Three "T"
গল্পটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মালেয়শিয়ার বিখ্যাত প্রফেসর আব্দুল রশীদ মতিন স্যারের ক্লাস লেকচার অবলম্বনে। গবেষক, বিদ্যার্থী, শিক্ষার্থী, ও একাডেমিকদের জন্য স্যারের তিনটি উপদেশ খুবই দরকারী ও কাজের । সবার উপকারে আসবে এই চিন্তাকে সামনে রেখে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। চলুন গল্পের ঢঙ্গে স্যারের সেই তিন সফল হওয়ার তরিকা জেনে নেই ।
মতিন স্যার পিএইচডি ক্লাসে প্রবেশ করলেন । স্যারের প্রতিদিনের মত সুন্দর উচ্চারণে, আসসালামু আলাইকুম।একটু থেমে মাই ডিয়ারস, হাউ আর ইউ। সবাই একযোগে উত্তর, উই আর ফাইন আলহামদুলিল্লাহ। স্যারকে দেখে মনে হচ্ছে সে আজ বেশ ভালো মেজাজে আছেন। তিনি একটু থেমে বললেন,মাই ডিয়ারস আজ তোমাদের তিনটা উপদেশ দিতে চাই, যদি তোমরা মেনে চলতে পারো তাহলে সারা দুনিয়ায় দাম পাবে এবং জীবনে সফল হবে ।
ছাত্ররা সবাই উদগ্রীব কি হতে পারে সেই উপদেশ? মতিন স্যার খাঁটি ইংরেজদের মত করে বললো-3″T” is the key to success. সহজ বাংলায় তিনটি ‘টি’ হল সফলতার চাবি। একজন ছাত্র অপেক্ষা না করে প্রশ্ন করেই বসল, প্রফেসর, what is 3 “T”?
মতিন স্যার ধীর স্থির ভাবে উত্তর দিতে শুরু করল এভাবে-
মাই ডিয়ারস, প্রথম টি মানে হল টাইম বা সময়। ‘T’ means Time। স্যার ব্যাখ্যা দিয়ে বলতে শুরু করলেন, যদি তোমরা সময় কে কাজে লাগাতে শেখ তাহলে দুনিয়ার সব জায়গায় সফল হবে। সবাই সমীহ করবে।অনেক বড় হতে পারবে। স্যারের এবার উদাহারণ দেবার পালা, স্যার শুরু করলেন সুরা আসর দিয়ে। সময়-ই সফলতার মুল । আল্লাহ এইজন্য সুরা আসরে সময় নিয়ে কসম করেছেন। তিনি আরো বলেন, সময়- ই দুনিয়ার সব । সময়ের সমষ্টি হল জীবন। আমরা অনেকে সময়কে টাকার সাথে তুলনা করি। মতিন স্যার বলেন “Life means Time, if you waste your time, you waste your life” সময় নষ্ট মানে জীবন নষ্ট। এই জন্য ইমাম শাফেয়ী বলেছেন, সময় হল তরবারির ন্যায় তুমি যদি তাকে না কাটো সে তোমাকে কেটে চলে যাবে। স্যার এবার গুরু গম্ভীর সুরে বললেন, আমার প্রিয় ছাত্ররা সময়কে কাজে লাগাও।
মতিন স্যার তার পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডের দিকে মনোনিবেশ করলেন, ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে বলতে লাগলেন, টি নাম্বর টু মানে হল Tongue. ‘T’ means Tongue . ছাত্ররা মনে মনে ভাবতেছে জিহ্বা আবার কি জিনিস। এটা আবার গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কি আছে। মতিন স্যার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, লিসেন কেয়ারফুলি। মনযোগ দিয়ে শোন। যার ‘টাং’ এর দক্ষতা নাই, তার সফলতাও নাই। মতিন স্যার একটু খোলাসা করে বললেন, ‘টাং’ মানে জিহ্বা নয় ল্যাংগুয়েজ বা ভাষা। এবার স্যার সবার উদ্দেশ্যে একটা প্রশ্ন ছুড়লেন, বলত পৃথিবীর ‘টাং’ এখন কি? মোটামুটি সবাই একই ভঙ্গিতে উত্তর ‘ইংরেজি’ স্যার ।
স্যার এবার তার নিজের ভঙ্গিতে শুরু করলেন, যদি তুমি ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারো, তাহলে দুনিয়াতে তোমার ভালো অবস্থান হবেই হবে। লিসেন ডিয়ারস, একাডেমিক জগতে ভাষার দক্ষতা ছাড়া তোমার কোন মূল্য নেই। জ্ঞানের প্রথম ধাপ হল ভাষা। আর বর্তমান দুনিয়ার জ্ঞানের ভাষার নাম ইংরেজি ।তাই ইংরেজির বিকল্প নাই। ভালো গবেষণা পত্রিকায় ছাপাতে ভাষার দক্ষতা অপরিহার্য। শুধু কি তাই, চাকুরীর বাজারে যাও দেখবে এই ভাষার দক্ষতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ । মতিন স্যার, আরো বললেন, তার ছেলে নাকি ইংরেজি দক্ষতার কারনেই এক লাফে ১২০০০০টাকার চাকুরী পেয়েছে।
স্যার তার বক্তব্য এবার তিন নম্বর ‘টি’ নিয়ে শুরু করলেন। মাই ডিয়ারস, আমাদের শেষ ‘টি’ মানে হল টেকনোলজি। T means Technology. টেকনোলজি মানে কিন্ত আবার প্রচলিত আইটি না। মনে রাখবে টেকনোলজি মানে হল মেথডোলজি। আমরা যাকে সহজ বাংলায় বলি ‘পদ্ধতি’। কিভাবে কাজ করতে হয় তার পদ্ধতি। স্যার বললেন, তোমরা যদি মেথডোলজিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারো, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি তোমরা পৃথিবীর সব জায়গায় সফল হবে। যারা মেথডোলজিতে যত বেশি দক্ষ তারা ততো বেশি নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল । হোক সেটা একাডেমিক অথবা ব্যক্তিগত জীবন।
হে আমার প্রিয় ছাত্ররা, আজ আমি তোমাদের আমার ৩০-৩৫ বছরের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে তিনটি উপদেশ দিলাম। তোমারা যদি শক্তভাবে এগুলো অর্জন করতে পারো আমার বিশ্বাস তোমরা সফল হবে। মতিন স্যার এবার থামলেন। একটু পানি খেয়ে সবার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে …।।
আতিক মুজাহিদ
পিএইচডি গবেষক,
আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ,মালেয়শিয়া।