The collapse of dictatorship
কোন কিছুর স্বাভাবিক গতিতে বাঁধ দিলে সেটা বিপরীত কিংবা ভিন্ন রূপে হাজির হয়। নদীর স্রোতে বাঁধ দিয়ে তৈরী করা হয় বিদ্যুৎ অর্থাৎ আগুন। আগুন হলো পানির বিপরীত। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতায় বাঁধা দিলেও সেটা বিপরীত রূপ ধারণ করে। এটার সবচেয়ে কার্যকর উদাহরণ হলো পশ্চিমা সভ্যতার যৌনতা বিষয়ক ধারণা।
খ্রিস্টানিটি এবং ইহুদিইজমে যৌনতা হলো আদিপাপ। যে পাপের ফলে আদমের জান্নাত হতে পতন ঘটে। এজন্যই খ্রিস্টান পাদ্রি এবং মাদাররা বিয়ে করে না। তাদের ধারণা রসূল ঈসাও বিয়ে করে নি অর্থাৎ যৌনকর্মে লিপ্ত হন নি। যৌনতা বিষয়ে এমন বিরূপ ধারণা থাকার কারণে পশ্চিমে মানুষের সাধারণ যৌন প্রবৃত্তি চরম অবদমনের শিকার হয়।
অর্থাৎ নদীতে বাঁধ দেয়া হয়। যার ফল স্বরূপ পশ্চিমে অবাধ যৌনতার ধারণা তৈরী হয়। নারীকে পশ্চিমে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হতো অর্থাৎ নারীর স্বাভাবিক চলাফেরায় বাঁধ দেওয়া হতো। এরই ফলস্বরূপ পশ্চিমে নারীর অবাধ বিচরণের ধারণা তৈরী হয়। তৈরী হয় নারীবাদ। পশ্চিমে অর্থাৎ ইহুদি খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বে দৃশ্যমান পৃথিবীকে বলা হতো শয়তানের রাজ্য ।
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগত হলো মিথ্যা অবাস্তব। এই ধারণাগুলোও মানুষের স্বাভাবিক ধারণার বিপরীত। এরই ফলস্বরূপ পশ্চিমে বস্তুবাদ ধারণা তৈরী হয় অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের প্রতি প্রবল মোহ তৈরী হয়। এবং বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।
হেরাক্লিটাস বলতেন “বিপরীত হতেই বিপরীতের উৎপত্তি হয়” এই চিন্তা দিয়েই নিটশে সক্রেটিসের নৈতিকতার ধারণাকে সমালোচনা করে বলেছেন, “সক্রেটিসের চরম নৈতিকতা ধারণা উৎপত্তি চরম অনৈতিকতা থেকে”। এই তত্ত্ব দিয়ে নিটশে কান্টের সার্বজনীন নৈতিকতার ধারণাকেও সমালোচনা করেছেন।
এই তত্ত্ব দ্বারা পরবর্তীতে ফ্রয়েডও চরম প্রবাহিত হয়েছেন। যেটা ছিলো ফ্রয়েডের স্বপ্ন ব্যাখ্যা এবং মানব মনস্তত্ব বুঝার মূল জাদুর কাঠি। ফ্রয়েড বলতেন অবদমিত যৌনাকাঙ্ক্ষাই পরবর্তীতে শিল্প সাহিত্যে সংস্কৃতি এবং ধর্মের মুখোশ নানান রূপে মানুষের সামনে হাজির হয়।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখি ফেরাউনের চরম স্বৈরাচারী রূপই মুসাকে তৈরী করে। মুজিবের চরম বাকশালি রূপ তার দলের ভেতর থেকেই তার ধ্বংসের বীজ মুশতাককে তৈরী করে। মনস্তাত্ত্বিক ভাবে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ধর্মীয় অবদমনগুলোই সামষ্টিক বিপ্লবের বীজ বুনে। ঠিক এ সূত্র ধরেই মোল্লাতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটে।
লেখক পরিচিতি:
আরিফ রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়