আল্লামা ইকবালের (১৮৭৭-১৯৩৮) জীবৎকাল থেকেই ‘ইকবালিয়াত’ চর্চা ও রচনার ধারা শুরু হয়ে যায় এবং প্রচুর পরিমাণে তা হতে থাকে। একটা সময় পর্যন্ত এই ধরণের রচনায় কোন-না-কোন নতুন দিক ও আঙ্গিক উপলব্ধ ও আবিস্কৃত হতে থাকে। বর্তমানে তাঁকে নিয়ে রচনা ও চর্চার ক্ষেত্রে পুরনো শরাবকে নতুন বোতলে পরিবেশন করার ব্যাপারটিই যেন বেশিরভাগ ঘটছে।

অতীতে, ইকবালিয়্যাতের অনেক বিশেষজ্ঞ ছিলেন, যারা নিজের প্রতিভা, চিন্তাশক্তি এবং বোঝার সক্ষমতা দিয়ে ইকবালিয়্যাত সম্পর্কিত বিচিত্র দিক-দিগন্ত উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন এবং অবশ্যই তাদের প্রচেষ্টা সফলও হয়েছে। আমাদের হিন্দুস্তানে, মাওলানা আবদুস সালাম নদভী, ড. ইউসুফ হুসেন খান, রশিদ আহমদ সিদ্দিকী এবং আলে আহমদ সরওয়ার প্রমূখ পণ্ডিতবর ব্যক্তিত্ববর্গ তাদের অন্যতম। আর পাকিস্তানে অসংখ্য “ইকবালিয়্যাত বিশেষজ্ঞ” রয়েছেন।

মাওলানা আবুল হাসান আলি নদভির (১৯১৪-১৯৯৯) কীর্তি ও কারনামা এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, এবং ইকবালিয়্যাত’কে উপলব্ধি এবং প্রসারনের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত লক্ষণীয়রূপে হাজির হয়। আলি নদভি ইকবালের মৃত্যুর প্রায় ত্রিশবছর পর একটি নতুন জগতের সাথে আল্লামা ইকবালকে পরিচয় করিয়ে দিতে সক্ষম হন। ইকবালকে তিনি তার বিচক্ষণ মেধা, সম্মোহনী প্রকৃতি এবং সাবলীল ও সুস্পষ্ট কলমের মাধ্যমে সেইসব মানুষের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন; যারা ছিল ইকবালের অধিকাংশ বক্তব্যের সত্যিকার ওডিয়েন্স।

আলি নদভি রচিত “রাওয়াঈয়ে ইকবাল”-এর পরেই আরব ও ইসলামি বিশ্ব ইকবালের অনন্য প্রতিভার সন্ধান লাভ করেন এবং কালামে ইকবাল (ইকবালের বাণী-বক্তব্য) আরবদের অধ্যয়নের অংশ হয়ে ওঠে। ২০১০ সালে আমি (নিবন্ধলেখক) যখন দারুল উলূম দেওবন্দে পড়াশুনা করছিলাম, সেসময় একজন সুপরিচিত আরবি ইসলামি চিন্তাবিদ, সুলেখক এবং বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ “লা তাহজান” এর রচয়িতা ড. আয়াজ আল কারনি দেওবন্দ তাশরিফ এনেছিলেন, তিনি জামে রশিদে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজস্ব আরবীয় স্টাইলে ইকবালের বিখ্যাত কবিতা:

رہ گئی رسمِ اذاں روحِ بلالی نہ رہی

فلسفہ رہ گیا تلقینِ غزالی نہ رہی

এর আরবি অনূবাদটি যখন আলি নদভির বরাতে আবৃত্তি করেন এবং অতঃপর তিনি এর হৃদয়হারী বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন, তখন আমার অনুভব হয়েছে যে, ইকবালকে এর চেয়ে ভালোভাবে না বোঝা সম্ভব, আর না বোঝানো সম্ভব ! আর নিশ্চয়ই এর কৃতিত্বে আলি নদভিই শীর্ষ, যিনি ভাষিক ও সাহিত্যিক দক্ষতা, বৌদ্ধিক ও মননশীল প্রতিভা এবং গভীর ইসলামিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনার অধীনে ইকবালের ছাপ-চিত্র অত্যন্ত বিশ্বস্তরূপে আরববিশ্বে নিয়ে গিয়েছিলেন।

আবুল হাসান আলি নদভি যখন কোনো আরব দেশে ভ্রমণে যেতেন এবং সেখানে বিভিন্ন কন্ফারেস ও সমাবেশে বক্তব্য রাখতেন, তখন আলোচনার বিষয়বস্তুর উপাদানের নির্বাচন বেশিরভাগই তিনি ইকবালের কবিতা থেকে করতেন। আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমে তিনি ইকবালের কোনো কবিতা পড়তেন এবং সে আলোকে আলোচনার ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিতেন। এভাবে করেও তিনি ইকবাল এবং ইকবালের পয়গামকে আরবদের কাছে পরিচিত করে তোলেন।

এছাড়াও, যখন তাঁর “রাওয়াই ইকবাল” এর উর্দু অনুবাদ প্রকাশিত হয়, তখন ইকবালিয়্যাতের ‘উর্দু বিশেষজ্ঞরা’ ইকবাল সম্পর্কে আলি নদভির বোঝা-পড়ার ব্যাপারে স্বীকৃতি প্রদানে একপ্রকার বাধ্য হয়েছিলেন। রশিদ আহমদ সিদ্দিকী “নকশ-ই-ইকবাল” এর উপর যে ভূমিকা লিখেছিলেন, সেটা আলি নদভির প্রতি সুন্দর স্বীকারোক্তির এক অনবদ্য দলিল।

ইকবালিয়্যাতের প্রথম শ্রেণীর বিশেষজ্ঞদের কাতারে আরেকটি নাম অসামান্য গুরুত্বের সাথে উল্লেখ্য, যদিও নানা কারণে আমাদের প্রজন্ম তাঁকে এক্ষেত্রে প্রায়শই জানে না…। এই নামটি হলো আগা শুরাশ কাশ্মীরী (১৯১৭-১৯৭৫)। যিনি ইকবালিয়্যাত’র ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সাথে সাথে স্বাধীনতা-উত্তর প্রায় ত্রিশ বছর সময়কাল যাবৎ ইকবালিয়্যাত নিয়ে রচিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাদির একটি নিরপেক্ষ ও বাস্তববাদী পর্যালোচনা উপস্থাপন করেছিলেন।

ইকবালের সাথে শুরাশের দু’তিন বার সাক্ষাৎ হয়েছিল। একটি ছিল চৌধুরী আফজাল হকের সতীর্থতায়, অন্যটি সাইয়িদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারীর, এবং একবার এরা ছাড়া। এই সময়টা শুরাশের কর্মজীবনের শুরু এবং তাঁর বোধ-চেতনা ও দানিশমন্দির সূচনাপর্ব ছিল। অপরদিকে আল্লামা ইকবাল ছিলেন জীবনের অন্তিম পর্যায়ে। ইকবালের সাথে তার এইসব সাক্ষাৎকালে ইকবালের কথোপকথন এবং মানুষের সাথে তিনি যে-ধরনের আচরণ করেছিলেন, তা দেখে শুরাশের এই অনুভব হয়েছিল যে, ইকবাল তাঁর সমস্ত ফিকরী বুলন্দি ও বৌদ্ধিক উৎকর্ষতা সত্ত্বেও মেজাজগতভাবে ছিলেন রুক্ষ এবং কর্কশ ।

ব্যাপারটা এরকমও হতে পারে যে, শুরাশ যখনই ইকবালের নিকট গিয়েছেন, ঘটনাক্রমে ইকবালকে এমন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। অথবা, জীবনের শেষ সময়ে এসে সত্যিসত্যিই এমন ব্যাপার ইকবালের মধ্যে দেখা দিয়েছিল। সে যাইহোক, শুরাশ তাঁর নিজস্ব একটা অভিমত প্রদান করেছিলেন এবং তাঁর অনন্য সাহিত্যকর্মে এ অভিমত প্রকাশ করে লিখেছিলেন: “আজ অবধি আমার মনে অসামান্য ভক্তি থাকা সত্ত্বেও এই ধারণা পোক্ত যে, তিনি মেজাজগতভাবে নাসিম-ই-সাহার (প্রভাতী মালয়) তথা কোমল-স্বভাবী ছিলেন না”। (বুয়ে গুল, নালায়ে দিল, দূদে চেরাগে মাহফিল)

তবে এটিও সত্যি যে, ব্যবহারিক এবং বৌদ্ধিক জীবনে শুরাশ যে কয়জন ব্যক্তিত্বের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ইকবাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং তিনি সেকথা তাঁর কথায়-লেখায় বহুবার প্রকাশ করেছিলেন। কালামে ইকবালের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ তাঁর অনায়াস মুখস্থ ছিল। ইকবালিয়্যাত সম্পর্কে তিনি ছিলেন খুবই ওয়াকিবহাল এবং সচেতন একজন মানুষ।

শুরাশ উপমহাদেশে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী, একজন মহান বাগ্মী, একজন অতুলনীয় লেখক এবং একজন সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত এবং সুপরিচিত। তবে তিনি ইকবালিয়্যাত কে বোঝার এবং সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সাহিত্যে ও বক্তৃতায় যে অমূল্য কীর্তি আমাদের জন্য রেখে গেছেন, সেটা সচরাচর আমাদের রচনায়, আলোচনায় আসে না। শুরাশ তাঁর ‘চটান’ পত্রিকায় মাঝে মাঝে ইকবালের চিন্তাদর্শনের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে আলোকপাত করেছেন শুধু নয়; বরং পাকিস্তান গঠনের পরে তিনি ইকবাল একাডেমি বা ইকবালকেন্দ্রিক অন্যান্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ইকবালিয়্যাত শিরোনামে প্রকাশিত বইপুস্তকসমূহ অত্যন্ত যত্ন সহকারে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং কেবল অধ্যয়নই করেন নি, বরং তাঁর পত্রিকার পাতায় পাতায় সেই বইগুলির উপর পক্ষপাতমুক্ত বিশ্লেষণও তুলে ধরেছিলেন।

এই বিষয়ে, শুরাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হলো, “ইকবালী মোজরেম”; যাতে তিনি ইকবালিয়্যাত এর উপর রচিত তিনটি গ্রন্থের পর্যালোচনা করেছেন।

প্রথম বইটি মাওলানা আবদুল মাজেদ সালিকের ‘জিকর-ই-ইকবাল’, যা ১৯৫৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এর পৃষ্ঠাসংখ্যা ২৯৬। দ্বিতীয় বইটি আবিদ আলী আবিদের ‘শে’রে ইকবাল’ (ইকবালের কবিতা)। বই লেখকের ভাষ্যমতে, ‘বইটি ইকবালের সৃষ্টিশীল চেতনার পর্যালোচনা।’ বইটি ৬৩৭ পৃষ্ঠার। তৃতীয় বইটি ‘ফিকরে ইকবাল’ বা ইকবালের চিন্তাদর্শন, ৮৬৫ পৃষ্ঠার এ বইয়ের লেখক খলিফা আবদুল হাকিম। এই লেখকের (আব্দুল হাকিম) আরেকটি ছোট পুস্তক আছে ‘ইকবাল আওর মুল্লা’ নামে। এতে তিনি ইকবালের বক্তব্যের আশ্রয়ে বেশ খোলাখুলিভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় শ্রেণীর নানা সমালোচনা করেছেন।

একে তো শুরাশের স্টাইল নিজস্ব রঙ-রসের মিশ্রণে মথিত। পরন্তু ইকবালের সাথে তাঁর আন্তরিক সংযোগ এবং পূর্বোক্ত বইসমূহের অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তুর বহুমাত্রিক চমৎকারিত্ব তাঁর মন্তব্য ও মূল্যায়নগুলিকে আরও চমকপ্রদ ও বর্ণাঢ্য করে তুলেছে এবং বইয়ের প্রতিটি ছত্র তাঁর স্বকীয় শৈলীর বাঙময়তা এবং তাঁর ইকবাল অধ্যয়নের প্রশস্ততার আকর্ষণীয় উদাহরণ উপস্থাপন করেছে!

ইকবালকে নিয়ে “ফয়জান-ই-ইকবাল” শুরাশের দ্বিতীয় বই। এটি ১৯৬৮ সালে নাজরিয়্যা-ই-পাকিস্তান ট্রাস্টের পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানের সুপরিচিত সাংবাদিক মজিদ নিজামী প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। এতে ‘আসতানায়ে ইকবাল’ শিরোনামে বিখ্যাত গবেষক ও সমালোচক ড. সাইয়েদ আব্দুল্লাহ লিখিত একটি পরিচিতমূলক আকর্ষণীয় প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে শুরাশ তাঁর ‘প্রাককথন’-এ ইকবালের চিন্তা-ভাবনা এবং কবিতার পর্যালোচনা পূর্বক ইকবালিয়্যাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে মুল্যবান ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পেশ করেছেন। ইকবালের বৌদ্ধিক ও কাব্যিক উপাদান এবং মুসলমানদের সম্মিলিত চেতনারাজ্যে ইকবালের কালামের কি প্রভাব, এতে তার একটি পূর্ণচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে।

সেই সময় পর্যন্ত, ইকবালিয়্যাত সম্পর্কে পাকিস্তানে প্রকাশ পাওয়া রচনাকর্ম সম্পর্কে শুরাশের মতামত ছিল এরকম: “ইকবালের যথাযথ অধ্যয়ন এখনও পাকিস্তানের বাইরে হচ্ছে। এশীয় মুসলমানদের মধ্যে ইকবালের চিন্তাধারার প্রতি আকর্ষণ আছে বটে, তবে আলোড়ন নেই। এর কারণ দেশগুলির মুসলিম শাসকদের অনৈসলামিক অস্তিত্ব। হিন্দুস্তানে ডক্টর ইউসুফ হুসেন খান, মাওলানা আবদুল সালাম নদভি, অধ্যাপক রশিদ আহমেদ সিদ্দিকী এবং সৈয়দ আবুল হাসান আলি নদভি প্রমুখ যদিও বা ইকবাল সম্পর্কে লিখে থাকেন, তবে তা একান্তই জ্ঞানাগ্রহ ও জ্ঞানচর্চার জায়গা থেকে, তাদের সামনে সরকারি কোনো স্বার্থ উদ্দিষ্ট নয়, আর না তারা কোনও রাজনৈতিক সাফল্যের বিষয়ে আগ্রহী। বিপরীতে, পাকিস্তানে ইকবালের চর্চা হচ্ছে সর্বত্র। ‘ইকবাল-দিবস’ ও বেশ ধুমধামের সাথে উদযাপিত হয়। তাঁর স্মৃতিচারণা ও চিন্তা-ভাবনা কেন্দ্রিক রচিত হয়েছে বইয়ের পর বই। অথচ, স্বাধীনতার একুশ বছর পরে ইকবাল একাডেমির সংখ্যাধিক্যতা সত্ত্বেও অদ্যাবধি কোনও বই প্রকাশিত হয়নি, যা কমপ্লিটলি দেখায় যে, ইকবাল যা চেয়েছিলেন, যেমন চেয়েছিলেন, তা সে বইয়ে মওজুদ রয়েছে কিংবা তাঁর চিন্তাধারার সমকালীন প্রাণপ্রবাহ এতে প্রতিফলিত হয়েছে।” (পৃষ্ঠা, ২৩)

মূল গ্রন্থে অসংখ্য শিরোনামের অধীনে, বিভিন্ন বই, ইকবালের বিভিন্ন ব্যক্তিকে লেখা চিঠিপত্র এবং ইকবালের সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য ও ঘটনা থেকে উদ্ধৃতির মাধ্যমে ইকবালের চিন্তাধারাকে স্পষ্ট করেছেন। এতে ইকবালকে সরাসরি ইকবালের মাধ্যমে বুঝতে পারার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে তৃতীয় আরেটি বই হলো “ইকবালিয়তে-ই-শুরাশ”। ৩৮৪ পৃষ্ঠার এই বইটি মাওলানা মোশতাক আহমদের সংকলিত এবং এর প্রথম সংস্করণটি ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের আহরার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রন্থের প্রারম্ভে সৈয়দ মোহাম্মদ ইউনুস বুখারী এবং অধ্যাপক জাভেদ ইকবাল সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছেন। এরপর সংকলক তাঁর ভূমিকা অংশে শুরাশের ব্যক্তিত্বের আটখানা দিক কে বিভিন্ন বিদ্বান, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বক্তব্য এবং লেখার আলোকে উন্মোচিত করার চেষ্টা করেছেন। ‘ইকবাল এবং শুরাশ’ শিরোনামের অধীনে ইকবালিয়্যাতের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে শোরাশের পরিষেবাগুলি হাইলাইট করা হয়েছে। মূল বইটিতে মোট সাতটি অধ্যায় রয়েছে।

বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে, ইকবালিয়্যাত সম্পর্কিত শুরাশের সংবাদ-পত্র এবং ম্যাগাজিনসমূহকে সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে “ইকবালী মাজরিম” এর উপাদান ছাড়াও, “ইকবাল কে আখেরী দু’সাল”, “আওরাকে গুম গাশতাহ”, “তালমীহাতে ইকবাল”, “ইকবাল আওর মাগরিবী তাহজীব”, “আতিয়া ফয়জিয়া কে খুতূত”, “ইকবাল আওর ভোপাল”, “ইকবাল আওর হায়দরাবাদ” এর মতো বইগুলি সম্পর্কে শুরাশের অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং আস্বাদনীয় মন্তব্যসমূহ সংকলিত করা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে ইকবালিয়্যাতের উপর শুরাশের লিখিত একুশ টি নিবন্ধ রয়েছে। চতুর্থ অধ্যায় কেন্দ্রীয় মজলিস-ই-ইকবালের সভাগুলিতে দেওয়া আটটি বক্তব্যের সংকলন। পঞ্চম অধ্যায়ে ‘ইকবাল এবং কাদিয়ানিয়্যাত’ সম্পর্কিত শুরাশের বিভিন্ন নিবন্ধ রয়েছে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল অবধি পাকিস্তান জুড়ে ‘ইকবাল দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত পোগ্রামগুলোর পর্যালোচনা রয়েছে। সপ্তম অধ্যায়ে বিচিত্র শিরোনামে শুরাশ কর্তৃক ইকবালকে উৎসর্গ করে রচিত চব্বিশটি নজম (ছন্দবদ্ধ পদ্য) এবং ছয়টি ভিন্নভিন্ন ধারার কাব্যগুচ্ছের সংকলন করা হয়েছে। এভাবে ইকবালিয়্যাত নিয়ে লেখা শুরাশের সমস্ত রচনাধারার পর্যালোচনা করে দেখলে এ উপলব্ধি হয় যে, শুরাশ কাশ্মীরী একা ইকবালিয়্যাত নিয়ে এতবেশি লিখেছেন এবং এমন সব দিক ও দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছেন যে, যার উদাহরণ ইকবালিয়্যাত-গবেষক অনেক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত দেখাতে সক্ষম হয় নি।

লেখক পরিচিতি:
মূল: নায়াব হোসাইন
তর্জমা: কাজী একরাম,
শিক্ষার্থী, মাহাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা, ধর্মতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্র।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *