠগ্রন্থ’ প্রতিপন্ন করেন। তিনি এও বলেন, এ বই যে পড়েনি, তার অধ্যয়নকর্ম অসম্পূর্ণ রয়ে গেল! গ্রন্থটি নিয়ে এমন উচ্চমাপের অভিব্যক্তি পেশ করেছেন আরবের বড়ো বড়ো পণ্ডিত ও চিন্তাবিদের অনেকেই।
দুই.
ভারতীয় উপমহাদেশে বাদবাকি আলিম ও মুসলিম চিন্তামনীষীদের থেকে যে বিশেষত্ব আলী নদবীকে স্বতন্ত্র পরিচয়ে চিহ্নিত করেছে, তা হচ্ছে তাঁর চিন্তক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মতৎপরতা তথা আধুনিক বস্তুবাদী চিন্তা-দর্শন ও পাশ্চাত্য সভ্যতার চিন্তাশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ-চেষ্টা। আপন রচনাসম্ভারে, বক্তৃতা-ভাষণে পশ্চিমাদের ভ্রান্ত, অন্তঃসারশূন্য, ধর্মহীন চিন্তাধারা, মতাদর্শ ও দর্শনের উপযুক্ত জবাব দিতে সচেষ্ট হয়েছেন আলী নদবী । তাঁর রচনাধারায় পাশ্চাত্যের বাতিল চিন্তা-দর্শন ও তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার প্রতিরোধ এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে জোরালো এবং যৌক্তিক ভাষায়। পশ্চিমা চিন্তা-দর্শন ও সভ্যতার সংকট ও দুর্বলতার জায়গাগুলি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। একইসাথে স্পষ্টভাষায় সমালোচনা করেছেন পশ্চিমাগ্রস্ত প্রাচ্যদেশীয় জাতিগোষ্ঠী সবিশেষ মুসলিমবিশ্বের শাসক ও শিক্ষিতশ্রেণীর দাসত্বসুলভ মনোভাব এবং নির্বিচার অন্ধানুকরণের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ব্যক্ত করেছেন পাচ্য ও পাশ্চাত্য চিন্তা ও সভ্যতার বিবদমান চ্যালেঞ্জকে ইসলাম দিয়ে মোকাবিলা করবার উপায়-উপকরণ এবং ভবিষ্যৎ বিশ্বমানবতার সরল-সুন্দর নির্দেশনাসম্বলিত এক ভারসাম্যপূর্ণ পথ। তাঁর “মাগরিব সে সাফ সাফ বাতেঁ” নামক বইটি বহির্বিশ্বে প্রদত্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কতিপয় বক্তব্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলনগ্রন্থ।
আলী নদবী একালের আধুনিক পশ্চিমাসক্ত সমাজের জন্য; যারা পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত, পশ্চিমা চিন্তা ও সভ্যতার হাতে আবদ্ধ, ইউরোপীয় প্রগতি ও স্বাধীনতা আন্দোলন দ্বারা যারা প্রভাবিত, আত্মপরিচয়ে হীনম্মন্য , আপন বোধ-বিশ্বাস নিয়ে সংশয়গ্রস্ত, তাদের জন্য চিরায়ত মুমিনসুলভ প্রাজ্ঞতা, দাঈসুলভ মাধুর্যতা, পর্যালোচনাধর্মী বিশ্লেষণ আর পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাষায় এক বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার তৈরি করে দিয়েছেন। আধুনিক সময়ের বাস্তবতায় তাঁর সেসব বক্তৃতামালা এবং রচনারাজির গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা দিনের আলোর মতোই অনস্বীকার্য।
তিন.
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় খ্রিষ্টশক্তি দীর্ঘ দুই শতাব্দী (১০৯৫- ১২৯১) ধরে একের পর এক ক্রুসেড যুদ্ধের মহড়া জারি রাখে, কিন্তু শেষতক টিকে উঠতে পারে না মুসলমানদের সঙ্গে। এরই প্রতিক্রিয়ায় ফরাসি রাজা সেন্ট লুইস– যার হাতে সপ্তম ও অষ্টম ক্রুসেড সংঘটিত হয়েছিল, এক ভিন্নধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রণাঙ্গনে ক্রমাগত খৃষ্টসৈন্যদের শোচনীয় পরাজয় সেন্টলুইসকে বিকল্প চিন্তা করতে বাধ্য করে । রাজা তাই রায় পেশ করেন নতুন এক যুদ্ধের, যা হবে চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক পথ ধরে। এক্ষেত্রে লুইস ইউরোপীয়দের সর্বাগ্রে জ্ঞানগত প্রস্তুতিকে জরুরি মনে করেন। লুইস তার উইলের মাঝে চিন্তাযুদ্ধের নীলনকশা হিসেবে কতিপয় প্রস্তাবনা পেশ করে যান। যেমন: মুসলিম শাসকদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি করতে হবে। তাদের মাঝে পোক্ত আকিদা ও মজবুত ঈমানদার কোন গোষ্ঠিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না। মুসলিম সমাজকে অশ্লীলতা, চারিত্রিক পতন ও অর্থনৈতিক দূর্নীতির মাধ্যমে দুর্বল করে ফেলতে হবে এবং এছাড়াও আরও নানাবিধ পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা দেন । [৩]
সেন্ট লুইসের নতুন এই লড়াইয়ের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য কী এবং কেমন, তা সহজেই অনুমেয়। এ যুদ্ধের হাতিয়ার অস্ত্র নয়, হবে শাস্ত্র। অসি নয়, হবে মসি। এর রণক্ষেত্র বাইরের ময়দান নয়, হবে মানুষের ভেতরের মন-মস্তিষ্ক । এর পরিণতি প্রায়শই উপলব্ধ নয় অথচ সবচে’ বেশি ভয়াবহ। আজকের আধুনিক পরিভাষায় এ লড়াইকে বলা হচ্ছে চৈন্তিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই– বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রুসেড ।
বস্তুত, ক্রুসেড যুদ্ধের পরাজয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে সামরিক যুদ্ধের পাশাপাশি নতুন করে শুরু হয় ইসলাম, মুসলমান এবং মুসলিমবিশ্বের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দুনিয়ার বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মতাদর্শগত লড়াইয়ের এক ভয়ানক সিলসিলা। সে লড়াই এমনকি একমুহূর্তের জন্যও তারা থামায় নি। তাদের তৎপরতা যেমন রাজনৈতিক এবং সামরিক পথ দিয়ে জারি ছিল, তেমনি চিন্তা ও মতাদর্শিক দিক থেকেও ছিল গভীরভাবে সক্রিয়। একদিকে উসমানি খেলাফতের পতন, বিস্তৃত মুসলিমবিশ্বের ভৌগোলিক বিভক্তি রাজনৈতিক দিক থেকে মুসলমানদের উপর এমন এক আঘাত হানতে সক্ষম হয়, যার ক্ষত নিয়ে আজও মুসলিম উম্মাহ জর্জরিত। অপরদিকে প্রাচ্যবিদ এবং পশ্চিমা লেখক-বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের মৌলিক চিন্তা-দর্শন, ইসলামি শরিয়ার উৎসমূল, ইসলামি ইতিহাস, শরয়ি বিধিবিধান এবং ইসলামসংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি বিষয়কে নিজেদের টার্গেট বানায় এবং বিভ্রান্তি, প্রতারণা আর প্রপাগাণ্ডার এমন এক প্রশস্ত জাল বিস্তার করেছে, যারাই তাদের রচনা ও লেখাজোখা পাঠ করে ইসলামকে বুঝতে গিয়েছে, তারা বিভ্রান্তির বেড়াজালে আঁটকে পড়েছে ![৪]
চিন্তা, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মতাদর্শগত এই লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ কখনোই সরাসরি দৃশ্যপটে হাজির হয়নি, বরং ছদ্মবেশ ধারণ করে সামনে এসেছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ধর্মের পক্ষে ওকালতিও করতে দেখা যায় তাদের। এর ভেতর দিয়ে সুকৌশলে তারা ধর্মের এমন এক কাঠামো উপস্থাপন করে, নতুন চিন্তা ও দর্শনের অবয়বে এমনসব বয়ান ও মতবাদ হাজির করে, যা ধর্মের মূলচেতনায় আঘাত হানে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে। অথচ একজন বিশ্বাসী মুসলমানের এই বিষয় গুলো উপলব্ধিতে আসে না ।
বলা বাহুল্য যে, একটি জাতির পক্ষে এরচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপার আর কি হতে পারে যে, সে জাতি তার বাহ্যিক এবং জাগতিক শক্তি-সামর্থ্যের সাথেসাথে ভেতরের ‘বোধশক্তিটুকও’ হারিয়ে বসে। আর যখন পরিস্থিতি এমন গুরুতর হয়, তখন সে জাতির বিপর্যয় ও বিনাশ রুখবার মতো আর কোন উপায় বাকি থাকে না। ধ্বংস তখন সে জাতির জন্য অনিবার্য হয়ে উঠে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান সময়ের বোধিশূন্য মুসলমানরা এমনই অনিবার্য বিপর্যয়ের দিকে ক্রমাগত স্রোতের মতো ধেয়ে যাচ্ছে। মুসলমানরা তাদের দীন ,ঈমান, মুল্যবোধ ও সংস্কৃতি-সভ্যতাকে বাদ দিয়ে পশ্চিমাদের কাছে নিজেদেরকে সোপর্দ করে দিয়েছে। যে পশ্চিমারা বিজ্ঞান, চিন্তা, দর্শন, শিক্ষা, প্রগতি ও উন্নতি, আধুনিকতা, সভ্যতা ইত্যাদির দোহাই তুলে মুসলিম তথা গোটা মানবসভ্যতাকে আল্লাহপ্রদত্ত জীবন বিশ্বাস ও বিধান থেকে বিমুখ করে, ধর্মহীনতা ও নাস্তিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষকে পরিণত করছে প্রবৃত্তির অসহায় অনুগত দাসে।
সময় ও সমাজের এমন স্পর্শকাতর সমস্যা ও সংকটময় বাস্তবতাকে মুসলিমবিশ্বের এই চিন্তানায়ক তাঁর অসামান্য দৃষ্টির প্রাখর্যে অবলোকন করতে সক্ষম হন। অনুধাবন করতে সমর্থ হন উদ্ভূত পরিস্থিতির ভয়াবহ পরিণতির কথা। ফলত তার মোকাবিলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন নিজের বহুবিধ কর্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এটাই মূলত আলী নদবীর কর্মপন্থার বিশেষ মেজাজ ও বৈশিষ্ট্য। বর্তমান সময়ের প্রক্ষাপটে আলী নদবীর চিন্তা ও কর্মের মূল্যায়ন ও অনুসরণের প্রকৃত প্রাসঙ্গিকতা এখানেই ।
চার.
পাশ্চাত্যের চিন্তাশাসন ও সভ্যতার দ্বারা প্রভাবিত পশ্চিমাগ্রস্ত মুসলিম চিন্তক ও শিক্ষিতদের আফসোসজনক সুরতহাল তুলে ধরে আবুল হাসান আলী নদবী লিখেছেন: আমরা জ্ঞান পশ্চিমাদের থেকে গ্রহণ করি, জীবনের মানদণ্ড নিই তাদের থেকে। এমনকি আমরা আমাদের দীনি দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যাখ্যা-বিবরণও তাদের বয়ান থেকে আহরণ করি। বর্তমানে ‘উলুমে ইসলামিয়াতেও সেই পশ্চিমা ইউনিভার্সিটির দৃষ্টি ও প্রভাব পরিলক্ষিত। পশ্চিমের অমুসলিম পণ্ডিত–প্রাচ্যবিদদের মানদণ্ড কেবল পশ্চিমে নয়, বরং প্রাচ্যেও সমানভাবে মান্য করা হয় এবং এই ধারণা পোষণ করা হয় যে, প্রাচ্যবিদরা যা যা বলবে, সেটাই বেশ এবং শেষ কথা। এ নিয়ে পুনরায় ভেবেচিন্তে দেখবার, পর্যালোচনা করবার যেন আর কিছুমাত্র জরুরত নেই। এ বাস্তবতা থেকে দুনিয়ার প্রায় কোনো মুসলিম দেশই আজ মুক্ত নয়। এর কুফল হচ্ছে এই, প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ এপর্যন্ত কোনো দেশ আস্বাদন করতে পারে নি। এদের মন-মস্তিষ্কে পশ্চিমের প্রাধান্য, পশ্চিমের দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনবোধের এমন দূর্বহ বোঝা চেপে বসেছে, যার ভারে তারা কেবল ন্যুব্জ নয়, বরং রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে আছে।
মুসলিমবিশ্বের শাসকদের অবস্থাও অনুরূপ হতাশাজনক। তাঁরাও নিজেদের স্বকীয়তা, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ে চুড়ান্ত রকমের উদাসীন এবং হীনমন্যতার শিকার। পশ্চিমাদের গোলামি ও তাদের ভোগবাদী জীবন ও বস্তুবাদী দর্শনকে আপন করে নিয়েছে পুরোদস্তুর। শাসক ও পরিচালক গোষ্ঠীর এধরনের নতজানু ভূমিকাকে সমালোচনা করে নদবী তাদের প্রসঙ্গে লিখেন: মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের বাগডোর যাদের হাতে, তারা এই পশ্চিমা চিন্তাধারার প্রতি পুরোপুরি ‘ঈমান’ পোষণ করে আছে। তাদের নাম-ধাম-পেহচান মুসলমানি হলেও, শরীরে মুসলমানের রক্ত হলেও, মন-মানসে, চিন্তা-বিশ্বাসে তারা পুরোদস্তুর পশ্চিমা আওতায় আবদ্ধ।[৫]
বাস্তবতা হচ্ছে, মুসলিমবিশ্বের বর্তমান শাসকদের অবস্থা ও অবস্থান চূড়ান্তরকম পতনমুখী। ইসলাম আজ তাদের কাছে সাধারণ ধর্মের মতো কেবলই ‘প্রাচীন প্রথা’ হিসেবে প্রতিপন্ন। ইসলাম তাদের চোখে আল্লাহপ্রদত্ত মনোনীত দীন হিসেবে একমাত্র জীবনবিধান নয় যে, তারা এর প্রচার-প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রাখতে ত্যাগী এবং সচেষ্ট হবে৷ বিশ্বের অসহায় মুসলিম উম্মাহর অবস্থার উত্তরণ এবং জাগরণ নিয়ে তাদের কোনও চিন্তা-চেষ্টা নেই। শাসক হিসেবে তারা যে মুসলমানদের সেবক, সে বোধ-বিচার তাদের ভেতর অনুপস্থিত। ধর্মীয়ভাবে যেসব দায়বদ্ধতা তাদের উপর বর্তায়, তা তাদের দৃষ্টিতে যেন বিবেচ্য বিষয়ই নয়। তারা নিজেদেরকে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সার্বিক বিষয়ের অভিভাবক হিসেবে ভাবেন না। তারা চায় না মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের কথা, চায় না বিশ্বব্যাপী ইসলামের পুনর্প্রতিষ্ঠা। বর্তমান পৃথিবীর জালেমি ব্যবস্থাগুলোর প্রতিরোধ তো দূরের কথা, তাদের কাছে বরং সেসব অনুকরণীয়। যারা প্রেরিত হয়েছে খলিফা হয়ে, আল্লাহর পক্ষে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জিম্মাদারি নিয়ে, সেই উম্মাহর এমন পরিণতি কতটা লজ্জা আর হতাশার, সেটা বর্ণনা অতীত।
আলী নদবী এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আত্মবিস্মৃত মুসলিম জাতিকে সম্বোধনপূর্বক সতর্কবাণী উচ্চারণ করে লিখেছেন: মুসলমানদের জন্য একটুও অবকাশ নেই যে, তারা আপন মুসলিম ভাই এবং মজলুম মুসলমানদের দূরাবস্থা দেখা থেকে চোখ বুজে থাকবে এবং নির্লিপ্ততা দেখাবে। যখন দুনিয়ার প্রান্তে প্রান্তে মুসলমানদের উপর জুলুম ও বর্বরতা, লাঞ্চনা ও বঞ্চনা, অত্যাচার এবং নানাপ্রকারের পাশবিক নির্যাতনের নির্মম শিকার বানানো হচ্ছে। অপরাধ শুধু তাদের এইটুকু যে, তারা মুসলমান! তখন মুসলমানদের এ এক সামষ্টিক জিম্মাদারি যে, তারা চলমান পরিস্থিতিকে পরিবর্তনের যথাসাধ্য চেষ্টা করবে এবং মুসলমানদের উপর জুলুম-অত্যাচারের পাহাড়কে চাপিয়ে দেওয়া সেসব জালিমদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। নিদেনপক্ষে তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অপছন্দ, ঘৃণা এবং প্রচণ্ড মর্মবেদনা প্রকাশ করবে। কারণ, হাদীসে এসেছে, তোমরা মুমিনরা পরস্পর সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং হামদরদির ক্ষেত্রে একক সত্তাতুল্য। এক অঙ্গের উপর আঘাত পেলে শরীরের সারা অঙ্গে ব্যথা আরম্ভ করবে। মুসলমানদের অবস্থার উত্তরণ ও পরিবর্তন নিয়ে যে চিন্তা-চেষ্টা না করে, সে তাদের থেকেও নয়।[৬]
পাঁচ.
আলী নদবী মুসলিম সমাজ ও শাসকদের এ জাতীয় সংকট ও বিপর্যয়ের উৎস কোথায়, কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে এমন বিষাক্ত অসুখ, তাও তিনি খতিয়ে দেখেছেন অনুপুঙ্খ অনুসন্ধানের মাধ্যমে। এবং তাকে চিহ্নিত করে তার যথোচিত প্রতিকার নির্দেশনায় যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। নদবীর দৃষ্টিতে, আজকের মুসলিম সমাজ ও মুসলিম বিশ্বের শাসকদের ভেতরে পশ্চিমা দাসানুদাস মনোভাবের উদ্ভব এবং আপন পরিচয় ও ঐতিহ্যসংস্কৃতির ব্যাপারে হীনম্মণ্যতাবোধের পাদুর্ভাব ঘটেছে পশ্চিমাদের চৈন্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক এক দীর্ঘ-ধারাবাহিক আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ মুসলিম দেশগুলোকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিজেদের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ করার জন্য সর্বপ্রথম টার্গেট করে সে দেশের, সে সমাজের শিক্ষিত শ্রেণীকে (Intellectual Class)। কারণ, তারা একথা খুব ভালোভাবেই জানে যে, দেশের শিক্ষিত সমাজকে হাত করলেই তবে গ্রাস করে নেয়া যাবে পুরো রাষ্ট্রকে৷ অতঃপর নিজেদের আগ্রাসন প্রক্রিয়ায় বহুবিধ কর্মতৎপরতা শুরু করে তারা। এমনকি এর জন্য তারা প্রাচ্যতাত্ত্বিক একটি স্বতন্ত্র বুদ্ধিবৃত্তিক গোষ্ঠীর জন্ম দেয়। পশ্চিমকর্তৃক প্রাচ্যের, বিশেষকরে মুসলিম জাহানের সংস্কৃতি, ধর্ম, সাহিত্য, ভাষা, ইতিহাস, সভ্যতা ও রীতিনীতি অধ্যয়ন, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের কাজ করে থাকে এই বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। ইসলাম ও মুসলিমবিশ্ব নিয়ে এদের তাবৎ চেষ্টা সাধনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইসলামের জ্ঞানগত উৎসের মাঝে সংশয়-সংমিশ্রণ ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসলামের প্রাণশক্তি দূর্বল করা এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও আকার-অবয়বের মাঝে একটা বিমানবিক রূপ আরোপ করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মানবিক আবেদনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা।
আধুনিক মুসলিম শিক্ষিত সমাজ ও মুসলিম শাসকশ্রেণীর আত্মবিস্মরণ, নির্বিচার পাশ্চাত্যপ্রিয়তা ও অনুকরণপ্রবণতা, জ্ঞান ও চিন্তার দিক থেকে পশ্চিমাদের দাসত্বসুলভ মনোভাব এবং ইসলামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নৈরাশ্যবাদিতা তৈরি করার ক্ষেত্রে এই প্রাচ্যবিদদের বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতাকেই আলী নদবী বিশেষভাবে দায়ী করেন। তিনি লিখেন—বর্তমান মুসলিম বিশ্বের শাসক ও চালকশ্রেণীর মাথার ভেতর ইসলামের গৌরবময় অতীত সম্পর্কে মন্দ ধারণা, ইসলামের বর্তমান সম্পর্কে অসন্তুষ্টি এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নৈরাশ্য সৃষ্টির মূলে আছে পশ্চিমা প্রাচ্যবিদদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রভাব। ইসলাম, নবি কারীম সা. ও ইসলামের (জ্ঞানতাত্ত্বিক) উৎসসমূহ সম্পর্কে সন্দেহ ও দ্বিধা সৃষ্টির গোড়ায়ও মূলত সেই প্রভাব। ধর্মের নবরূপায়ণ ও ইসলামী আইনের সংস্কারে তাদেরকে প্রস্তুত করাসহ এমনতরো বহু বহু ক্ষেত্রে পশ্চিমা প্রাচ্যবিদদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রভাব কার্যকর। এই প্রাচ্যবিদরা ইসলাম সংক্রান্ত পুস্তকাদি পাঠে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদেরকে সাধারণত ওরিয়েন্টালিস্ট বলা হয়। তারা জ্ঞানের প্রসারতা, গবেষণার গভীরতা এবং প্রাচ্যের বিষয়বস্তুর গভীর অভিজ্ঞতা অর্জনের দ্বারা প্রাচ্য-প্রতীচ্যের বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক মহলে অর্জন করেছেন শ্রদ্ধা ও সম্মান। ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে তাদের গবেষণা ও মতামতকে মনে করা হয় সর্বোচ্চ বক্তব্য হিসেবে, মীমাংসিত সত্য হিসেবে। [৭]
আগেই বলেছি যে, বাহ্যিকভাবে এইসব প্রাচ্যবিদ ও পশ্চিমা পণ্ডিতরা জ্ঞানগত জায়গা থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা এবং গবেষণা করলেও এসবের নেপথ্যের মূল অনুপ্রেরণা ক্রুসেডীয় এবং রাজনৈতিক। এরা মুসলিম জাতিকে উপনিবেশিত জাতি হিসেবে নিজেদের আধিপত্যের ছায়াতলে দেখতে চায়। তারা নিজেদের সভ্য, শ্রেষ্ঠ এবং মুসলমানদের নিকৃষ্ট হিসেবে উপস্থাপন করতেই তাদের এসমস্ত জ্ঞান-গবেষণার কায়কারবার। তারা নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের ব্যাপারে এমন এক নতুন বয়ান হাজির করে, এক নতুন ডিসকোর্স তৈরি করে, যার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের যুগপৎ দুর্বৃত্তায়ন ঘটিয়ে থাকে। মুসলিম মানেই বিপজ্জনক, ইসলাম মানেই সন্ত্রাস; এমন একটা দূষিত ও দানবীয় ধারণা গড়ে তোলে এরা জনমনে। মূলত এসব তারা করে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদকে হালাল করে নিতে। যেন তারা বলতে পারে যে, তারা অসভ্য, দূবৃত্ত, বর্বর একটা জাতিগোষ্ঠিকে সভ্য করতে চাচ্ছে, একটা অনুন্নত রাষ্ট্রের উত্তরণের প্রয়াস চালাচ্ছে। কাজেই এতে কারও বাধা দেয়া কিংবা এর বিরুদ্ধাচরণ করা আদৌ উচিৎ নয়, বরং স্বাচ্ছন্দ্যে এবং খুশিমনে এই আধিপত্যবাদকে নিজেদেরই কল্যাণের প্রয়োজনে মেনে নেওয়া জরুরি। এটাই যুক্তির দাবি এবং তারা মনে করে, এমনটা করা তাদের নৈতিক অধিকার। আর এভাবেই, প্রথমে জ্ঞানতাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে অতঃপর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমারা ধীরেধীরে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রসারিত করে চলেছে।
মূলত, চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রতারক-প্রচারণার মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমারা নিজেদেরকে জগতের একমাত্র আধুনিক, সভ্য জাতি বানিয়ে দুনিয়ার অপরাপর জাতিগোষ্ঠীকে, তাদের সংস্কৃতি, তাদের শিক্ষা ও চিন্তাকে বাতিল ও পশ্চাদপদ ঘোষণা করে নিজেদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে জোরপূর্বকভাবে অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার এক সুক্ষ্মকৌশলপূর্ণ প্রয়াস ধারাবাহিকভাবে জারি রেখেছে। ফলত, পশ্চিমারা যা বলবে, তাই জ্ঞান, তাই শোভন, তারা যা করবে, তাই মহান, তাই সভ্যতা, তাই প্রগতি—এমন একচেটিয়া ধ্যান-ধারণা বদ্ধমুল হয়ে গিয়েছে প্রাচ্যের উপনিবেশিত জাতিগোষ্ঠীর মনোজগতে। পশ্চিমাদের জোরপূর্বক আরোপিত এই দাসত্বশৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে প্রথমত আত্মসচেতন হতে হবে। এরপর গড়ে তুলতে হবে তাদের বিরুদ্ধে সমান্তরাল প্রতিরোধ। চালাতে হবে বুদ্ধিবাদী প্রতিপ্রয়াস। সর্বোপরি এর জন্য গ্রহণ করতে হবে যথেষ্ট এবং যথোপযুক্ত প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা। এ বিষয়ে আলী নদবী লিখেন—মুসলিমবিশ্ব যদি আজ সত্যিসত্যি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় এবং নিজের বুদ্ধিতে চিন্তা করতে চায়, তাহলে এই বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মসমর্পণ এবং চিন্তাদাসত্ব থেকে তাকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। এবং এক্ষেত্রে তাঁর সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা হচ্ছে, আমাদের আজ এমন বিশাল ব্যক্তিত্বের আলিম, চিন্তাবিদ ও লেখক-গবেষকের প্রয়োজন, যারা আত্মরক্ষার অবস্থান থেকে নয়, আক্রমনের অবস্থান থেকে পাশ্চাত্য সভ্যতার সমালোচনা ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে পারবেন। [৮]
তথ্যসুত্র :
১. বাংলায় রয়েছে এর একাধিক অনুবাদ। প্রথম অনুবাদটি মাওলানা আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলীর। মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো? নামে বইটি প্রকাশিত হয়। সরল, সাবলীল রচনারীতিতে অনুবাদ সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় অনুবাদকর্ম সম্পন্ন হয় মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ এর হাত দিয়ে। মুসলিম উম্মাহের পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো? নামে যা প্রকাশিত হয়। এটি মূলত আরবীপ্রভাবিত গদ্যভঙ্গীতে অনূদিত। এতে আছে আবেগস্পন্দিত গদ্যের বিস্তার।
২. আল হাফিজ, মুসা (২০১৮-৬১) আলী নদবীর ইতিহাসদর্শন, পৃথিবী ঘরে ফিরো।
৩. রায়হান, ইসমাইল (২০১৮-৩৪) বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রুসেড, অনুবাদ, আলফারুক, আব্দুল্লাহ, শুদ্ধি প্রকাশনা, ঢাকা।
৪. রহমানি, খালিদ সাইফুল্যাহ, (২০০২-৮), ইসলাম আওর আমনে আলম, (উর্দু), প্রকাশনা, ইসলামি ফিকাহ একাডেমি, ভারত।
৫. কাসেমি, ড. মুহাম্মদ সাউদ আলম,(২০০০-৪০) মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদবী : আফকার ওয়া আসার (উর্দু), আল হিদায়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, রাজিস্থান।
৬. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭।
৭. আল হাফিজ, মুসা, প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ, ২০১৬-৫৩।
৮. নদবী, আবুল হাসান আলী, মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো।
লেখক পরিচিতি:
কাজী একরাম
উচ্চতর দাওয়াহ ও গবেষণা কেন্দ্র।
মা’হাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা।