Asrar-e-Khudi - Allama Iqbal
“আসরারে খুদী ” ১৯১৫ সালে প্রথম লাহোরে আত্মপ্রকাশ করে । এর অব্যবহিত পরেই ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি অধ্যাপক ডক্টর আর এ নিকলসন বই খানা প’ড়ে মুগ্ধ হন ও মহাকবি ইকবালের কাছে এর ইংরেজী অনুবাদের প্রার্থনা করে পত্র লেখেন । তার প্রায় পনেরো বছর আগে ইকবালের সাথে ক্যামব্রিজে তাঁর দেখা হয়েছিলো । মহাকবি সানন্দে তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। ডক্টর নিকলসন কিছুকাল অন্য কাজে ব্যাপৃত থাকায় অনুবাদ প্রকাশ করতে কিছুদিন বিলম্ব হয়েছিলো । এই ইংরেজী অনুবাদ ১৯২০ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে । এর বাঙলা অনুবাদে আগাগোড়া ডক্টর নিকলসনের ইংরেজী অনুবাদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে ।
ডক্টর ইকবাল পাশ্চাত্য দেশে অবস্থান কালে আধুনিক দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং এই বিষয়ে মিউনিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি-এইচ-ডি উপাধি লাভ করেন । পারস্যে দর্শন শাস্ত্রের ক্রমবিকাশ সম্বন্ধে তিনি যে জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ লিখেছিলেন, তা’ সুধীসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাে। ১৯০৮ সালে তা’ পুস্তকাকারে বেরিয়েছিল । এরপর থেকে তিনি একটা নিজস্ব দার্শনিক মতবাদ গ’ড়ে তােলেন। সে সম্বন্ধে ডক্টর নিকলসন তাঁর অনুবাদের ভূমিকায় কবির নিজের কথা অনেকখানি উর্ধৃত ক’রে ইকবালের দার্শনিক মতবাদের সুন্দর পরিচয় দিয়েছেন। “আসরে খুদী” গ্রন্থে তার কোনাে ধারাবাহিক আলোচনা পাওয়া না গেলেও তা’তে তাঁর চিন্তাধারা চিত্তাকর্ষকভাবে বিকাশলাভ করেছে। হিন্দু দার্শনিকেরা যেখানে সত্তার একত্বের মতবাদ প্রচার করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছেন মস্তিষ্কের দিকে, ইকবাল সেখানে আরো বিপজ্জনক পন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি ফারসী কবিদের মতাে লক্ষ্য করেছেন অন্তরের দিকে । তিনি কারুর চাইতে ছােট কবি নন, তাঁর কাব্য মানুষের মাঝে একটা অপূর্ব প্রেরণা জাগিয়ে দেয়,—তাঁর বাণী শুধু ভারতীয় মুসলিমের জন্য নয়, বিশ্বমুসলিমের জন্য । তিনি সংগতভাবেই “আসৱারে খুদী” হিন্দী অথবা উর্দু ভাষায় না লিখে ফারসী ভাষায় লিখেছেন । কারণ ফারসী শিক্ষিত মুসলিম সমাজে বহু জনসমাদৃত ভাষা । দার্শনিক মতবাদ প্রকাশের জন্যও এ ভাষা অতি সমৃদ্ধ ও আকর্ষণযােগ্য বটে ।
” প্রয়োজন নেই আমার আজকের মানুষের কর্ণের,
আমি বাণী ,
অনাগত যুগের কবির ।”
আবার :
“আমার সিনাই দগ্ধ হয় সেই মুসার জন্য,
যে আসবে ভবিষ্যতে ।”
ফারসী কবিদের মতো তিনি সাকীকে আহ্বান করেছেন তাঁর পিয়ালা পূর্ণ ক’রে দিতে সুরারসে আর চন্দ্রলােক এনে দিতে তাঁর ‘চিন্তার অন্ধকার নিশীথিনীর বুকে’-
“যেনাে আমি পারি
ফিরিয়ে আনতে মুসাফিরকে তার গৃহে,-
অলস্য -পরায়ণদের মাঝে আনতে পারি ।
অশান্ত ব্যাকুলতা,
যেন এগিয়ে যেতে পারি উৎসাহের সাথে
নূতনের সন্ধানে –
আর পরিচিত হতে পারি
নূতনের অগ্রদূত রূপে ।”
প্রথমেই আমরা ইকবাল -দর্শনের চরম লক্ষ্যের বিষয় আলেচনা করতে পারি । এ আলোচনার ফলে আমরা তার লক্ষ্যবস্তুটি নির্দেশ করতে পারলে তাঁর দর্শনের ধারা স্থির করতে পারবো । ইকবাল ইউরােপীয় সাহিত্যের সুধাপাত্ৰ উজাড় করে পান করেছিলেন । তাঁর দর্শন নিটশে ও বার্গসঁর কাছে অনেকখানি ঋণী। তাঁর কাব্য মনে করিয়ে দেয় মহাকবি শেলীর ভাবালুতা । তথাপি তিনি চিন্তা করেছেন ও উপলব্ধি করেছেন সত্যিকার মুসলমানের দৃষ্টিভংগিতে । সেই জন্যই তাঁর দর্শন এত গভীরভাবে প্রভাবান্বিত করেছে মানুষকে; তিনি ছিলেন আগাগােড়া ধর্মানুপ্রাণিত, স্বপ্ন দেখতেন এক নব মিলনক্ষেত্রের যেখানে বিশ্বমুসলিম দেশবর্ণের বৈষম্যের উর্ধে হবে ঐক্যসূত্রে গ্রথিত—পরিপূর্ণ এক । জাতীয়তাবাদ বা সাম্রাজ্যবাদের স্থান ছিলাে না তাঁর কাছে। এ সব মতবাদ তাঁর মতে ‘হরণ করে আমাদের স্বর্গ-সুখ’ আমাদের পারস্পরিক অনুভূতির আঁখিকে করে অন্ধ, ভ্রাতৃত্বের উপলব্ধিকে করে ধ্বংস আর বপন করে সংগ্রামের তিক্ত বীজ, তিনি কল্পনা করতেন একটা বিশ্বের ধর্ম-দ্বারা শাসিত, রাজনীতি দ্বারা নয়, নিন্দা করতেন তাদেরকে, যারা মিথ্যা দেবতার পূজারী—যারা অন্ধ করেছে অনেককে । ইকবালের চিন্তাধারার অলােচনা করলে দেখা যায় যে, তিনি ধর্ম বল্তে ইসলামকে বুঝতেন।
একটা মুক্ত-স্বাধীন মুসলিম ভ্রাতৃত্ব -কেবলা যার কাবা, সংঘবদ্ধ এক আল্লার প্রেমে আর তাঁর প্রিয় পয়গাম্বরের ভক্তিতে—এই ছিলাে ইকবালের আদর্শ । তিনি এই আদর্শ প্রচার করেছেন অতুলনীয় আন্তরিকতার সাথে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ-“আসরারে খুদী” ও “রামুজে বেখুদীতে”। তিনি তাতে দেখিয়েছেন—কি করে এ লক্ষ্যে পোঁছতে পারা যায় । “আসরারে খুদী”মুসলিম মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ও ‘রমুজে বেখুদী’ মুসলিম জাতির জাতীয় জীবনের প্রেরণার উৎস ।
কোরাণ ও হযরত মুহাম্মদের (দ) আদর্শের দিকে প্রত্যাবর্তণের জন্য বহু আন্দোলন আগেও হয়েছিলো, কিন্তু তাতে সাড়া মিলেছে খুব কমই। ইকবাল অবতীর্ণ হোলেন পাশ্চাত্য দর্শনের বিপ্লবাত্মক শক্তি নিয়ে । তিনি আশা করতেন ও আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতেন যে, তাঁর দর্শন এই আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে ও তার বিজয় এনে দেবে। তাঁর মতে হিন্দু জ্ঞানবাদ ও মুসলিম অদ্বৈতবাদ ধবংস করেছে কর্মশক্তিকে—যার পূর্ণ বিকাশ বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে ও প্রকৃতির পূর্ণ উপলব্ধিতে । এই কর্মশক্তিই কীর্তিমান করেছে পাশ্চাত্য জাতিসমূহকে, বিশেষ করে ইংরেজ জাতিকে । এই শক্তি নির্ভর করে একটি মাত্র বিশ্বাসের উপর যে, ‘খুদী’ ( অহম) সত্য —শুধু অন্তরের ভ্রান্তিমাত্র নয় । মহাকবি ইকবাল তাই নিজেকে পূর্ণ শক্তিতে ভাববাদী দার্শনিক ও মিথ্যা রহস্য বাদী কবি-সাহিত্যিকদের মতের বিরদ্ধে নিয়োজিত করেছিলেন—যারা ইসলামের ধ্বংসকারী । তাঁর মতে মুসলিম আবার মুক্ত-অজাদ হোতে পারে—শক্তিমান হােতে পারে—শুধু আত্মবিশ্বাস,
আত্মপ্রকাশ ও আত্মশক্তির বর্ধন দ্বারা । তিনি হাফিযের মুগ্ধকর। কলােচ্ছ্বাস থেকে আবর্তন করতে বলেন জালাল উদ্দীন রুমীর নীতিবাদে,—প্লেটোবাদীর তন্দ্রালস ইসলাম থেকে সতেজ, সজীব, কর্মময় অদ্বৈতবাদে, যা একদিন অনুপ্রেরণা দিয়েছিলাে মহাপুরুষ হয়রত মুহাম্মদকে আর অস্তিত্বে আনয়ন করেছিল ইসলামের মতো মহাধর্মকে ।
ইকবালের দর্শন ধর্মদর্শন। কিন্তু দর্শনকে কোনো দিন তিনি ধর্মের পরিচারিকা বলে মনে করেননি ।তাঁর মতে ব্যক্তির পূর্ণ বিকাশেই সমাজের প্রাণপ্রতিষ্ঠা এবং তিনি আদর্শ সমাজ বলতে বুঝতেন হযরত মুহাম্মদের (দ)প্রচারিত সত্যিকার ইসলাম । প্রত্যেক মুসলিম পূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে সাহায্য করছে বিশ্বের বুকে আল্লাহর শান্তির রাজ্য স্থাপনে– এই ছিলো তার ধারণা। “রমুজে বেখুদী” গ্রন্থে তাঁর এই মতবাদ প্রচারিত হয়েছে।
“আসরারে খুদীর” ছন্দ ও রচনভংগি রুমীর মসনভী কাব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । ইকবালের সাথে জালাল উদ্দীন রুমীর সম্বন্ধ কতোখানি, তা’ বলতে গেলে দান্তের সাথে ভার্জিলের সম্বন্ধের কথাই বলতে হয় । “আসরারে খুদীর” পূর্বাভাস অধ্যায়ে কবি সুন্দর বর্ণনা করেছেন, কি ভাবে জালাল উদ্দীন রুমী স্বপ্নে অবতীর্ণ হয়ে তাঁকে আদেশ করলেন উত্থান করতে আর সংগীতের যাদুতে বিশ্বকে বিমুগ্ধ করতে ।
”আমি জেগে উঠলাম,
যেমন করে জাগে সংগীত তন্ত্রী থেকে,
নির্মাণ করতে এক ফিরদাউস
মানব- কর্ণের জন্য ।”
ইকবাল হাফিযের প্রদর্শিত সুফীবাদকে যেমন সমর্থন করতেন না, তেমনি তিনি শ্রদ্ধায় অবনমিত হােতেন ইরানের বিখ্যাত কবি-দার্শনিক জালাল উদ্দিন রুমির স্বচ্ছ- গম্ভীর মহিমার কাছে ,-যদিও তিনি রুমীর আত্ম -অস্বীকার মতবাদ সমর্থন করেননি কোনোদিন ।
ডক্টর নিকলসনের অনুরোধে আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল তাঁর দার্শনিক কাব্য “আসরারে খুদী”তে প্রচারিত মতবাদ সম্পর্কে একটা বর্ণনা দিয়েছিলেন ।যদিও তাঁর এ বিবৃতি খুব ব্যস্ততার মধ্যে লেখা তথাপি এর নিজস্ব ক্ষমতা ও মৌলিকতা ছাড়া এই কাব্যের মতবাদ ও যুক্তি গুলি পাঠকের কাছে স্বচ্ছ করে তোলাই এর সার্থকতা । নিন্মে কবির বিবৃতিটির অনুবাদ দেওয়া গেলো ।
আসরারে খুদী'র দার্শনিক ভিত্তি :
“ভূয়োদর্শনের মূল সীমাবদ্ধ কেন্দ্রে এবং তার একটা সীমাবদ্ধ প্রকট রূপ লাভ করা প্রয়োজন -এই মতবাদ শেষ পর্যন্ত অব্যাখ্যেয় ।” এ হচ্ছে প্রফেসর ব্রাডলীর কথা । কিন্তু ভূয়োদর্শনের এই দুর্বোধ্য কেন্দ্র থেকে শুরু ক’রে তিনি এমন এক ঐক্যে এসে সমাপ্তির রেখা টেনেছেন ,যাকে তিনি বলেছেন পরমাত্মা (Absolute) এবং যার ভেতরে সেই সীমাবদ্ধ কেন্দ্র তার সীমাবন্ধন ও স্পষ্টতা হারিয়ে ফেলে । তাঁর মতে এই সীমাবদ্ধ কেন্দ্র শুধু একটা অনুভূতিমাত্র । বাস্তবের স্বাদ পাওয়া যা
সর্বান্তনির্বেশে ;এবং যখন সকল সীমাবদ্ধতা আপেক্ষিকতা দোষে সংক্রামিত,- এই তার মত । এর মানে আপেক্ষিকতা হচ্ছে শুধু ভ্রান্তি মাত্র ।আমার মতে ,ভূয়োদর্শনের এই দুর্বোধ্য সীমাবদ্ধ কেন্দ্রই হচ্ছে বিশ্বের মূল সত্য । সকল জীবনই স্বতন্ত্র সত্তা ;বিশ্বজীবন ব’লে কোন বস্তুই নেই ।আল্লাহ নিজে এক অবিভাজ্য সত্তা;
তিনি হচ্ছেন অদ্বিতীয় অবিভাজ্য সত্তা । [১]
ডক্টর ম্যাকটেগার্টের মতে বিশ্ব হচ্ছে স্বতন্ত্র সত্তাসমূহের সমষ্টি; কিন্তু আমাদের এ কথাও বলতে হবে অবশ্যই যে,এর ভেতরে যে সুশৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা আমরা লক্ষ্য করি ,তা চিরন্তন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় ।তা হচ্ছে স্বাভাবিক ও সচেতন প্রচেষ্টার পরিনতি । আমরা অনন্ত শূন্য থেকে ক্রমাগত পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করি ও এই পরিণতির সহায়তা করি । যাদেরকে নিয়ে এই সমষ্টি, তারা চিরস্থির নয় । নব নব সত্তা জন্মলাভ করছে এই মহাকার্যে সহযোগিতা করবার জন্যে । কাজেই এ বিশ্ব একটি সম্পূর্ণ নাট্যাংক নহে;ইহা এখনো সমগ্রে পৌঁছায়নি । সৃষ্টির লীলা আজো অব্যাহতভাবে চলছে ;এবং মানুষও তাতে ততোটা অংশ গ্রহণ করছে,যতোটা সে এই অন্তহীন কোলাহলকে নিয়ন্ত্রণাধীন করবার সাহায্য করছে । কোরান শরীফ আল্লাহ ব্যতীত অন্য স্রষ্টার সম্ভাবনা ঘোষণা করেছে ।[২]
“স্পষ্টতঃ মানব ও বিশ্ব সম্বন্ধে এই ধারণা ইংরেজ নব-হেগেলীয় দার্শনিকগণের ও সকল প্রকার অদ্বৈত- পূজারী সুফিবাদের মত বিরোধী । তাদের মতে বিশ্বজীবন বা বিশ্ব আত্মার মধ্যে সমাহিত হওয়া জীবনের শেষ লক্ষ্য বা মানবের মুক্তি পন্থা । [৩] মানবের নৈতিক বা ধর্মীয় আদর্শ আত্ম- অস্বীকারের নয় , বরং আত্ম -বিশ্বাসে ;এবং সে তার লক্ষ্যস্থলে পৌঁছায় অধিকতর স্বাতন্ত্র্য লাভ করে । মহামানুষ হযরত মুহম্মদ স. বলেছেন “তাখাল্লাকু বিআখলাকিল্লাহ- আল্লাহর গুজরাজিতে সমৃদ্ধ হও । “এমনি করে মানুষ পূর্ণতা লাভ করে ক্রমশঃ পূর্ণতম স্বতন্ত্র সত্তার গুণ অর্জন করে । তা ‘হোলে জীবন কি ? জীবন হচ্ছে স্বতন্ত্র সত্তা ,এর উচ্চতম স্তর হচ্ছে খুদী বা অহম-জ্ঞান, যাতে সেই স্বতন্ত্র সত্তা উপনীত হয় আত্মসমাহিত সীমাবদ্ধ কেন্দ্রে ;কিন্তু তখনো সে পরিপূর্ণ সত্তা নয় ।আল্লাহ থেকে তার দূরত্ব যতো বেশী সত্তা তার তো অপূর্ণ । আল্লাহর নৈকট্য যে আত্মা লাভ করে , সে হয় পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন । সে পূর্ণ রূপে আল্লাহতে সমাহিত হয় না । বরং আল্লাহ তাঁর ব্যক্তিত্বের মধ্যে মিশে যান ।[৪]
সত্যিকার মানুষ শুধু বস্তর জগতকে তাঁর ভেতর মিশিয়ে নেন না,আত্মার উপরে প্রভুত্ব- সম্পন্ন হয়ে তিনি আল্লাকে তাঁর আত্মার ভেতর লীন করে দেন।জীবন একটা সমন্বয়শীল অগ্রগতি । সে তার পথের বন্ধনকে দূরীভূত করে দেয় তাদেরকে আপনার ভেতর গ্রহণ করে ।তার নির্যাস হচ্ছে ক্রমাগত আকাঙ্ক্ষা ও আদর্শ- সৃষ্টিতে; এবং তার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য আবিষ্কার করেছে অথবা আপনার ভেতর থেকে সৃষ্টি করেছে কতগুলি যন্ত্র- বোধ ,জ্ঞান প্রভৃতি, যাতে সহায়তা করছে তাকে সকল বাধা-বন্ধনকে গ্রাস করতে ।জীবনের পথে সব চাইতে বড় বাধা হচ্ছে বস্ত -প্রকৃতি ,প্রকৃতি তথাপি একটা অপকৃষ্ট কিছু নয় ,বরং সে সহায়তা করে জীবনের অন্তর্নিহিত শক্তিকে সপ্রকাশ করতে। “আত্মা মুক্তি লাভ করে তার পথের সকল বাধা দূরীকরণ দ্বারা ।ইহা আংশিকভাবে মুক্ত,আংশিকভাবে অবধারিত, [৫] এবং সে পূর্ণতম মুক্তিতে পৌঁছে মুক্ততম সত্তা আল্লার সান্নিধ্য লাভ করে । এক কথায় জীবন হচ্ছে মুক্তি- সংগ্রাম ।
আত্মা এবং ব্যক্তিত্বের ক্রমবাদ:
“মানুষের ভেতরে জীবন- কেন্দ্র পরিণত হয় আত্মা বা ব্যক্তিতে । ব্যক্তিত্ব হচ্ছে সম্প্রসারণশীলতায় এবং তা বজায় থাকে ততোদিন ,যতোদিন এই ভাবে সংরক্ষিত হয় । যদি এই সম্প্রসারণশীলতা সংরক্ষিত না হয় তা হোলেই আসে শ্লথ । যতক্ষণ ব্যক্তিত্ব বা সম্প্রসারণশীল মনোবৃত্তি মানব-জীবনের শ্রেষ্ঠতম বিশেষত্ব বলে বিবেচিত হয়, ততোক্ষণ সে শ্লথ মনোভাব আসতে দেয় না তার নিজের মধ্যে । যা কিছু এই সম্প্রসারণশীল মনোবৃত্তিকে বজায় রাখে,তাই আমাদেরকে করে তোলে অমরতার দাবীদার । এমনি করেই ব্যক্তিত্বের ধারণা আমাদেরকে এনে দেয় একটা মা-বোধ (Standard of value) ।ভালোমন্দের প্রশ্নের সমাধান হয় তাতেই ।ব্যক্তিকে সংরক্ষিত করে যা’কিছু, তাই উৎকৃষ্ট; আর যা কিছু দুর্বল করে তাকে,তাই অপকৃষ্ট । ব্যক্তিত্বের মূল তথ্য দিয়ে বিচার করতে হবে সব কলা [৬] ধর্ম ও নীতিবাদকে। মৎকর্তৃক প্লেটোর সমালোচনা [৭]সেই সব দার্শনিক মতবাদের বিরুদ্ধে, যা জীবনের চাইতে মৃত্যুকে করে তোলে বৃহত্তর আদর্শ- যে মতবাদ জীবনের বৃহত্তম বিঘ্ন -বস্তকে করে অস্বীকার এবং আমাদেরকে পলায়ন করতে বলে তা থেকে- তাকে গ্রাস করবার পরিবর্তে ।
“আত্মার মুক্তি সম্বন্ধে যেমন আমাদেরকে বস্ত-সমস্যার সম্মুখীন হোতে হয়,ঠিক তেমনি তার অমরতা সম্বন্ধে কালের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ।[৮] বার্গসেঁর মতে জীবন একটি অনন্ত রেখা নয় -যাকে অতিক্রম করতে হয় আমাদের ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় । কালের এই ধারণা বিকৃত । সত্যিকার সময়ের কোন দৈর্ঘ্যই নেই । ব্যক্তিগত অমরতা একটা আকাঙ্ক্ষা ,তুমি তা লাভ করতে পারো,যদি তুমি তা লাভের জন্য উদ্যমশীল হও ।তা নির্ভর করে আমাদের জীবনে এমন ধারণা ও কর্মপন্থা অবলম্বনের উপর,যা জীবনকে পরিচালিত করে বিস্তৃতির দিকে । বৌদ্ধ মতবাদ , পারস্য সুফিবাদ ও নীতিবাদের সম্মিলিত আকার আমাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে না । কিন্তু এসব মতবাদ সম্পূর্ণ নিরর্থক নয় ,কারণ কর্মের পরে কিছুকাল আমাদের প্রয়োজন হয় নিদ্রাকর ঔষধের ।জীবনে দিবসের মধ্যে এই সকল ধারণা ও কর্ম হচ্ছে রাত্রির মতো ।যদি আমাদের কর্মধারা সম্প্রসারণশীলতার সহায়ক হয় ,তা হলে মৃত্যুর আঘাতও তাকে অভিভূত করে না । মৃত্যুর পরে একটা শ্লথনের অবকাশ আসতে পারে ,- যাকে কোরাণ বলেছে বরজখ বা রোজক্বিয়ামতের (পূনর্জাগরণ দিবস)পূর্ববর্তী কাল।শুধু সেই সকল আত্মাই এই অবস্থা থেকে জাগ্রত হবে ,যারা বর্তমান জীবনের সদ্ব্যবহার করেছে । যদিও জীবন তার ক্রম-বিবর্তনে পুণরাবৃত্ত হয় না ,তথাপি বার্গেসেঁর দৈহিক পূনর্জাগরণের মতবাদ ওয়াইলডন কারের মতে সম্পূর্ণ সম্ভব । সময়কে মুহূর্তে বিভক্ত করে আমরা তাকে সীমাবদ্ধ করি এবং পরে তাকে জয় করা দুরুহ বোধ করি । সময়ের সত্যিকার প্রকৃতি উপলব্ধি করা যায়, যখন আমরা দৃষ্টি নিবন্ধ করি আমাদের গভীরতম আত্মার দিকে । সত্যিকার সময় হচ্ছে জীবন নিজেই ,যা আপনাকে সংরক্ষিত করতে পারে সেই নির্দিষ্ট সম্প্রসারণশীলতা (ব্যক্তিত্ব) বজায় রাখার ভেতর দিয়ে । আমরা সময়ের অধীন ,যতোক্ষণ আমরা সময়কে দেখি সীমাবদ্ধরূপে । সীমাবদ্ধ কাল হচ্ছে একটা নিগড় ,যা জীবন তার নিজের জন্য আবিষ্কার করেছে বর্তমান পারিপার্শ্বিকতাকে হজম করার জন্যে । প্রকৃতপক্ষে, আমরা কালের সীমার ঊর্ধে, আমাদের জীবনে কালের সীমাহীনতা উপলব্ধি করা যেতে পারে ।
আত্মার শিক্ষা:
“আত্মা সংরক্ষিত হয় প্রেম (ইশক)দ্বারা । এই শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত এবং সকল কিছুকে আত্ম-সমাহিত করা বা গ্রহণ করার ইচ্ছা বুঝায় । এর উচ্চতম রূপ হচ্ছে মূল্য বা আদর্শ সৃষ্টি ও তাকে উপলব্ধি করায় । প্রেম মহান করে তোলে প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদকে ।সর্বোত্তম অবিভাজ্য সত্তাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা মহান করে তোলে অনুসন্ধিৎসুকে এবং তার প্রেমাষ্পদের গুণ সপ্রকাশ করে ,কারণ অন্য কিছুতেই অনুসন্ধিৎসুর প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করে না । যেমন প্রেম আত্মাকে করে শক্তিমান,তেমনি ভিক্ষাবৃত্তি (সু’আল)তাকে করে দুর্বল । যা কিছু ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ব্যতীত লব্ধ, তা সবই সু’আলের অন্তর্গত । যে ধনীপুত্র পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারী ,সেও ভিক্ষাজীবি, তেমনি যারা অন্যের চিন্তাকে নিজের মনে করে । আত্মাকে সংরক্ষিত করার জন্য আমাদেরকে করতে হবে প্রেমের চাষ -সমন্বয়শীল কর্মপন্থা অবলম্বন ও সর্বপ্রকার ভিক্ষাবৃত্তি বা কর্মহীনতা বর্জন । সমন্বয়শীল কর্মের শিক্ষা দিয়ে গেছেন মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ স. -অন্ততঃ প্রত্যেক মুসলিমকে ।
“কাব্যের একাংশে [৯] আমি মুসলিম নীতিবাদের মূলভিত্তির আলোচনা করেছি এবং ব্যক্তিত্বের ধারণার অর্থ সপ্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি । আত্মা তার পূর্ণতার গতিপথে তিনটি স্তর অতিক্রম করে থাকেঃ-
(ক) আইন ও নিয়মের অনুবর্তিতা
(খ) আত্মশাসন -আত্ম -চেতনার উচ্চতম রূপ,
(গ) আল্লাহর প্রতিনিধি ।
” ঐশী প্রতিনিধিত্ব বা নিআবত-ই-ইলাহী পৃথিবীতে মানবতার পূর্ণ বিকাশের তৃতীয় বা সর্বশেষ স্তর । নায়েব হচ্ছেন পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি । তিনি হচ্ছেন পরিপূর্ণ আত্মা, মানবতার পূর্ণ বিকাশ [১০],জীবনে দেহ ও মনের সর্বোচ্চ সীমা ;মানসিক জীবনে সকল অনৈক্যকে আনেন সাম্যে । উচ্চতম শক্তি ঐক্যসূত্রে গ্রথিত হয় উচ্চতম জ্ঞানের সাথে । তাঁর জীবনে চিন্তায় ও কর্মে সহজাত প্রবৃত্তি ও বিচারশক্তি এক হয়ে যায় । তিনি মানবতা -বৃক্ষের শেষ ফল; এবং সকল বেদনাত্মক বিবর্তন সমর্থিত হয় তাঁর আগমনের জন্য । তিনি মানব -জাতির সত্যিকার শাসক ;রাজ্য তার পৃথিবীতে আল্লাহর রাজ্য । তাঁর প্রকৃতির প্রাচুর্য থেকে তিনি জীবন- সম্পদ বিতরণ করেন অন্যের উপর এবং নিকটতর করেন তাদেরকে । যতোই আমরা অগ্রসর হই বিবর্তনের পথে ,তাঁর নিকটতর হই আমরা ততোই । তাঁর নিকটতর হয়ে আমরা উন্নীত করি নিজেদেরকে জীবনমানের । মানবতার মানসিক ও দৈহিক ক্রমবর্ধমান তার জন্মের পূর্বাবস্থা । বর্তমানে তিনি শুধু একটি আদর্শ কিন্তু মানবতার ক্রমবিবর্তন এমন এক জাতির জন্মের সম্ভাবনা আনছে যারা কম বেশী করে অতুলনীয় সত্তার সমন্বয়ে হবে তাঁর যোগ্য জনকজননী । এইভাবে পৃথিবীতে আল্লাহর রাজ্য মানে কম বেশি করে অতুলনীয় সত্তাসমূহের এক সাধারণতন্ত্র ,যার নায়ক পৃথিবীর সর্বোত্তম স্বতন্ত্র সত্তা । নীটশের এমনি একটা আদর্শ জাতির ধারণা ছিলো ,কিন্তু তার নাস্তিকতা ও অভিজাত মতবাদ সমস্ত ধারণাটাকে বিনষ্ট করেছিলো ।”
“আসূরারে খুদী” পাঠকদের মনের উপর নিশ্চিত ছায়াপাত করবে । এই কাব্যের দর্শন একটু আলাদাভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। এর চিন্তা ও বর্ণনার উচ্চতা অস্পষ্টতর, এর ন্যায়ের ঔজ্জ্বল্য ভাব ও কল্পনাকে করে অনুজ্জ্বল এবং তা হৃদয়কে জয় করে মনের অধিকার লাভের পূর্বেই । এই কাব্যের শিল্পনৈপুণ্য অনন্য-সাধারণ । এর অনেক অধ্যায়। পাঠকের মনে এমনভাবে অংকিত হয়ে যায় যে, খুব সহজে ভােলা যায় না । আদর্শ মানুষের বর্ণনা ও শেষ প্রার্থনাটি এদিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য । জালাল উদ্দীন রুমীর মতাে মুহাম্মদ ইকবালও তাঁর বর্ণনাকে সতেজ করবার জন্য কাহিনীর অবতারণা করেছেন সর্বত্র।
ইকবালের প্রশংসায় বলা হয়েছে,—“ইকবাল আমাদের মাঝে এসেছেন মসিহের মতো, তিনি মৃতকে দান করেছেন জীবন-ধারা।” ইকবালের কাব্যের মূল সুরটি অনেক পাঠকের কাছে অস্পষ্ট মনে হয়, কিন্তু কবির চিন্তাধারার সাথে নিবিড় পরিচয় ঘটলে সে অস্পষ্টতা আর থাকে না। তাঁর কথা আরাে বলা হয়েছে,—“তিনি তাঁর যুগের মানুষ, তিনি অনাগত যুগেরও মানুষ, আরাে তিনি তাঁর নিজের যুগের সাথে ঐক্যহীন মানুষ।” একথা অবিসম্বাদিত সত্য যে, ইকবালের দর্শন-ধারা মুসলিম জাতির জীবনে একটা গতির সূচনা করেছে।
বাঙালী পাঠকদের কাছে ইবালের দার্শনিক মতবাদ সুপরিচিত করে তােলাই এ অনুবাদের লক্ষ্য । মূলকাব্যের ভাব বজায় রাখার ‘জন্যই গদ্য-কাব্যে এর অনুবাদ করেছি, একে ছন্দোবদ্ধ করতে চেষ্টা করিনি । যদি এ অনুবাদ পাঠককে আনন্দ দান করে, তার কৃতিত্ব মহাকবি ইকবালের ; আর যদি কোথাও তাদেরকে আশানুরূপ আনন্দ দান না করে, সে ক্রটি অনুবাদকের । মূল গ্রন্থ প্রকাশের পর তিন দশক অতীত হয়ে গেলাে । এর মধ্যে “অাসরারে খুদী”র বাঙলা অনুবাদ প্রকাশের কোনাে প্রচেষ্টা হয়েছে বলে জানি না। মূল গ্রন্থ প্রকাশের পাঁচ বছরের মধ্যে বিভিন্ন ইউরােপীয় ভাষায় এর অংশ-বিশেষ অনুবাদ করা হয়েছে এবং একমাত্র ইংরেজী ভাষায়ই এর সম্পূর্ণ অনুবাদ ইতিপূর্বে বেরিয়েছে । বাঙলা সাহিত্যের এই অভাব পূরণের জন্য আমার এ দীন প্রচেষ্টা । সাফল্য বিচারের ভার আমার সহৃদয় পাঠকপাঠিকাদের উপর ।
কবি-বন্ধু আহসান হাবীবের অনুপ্রেরণায় এ অনুবাদ আরম্ভ করি । আজ এ অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশের দিনে তাঁকে জানাই আমার আন্তরিক প্রীতি । কবি গোলাম মােস্তফা, ফরুরখ আহমদ, মতিউল ইসলাম, অশােকচন্দ্র রায়, জিতেন্দ্র চন্দ্র মজুমদার প্রমুখ সুধীগণ আমায় উৎসাহ দিয়েছেন। ফররুখ আহমদ মহাকবি ইকবালের উদ্দেশ্যে একটি কবিতা লিখে দিয়ে আমায় গৌরবান্বিত করেছেন । পরম স্নেহভাজন কিশাের বন্ধুদের কাছ থেকেও যথেষ্ট উৎসাহ পেয়েছি। সানন্দে এঁদের সকলের ঋণ স্বীকার করছি । অগ্রজপ্রতীম মওলবী আবদুল জব্বার সাহেব এর মুদ্রণের ব্যয়ভার বহন করেছেন । তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রীতি । ইকবাল সাহিত্যের রস-পিপাসুগণকে এ অনুবাদ আনন্দ দান করুলেই আমার শ্রম সার্থক ।
পদটিকা :
[১] ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতবাদ
[২] মহিমা সেই আল্লাহর যিনি স্রষ্টাসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।কুরআন
[৩] মহাকবি ইকবালের “ইসলাম এন্ড মিস্টিসিজম “
[৪] খুদীর পঞ্চদশ অধ্যায় [মুসলিম জীবনের উদ্দেশ্য আল্লাহর বানীকে স্বার্থক করা । জেহাদের মূলে যদি থাকে রাজ্যলাভ ,তা হোলে তা ইসলামের বিধি -বহির্ভূত] ।
[৫]সত্যিকার ঈমান হচ্ছে অদৃষ্ট ও মুক্ত -বুদ্ধির মধ্যমপন্থায় । হাদীস
[৬] মহাকবি ইকবালের মতে মানব জীবনের সকল কর্মশক্তির শেষ লক্ষ্য হচ্ছে এক জীবন মহিমান্বিত শক্তিমান উচ্ছ্বসিত ।
[৭] খুদীর সপ্তম অধ্যায়- প্লেটো যার চিন্তাধারা গভীর ভাবে প্রভাবান্বিত করেছে ইসলামের আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা ও সাহিত্যকে মেনে চলতেন মেষের ধর্ম । আমাদেরকে আত্মসংরক্ষন করতে হবে তাঁর প্রচারিত শিক্ষার বিরুদ্ধে ।
[৮] সপ্তদশ অধ্যায়- সময় হচ্ছে তরবারি
[৯] আত্মার শিক্ষার তিনটি স্তর আছে :আইন ও নিয়মের অনুবর্তিতা, আত্মশাসন আর আল্লার প্রতিনিধিত্ব ।
[১০] ২:২৮ কুরআন ।
লেখক পরিচিতি : সৈয়দ আবদুল মান্নান
আজাদ কার্যলয়
কলিকাতা
নভেম্বর
১৯৪৫
আসরারে খুদী- মুহাম্মদ ইকবাল (প্রথম তর্জমা)ভূমিকা