The Reconstruction of Religious Thought in Islam-Muhammad Iqbal
ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন-মুহাম্মদ ইকবাল
আধুনিক মনোবিজ্ঞানী মরমি চেতনার বিষয়বস্তু সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা সবেমাত্র উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। যুক্তি-বহির্ভূত চেতনার অব যথার্থ ও কার্যকর কোনোবৈজ্ঞানিক উপায় এখনো আমাদের আয়ত্তাধীন হয়নি। আমার হাতে যেটুকু সময় আছে তাতে সারবত্তা ও স্পষ্টতার দিক দিয়ে মরমি চেতনার ইতিহাস ও তার বিভিন্ন স্তরমাত্রা সম্বন্ধে ব্যাপক আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া সম্ভব নয়।
মরমী অভিজ্ঞতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো সম্বন্ধেই শুধু সাধারণ কয়েকটি মন্তব্য আমি এখানে পেশ করব।
১. প্রথম লক্ষণীয় বিষয় হলো এই অভিজ্ঞতার প্রত্যক্ষতা। এদিক দিয়ে জ্ঞানের মাধ্যম হিসেবে অন্যান্য অভিজ্ঞতার সঙ্গে অন্যান্য অভিজ্ঞতার কোনো পার্থক্য নেই। বস্তুত সব অভিজ্ঞতাই প্রত্যক্ষ। বহির্জগতের জ্ঞানের জন্য যেমন আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতাগুলো ইন্দ্রিনির্ভর বিশ্লেষণ-সাপেক্ষ, আল্লাহ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের জন্যও তেমনি মরমি অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ প্রয়োজন। মরমি অভিজ্ঞতার অব্যবহিতত্ত্ব বা প্রত্যক্ষতার অর্থ হচ্ছে এই যে আমরা অন্যান্য বস্তুকে যেমন জানি, আল্লাহ কে তেমনি জানি। আল্লাহ কোনো গানিতিক সত্তা বা পরস্পর সংযুক্ত কোনো মৌলিক বস্তু কিংবা অভিজ্ঞতা-নিরপেক্ষ ধারণা নয়।
২. দ্বিতীয় বিষয় হলো মরমি অভিজ্ঞতার অবিভাজ্য সমগ্রতা। যখন আমি আমার সম্মুখস্থ টেবিলটার অভিজ্ঞতা লাভ করি, তখন টেবিল সম্পর্কে একই অভিজ্ঞতার অসংখ্য অভিজ্ঞতার সূত্র মিশে যায়। এই সূত্রগুলোর মধ্যে যেগুলো টেবিল-সম্পৰ্কীয় দেশ ও কালের সঙ্গে খাপ খায় বা তৎসন্নিহিত হয়, শুধু সেগুলোকে বাছাই করে নিই। ভাবাবিষ্ট অবস্থা যতই গভীর এবং সমৃদ্ধ হোক না কেন, চিন্তার স্থান সেখানে একান্ত নতুন। উপরিউক্ত উপায়ে এর বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। তবে সাধারণ বুদ্ধিসম্মত চেতনা থেকে ভাবাবিষ্ট অবস্থার পার্থক্যের অর্থ সাধারণ চেতনা থেকে বিচ্ছিন্নতা নয়। অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস অবশ্য এই পার্থক্যকে বিচ্ছিন্নতা বলে ভুল করেছেন। যাহোক, মরমি চেতনা এবং বুদ্ধিসম্মত চেতনা উভয় ক্ষেত্রেই একই সত্তা আমাদের ওপর ক্রিয়াশীল। পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে সংগতি স্থাপনের বাস্তব প্রয়োজনে আমরা সত্তাকে খণ্ড-খণ্ডভাবে দেখি, কারণ যেসব অভিজ্ঞতা আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তা ক্রমে ক্রমে আমাদের গোচরে আসে। ভাবাবিষ্ট অবস্থা আমাদের সমগ্র সত্তার সংস্পর্শে নিয়ে আসে, যে সত্তার মধ্যে বিভিন্ন প্রকার কর্তা-কর্ম লীন হয়ে যায়। তখন অন্তর-বাহিরের পার্থক্যও বিলুপ্ত হয়।
৩. তৃতীয় উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো : মরমির কাছে ভাবাবিষ্ট অবস্থা মুহূর্তের জন্য ব্যক্তিগত সমস্ত অভিজ্ঞতার অতীত এক অতুলনীয় অন্য সত্তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গলাভ করে। এ সময় মরমির ব্যক্তিগত সমস্ত সত্তা অবলুপ্ত হয়ে যায়। ভাবাবিষ্ট অবস্থার বিষয়বস্তু বিবেচনা করলে দেখা যায় যে এটা নিতান্তই বস্তুমুখী, একে অবিমিশ্র মানসিক কুহেলিকায় মগ্নঅবস্থা বলে গণ্য করা যেতে পারে না। তবে আপনারা আমায় জিজ্ঞাসা করবেন, স্বাধীন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হিসেবে আল্লাহ সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা কী করে সম্ভব? (মরমীয় দশা নিষ্ক্রিয়—শুধু এতেই অভিজ্ঞাত খুদি যে যথার্থ আলাদা তা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয় না ।) এই প্রশ্ন যে আমাদের মনে উদিত হয়, তার কারণ আমরা বিনা বিচারে বা বিনা আলোচনায় ধরে নিই যে ইন্দ্রিয়অনুভূতি মারফত আমাদের বহির্জগৎ-সম্বন্ধীয় জ্ঞানই সকল জ্ঞানের আদর্শ। তা-ই যদি হতো, তাহলে আমরা কখনোই আমাদের নিজস্ব খুদির বাস্তবতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারতাম না।
যাহোক, এর জবাবে আমি আমাদের প্রাত্যহিক সামাজিক অভিজ্ঞতার উপমা দেব। সামাজিক মেলামেশার সময় আমরা অপর মনের পরিচয় পাই কী করে? আমরা নিজেদের খুদি ও প্রকৃতিকে যথাক্রমে অন্তচিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতি দ্বারা জানি। অপর মনের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে আমাদের কোনো বোধ নেই। আমার সম্মুখস্থ কোনো চেতনাশীল ব্যক্তি সম্বন্ধে আমার জ্ঞানের একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে এই যে আমারই মতো তারও দৈহিক চালচলন আছে। এই আঙ্গিক গতিবিধির সাদৃশ্য দেখেই আমি ধারণা করে নিই—ওই জীবটাও আমারই মতো চেতনাসম্পন্ন অন্য এক ব্যক্তি অথবা অধ্যাপক রয়েসের মতো আমরা বলতে পারি : আমাদের সঙ্গী-সহচরদের আমরা বাস্তব বলে জানি এই কারণে যে তারা আমাদের ইঙ্গিতে সাড়া দেয় আর এভাবে তারা ক্রমাগত আমাদের নিজেদের খণ্ড-খণ্ড ধারণাকে পরিপূরণ করে। এই সাড়া বা সংবেদনই যে সচেতন স্বরূপের উপস্থিতি প্রমাণিত করে সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই। কোরআনেও অনুরূপ অভিমত রয়েছে : এবং তোমার প্রভু বললেন, আমাকে ডাকো এবং আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিই। (৪০: ৬০)
এবং যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে, তখন আমি তাদের নিকটবর্তী হই এবং আমার কাছে যে কাতরভাবে প্রার্থনা করে, তার প্রার্থনার জবাব আমি দান করি । (২: ১৮২)
এটা পরিষ্কার যে আমরা দৃশ্য-অদৃশ্য যে মান দিয়েই যাচাই করি না কেন, উভয় ক্ষেত্রেই অপরের মন সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান অনুমানগত কিছুর মতোই থেকে যায় । তবু আমরা অনুভব করি যে অন্যান্য মন সম্বন্ধে আমাদের অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ। আর আমাদের সামাজিক অভিজ্ঞতার বাস্তবতা সম্বন্ধে কখনো কোনো সন্দেহ আমরা পোষণ করি না। তবে আমাদের আলোচনার বর্তমান স্তরে অপর মন সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানের তাৎপর্যের ওপর ভিত্তি করে একটা ব্যাপক খুদির বাস্তবতার অনুকূলে কোনো ভাববাদী যুক্তি দাঁড় করাতে চাই না। আমি শুধু এই কথাটাই. উল্লেখ করতে চাই যে ভাবাবিষ্ট অবস্থায় আমাদের অভিজ্ঞতার প্রত্যক্ষতা তুলনাহীন নয়। আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতার সঙ্গে এর কিছুটা সামঞ্জস্য রয়েছে এবং সম্ভবত এটা সাধারণ অভিজ্ঞতারই সমগোত্র।
৪. মরমীয় অভিজ্ঞতার স্বরূপ প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করতে হয় বলেই এটা অপরকে বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়। মননের চেয়ে অনুভূতির সঙ্গে ভাবাবিষ্ট অবস্থার মিল বেশি। মরমি বা পয়গম্বর তাঁর ধর্মীয় চেতনার আধেয়’ (বিষয়বস্তু) সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন, তা কতকগুলো প্রতিজ্ঞা বা প্রস্তাবনার আকারে তা অপরের পৌঁছে দেওয়া চলে। কিন্তু ধর্মীয় চেতনার আধেয়’কে তদ্রুপ বুঝিয়ে বলা চলেনা, যেমন কোরআন শরিফের নিম্নলিখিত কয়েকটি আয়াতে অভিজ্ঞতার শুধু মনতাস্তিক ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়েছে, অভিজ্ঞতার আধেয়’ সম্বন্ধে কোনো উল্লেখ করা হয়নি।
আল্লাহ, মানুষের সঙ্গে কেবল স্বপ্নে অথবা পর্দার আড়াল থেকে কথা বলেন না: তিনি দূত প্রেরণ করেন : দূত আল্লাহর আদেশমতো প্রত্যাদেশ প্রচার করবেন : কারণ তিনি মহান জ্ঞানী । (৪২: ৫১)
নক্ষত্র যখন অস্তমিত হয় তখন তার শপথ, তোমাদের সহচর ভুল করেন না বা বিপথগামী হন না; অথবা নিছক ভাবাবেগ থেকে তিনি কথা বলেন না। তাঁর কাছে কোরআন আল্লাহর দেওয়া প্রত্যাদেশ ছাড়া অন্য কিছু নয়। শক্তিশালী একজন তাঁকে এটা শিক্ষা দিলেন এবং প্রজ্ঞা দান করলেন। দিগ্বলয়ের সর্বোচ্চ অংশে তিনি ভারসাম্য রক্ষা করে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি নিকটবর্তী হলেন এবং এগিয়ে এলেন এবং দুই ধনুক পরিমাণ দূরত্বের মধ্যে অথবা আরও কাছে রইলেন। তারপর আল্লাহর বান্দার কাছে সে প্রত্যাদেশ প্রকাশ করলেন; তিনি যা দেখলেন তা তাঁর অন্তর অবিশ্বাস করল না। তিনি যা দেখলেন তা নিয়ে কি তোমরা তাঁর সঙ্গে তর্ক করবে? যে সিদরা বৃক্ষ সীমানা চিহ্নিত করছে, তার কাছে তিনি আরও একবার তাঁর দর্শন লাভ করেছিলেন। এই সীমানার কাছেই বিশ্রাম-উদ্যান অবস্থিত : এই সিদরা বৃক্ষ তার আবরণ দ্বারা আবৃত ছিল : তাঁর চোখ অন্যদিকে ফেরেনি বা বিভ্রান্তভাবে এদিক-ওদিক বিচরণ করেনি; কারণ তিনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নির্দশন দেখতে পেয়েছিলেন। (৫৩:১-১৮)
মরমীয় অভিজ্ঞতা যে অপরের কাছে বর্ণনা করা চলে না, তার কারণ এটা মূলত এক অব্যক্ত অনুভূতির ব্যাপার । বুদ্ধিগত বিচারের সঙ্গে এর কোনো সম্বন্ধ নেই। তবে স্মরণ রাখতে হবে যে অন্য সকল অনুভূতির মতো মরমীয় অনুভূতিরও একটা জ্ঞানাত্মক উপাদান আছে। আর আমার বিশ্বাস, এই জ্ঞানাত্মক উপাদানের বলেই মরমীয় অভিজ্ঞতা আমাদের আইডিয়া গঠনে সাহায্য করে। বস্তুত চিন্তার অভিব্যক্তি লাভ করাই অনুভূতির স্বভাব। অনুভূতি ও আইডিয়াকে একই নিগূঢ় অভিজ্ঞতার পার্থিব ও অপার্থিব দুটো দিক বলে মনে হবে। তবে এ বিষয়ে অধ্যাপক দার্শনিক উইলিয়াম আর্নেস্ট হকিংয়ের (১৮৭৩-১৯৬৬) উক্তি উদ্ধৃত করলেই আমার বক্তব্য স্পষ্টতর হবে। ধর্মীয় চেতনার মূলে যে বুদ্ধি আছে, এই মতবাদ প্রমাণের জন্য তিনি অনুভূতি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আলোচনা করেছেন : অনুভূতি ছাড়া অন্য আর কোন জিনিস আছে যাতে অনুভূতি সমাপ্তি লাভ করতে পারে? এর জবাবে আমি বলব : বস্তু সম্বন্ধে সচেতনতা। অনুভূতি হচ্ছে গোটা এক সচেতন খুদির অস্থিরাবস্থা : আর এই খুদিকে যা স্থিরতা দান করবে তা এর গণ্ডির ভেতরে নেই, রয়েছে এর গণ্ডির বাইরে। অনুভূতির প্রকৃতি বাইরের দিকে যাওয়া, আর আইডিয়ার প্রকৃতি বাইরের কিছু জানিয়ে দেওয়া। নিজ উদ্দেশ্যে কোনো ধারণাই থাকবে না—কোনো অনুভূতিই এমন অন্ধ নয়। মনে যখন কোনো একটা অনুভূতির সঞ্চার হয়, তখন সেই অনুভূতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই এমন একটা জিনিসের ধারণাও মনে উদিত হয়, যা অনুভূতিকে স্থিরতা দান করে। লক্ষ্য ছাড়া যেমন কোনো কাজ হতে পারে না, তেমনি লক্ষ্য ছাড়া কোনো অনুভূতিও সম্ভব নয়। আর লক্ষ্য থাকলে উদ্দেশ্য থাকবেই। আমাদের চেতনার এমন কতকগুলো অপরিস্ফুট অবস্থা আছে, যাতে আমাদের কোনো লক্ষ্য নেই বলেই মনে হতে পারে ।
তবে এরূপ অবস্থায় লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে আমাদের অনুভূতিও তখন অনুরূপভাবেই নিশ্চল থাকে । ধরুন, আমি কোনো আকস্মিক আঘাতে অভিভূত হয়ে পড়লাম। আমি তখন বুঝতে পারব না আমার কী হলো। আর কোনো ব্যথাও তখন আমি অনুভব করতে পারব না। অথচ একটা কিছু যে ঘটেছে, সে সম্বন্ধে আমি পূর্ণ সচেতন। আইডিয়া দ্বারা স্পষ্ট এবং গতিপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তখন অভিজ্ঞতা ক্ষণিকের জন্য আমাদের চেতনার দ্বারদেশে অপেক্ষা করে—পরে আইডিয়া এসে প্রতিক্রিয়ার পথ দেখায়। আর সেই মুহুর্তেই অভিজ্ঞতাটা বেদনাদায়ক বলে অনুভূত হয়। আমাদের এই সিদ্ধান্ত যদি সত্য হয় তবে বলব, আমাদের আইডিয়াতে যেমন উদ্দেশ্যমূলক চেতনা আছে, আমাদের অনুভূতিতেও তাই আছে—যা খুদির অতীত কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত করে—যার মধ্যে অনুভূতি বিলীন হয়ে যাবে তার দিকেই। খুদিকে চালিত করা ছাড়া যার অস্তিত্বের আর কোনো কারণই নেই। আপনারা দেখতে পাবেন, অনুভূতির এই স্বভাবহেতু যদিও অনুভূতিতেই ধর্মের শুরু, তবু ইতিহাসের কোথাও এমন দেখা যায় না যে অনুভূতিকেই ধর্ম যথাসর্বস্ব মনে করেছে; বরং ধর্ম সর্বক্ষণ যুক্তির অনুসন্ধান করেছে।
মরমিরা জ্ঞানের সোপান হিসেবে বুদ্ধির নিন্দা করলেও ধর্মের ইতিহাসে তার কোনো সমর্থন নেই। এখানে অধ্যাপক দার্শনিক উইলিয়াম আর্নেস্ট হকিংয়ের উক্তি থেকে যে অংশ উদ্ধৃত করা হয়েছে, তাতে ধর্মে আইডিয়া থাকার সমর্থন ছাড়া আরও ব্যাপক ইঙ্গিত রয়েছে। বাচনিক প্রত্যাদেশ সম্বন্ধে একটা ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্ক বহুকাল থেকেই বিদ্যমান। একসময় এই বিতর্ক মুসলিম ধর্মীয় চিন্তানায়কদের মধ্যে খুব অশান্তির সৃষ্টি করেছিল, অনুভূতি ও আইডিয়ার মধ্যে অঙ্গাঙ্গি সম্বন্ধ ও দ্বন্দ্বের ওপর অনেকখানি আলোকপাত করে। অব্যক্ত অনুভূতি আইডিয়ায় পরিণত হতে সতত উদগ্রীব, আর আইডিয়া চায় তার নিজের মধ্য থেকেই একটা নিজস্ব দৃশ্যমান পোশাক গড়ে তুলতে। অনুভূতির অভ্যন্তর থেকেই একসঙ্গে আইডিয়া ও কথার উদ্ভব হয়ে থাকে—এটা কোনো আলংকারিক কথা নয় । নৈয়ায়িক যুক্তি অবশ্য বলে যে এরা পরপর আসে।
এভাবে আইডিয়া ও কথাকে পরস্পরবিচ্ছিন্ন বলে ধরে নিয়ে নৈয়ায়িক বুদ্ধি নিজেরাই অসুবিধা সৃষ্টি করে। এ কথা সংগতভাবেই বলা যায় যে কথা আমাদের অনুভূতিতে স্বয়ং প্রতিভাসিত হয়ে থাকে।
৫. চিরন্তনের সঙ্গে মরমির ঘনিষ্ঠ সংযোগ। তাই ক্রমিক কাল তার কাছে মনে হয় অবাস্তব । কিন্তু চিরন্তনের সঙ্গে এই সংযোগের অর্থ ক্রমিক কালের সঙ্গে পূর্ণবিচ্ছেদ নয়। মরমির দশাপ্রাপ্তির অবস্থা তার অনন্যতার দিক দিয়ে সাধারণ অভিজ্ঞতার সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে সম্পর্কযুক্ত থাকে। এটা বোঝা যায় এই সত্য থেকে যে মরমীয় দশা শিগগিরই কেটে যায়, যদিও অবসানের পরও তার। প্রভাব প্রবলই থাকে। মরমি এবং পয়গম্বর উভয়েই ফিরে আসেন সাধারণ অভিজ্ঞতার স্তরে। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে এই যে পয়গম্বরের প্রত্যাবর্তন মানবজাতির জন্য অসীম অর্থময় হতে পারে। এ সম্বন্ধে আমি পরে আলোচনা করব।
জ্ঞানের দিক দিয়ে মরমীয় অভিজ্ঞতার এলাকা মানবিক অভিজ্ঞতার অন্যান্য এলাকার মতোই সত্য। মরমীয় অভিজ্ঞতাকে ইন্দ্রিয়ানুভূতির ওপর দাঁড় করানো যায় না, শুধু এই কারণেই একে উপেক্ষা করা চলে না। যে জৈবিক অবস্থাকে মরমীয় দশার নিয়ামক বলে মনে হয়, তার বিশ্লেষণের দ্বারাও মরমীয় দশার মূল্যকে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। দেহ ও মনের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে আধুনিক মনোবিজ্ঞানের স্বতঃসিদ্ধান্তকে যদি সত্য বলেও ধরে নেওয়া যায়, তাহলেও সত্যের প্রকাশ হিসেবে মরমীয় দশার মূল্য অবজ্ঞা করা অযৌক্তিক। মনস্তত্ত্বের দিক থেকে বলতে গেলে সকল অবস্থাই—তা তাদের আধেয়’ ধর্মীয় হোক বা অধর্মীয় হোক—জৈবিকভাবেই নিরূপিত হয়ে থাকে। মনের ধর্মীয় রূপ জৈবিকভাবে যতটা নিরূপিত হয়, মনের বৈজ্ঞানিক রূপও ততটা জৈবিকভাবে নিরূপিত হয়। প্রতিভার জৈবিক অবস্থা সম্বন্ধে মনস্তাত্ত্বিকেরা যা বলবেন, তার দ্বারা প্রতিভার সৃষ্টি বিষয়ে আমাদের বিচার আদৌ নিরূপিত বা প্রভাবিত হয় না। বিশেষ রকমের গ্রহণ-ক্ষমতার জন্য বিশেষ রকমের মেজাজগত অবস্থার প্রয়োজন হতে পারে। যা গ্রহণ করা যায় তার স্বরূপের গোটা সত্য বলে পূর্ববর্তী কোনো অবস্থাকে গণ্য করা চলে না।।
প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, যে মানের দ্বারা আমরা আমাদের বিভিন্ন মানসিক অবস্থাকে মূল্যের দিক দিয়ে উৎকৃষ্ট বা নিকৃষ্ট বলে বিচার করে থাকি, তার সঙ্গে তাদের জৈবিক কারণের কোনো সম্পর্ক নেই। অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস বলেছেন, দিবাস্বপ্ন এবং দৈববাণীর মধ্যে কতকগুলো স্পষ্টতই অর্থহীন। সম্মোহিত অবস্থা এবং আবেগমূলক অঙ্গ-বিক্ষোভের মধ্যেও কতকগুলো একান্ত নিরর্থক। এসবের দ্বারা স্বভাব ও চরিত্র দৈবভাবাপন্ন বলে প্রমাণিত হওয়া দূরে থাক, নিছক গুরুত্বপূর্ণ বলেও গণ্য হয় না। খ্রিষ্টধর্মের অনেক বাণী এবং অভিজ্ঞতার নিদর্শন রয়েছে, যা প্রকৃতই দৈব ব্যাপার। আবার অনুরূপ এমন সব ব্যাপার আছে, যা শয়তান তার বিদ্বেষবশত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের নরকের সন্তানে পরিণত করার জন্য সংঘটন করেছিল। খ্রিষ্টীয় মর্মবাদের ইতিহাসে, দৈব ব্যাপারকে শয়তান-সৃষ্ট ব্যাপার থেকে পৃথক করার উপায় নিয়ে এক কঠিন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। এই সমস্যা সমাধানে শ্রেষ্ঠতম বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়েছে। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে তাদের ফলের দ্বারাই তোমরা তাদের চিনবে,
তাদের মূল দ্বারা নয়। অধ্যাপক জেমস খ্রিষ্টীয় মর্মবাদের যে সমস্যার কথা উল্লেখ করছেন, তা বস্তুত সব মর্মবাদেরই সমস্যা। শয়তান তার বিদ্বেষবশত নকল অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করে। এই নকল অভিজ্ঞতাই মর্মীয় দশার পরিমণ্ডলে প্রবেশ করে থাকে। কোরআনেও আমরা পড়ি :
আমরা তোমাদের কাছে কোনো রসুল বা পয়গম্বরকে প্রেরণ করিনি যাদের বাসনায় শয়তান কোনো ভ্রান্ত বাসনা প্রবিষ্ট না করেছে, কিন্তু শয়তান যা প্রস্তাব করেছে আল্লাহ তা অসার বলে প্রমাণিত করবেন। এভাবে আল্লাহ তাঁর প্রত্যাদেশসমূহ সত্যে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কারণ আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানী। (২২:৫২)
দিব্য ব্যাপারসমূহ থেকে শয়তানের কারসাজিগুলোকে অপসারিত করার দিক দিয়ে ফ্রয়েডের অনুসারীগণ ধর্মের প্রভূত মঙ্গল সাধন করেছেন। অবশ্য আমি এটা না বলে পারছি না যে আমার কাছে এসব মনোবিজ্ঞানের মূলনীতিটা পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে প্রতীয়মান হয় না। আমাদের ভবঘুরে উত্তেজনাসমূহ যদি আমাদের স্বপ্নের মধ্যে এসে হাজির হয়, কিংবা অন্য সময়ে আমরা সম্পূর্ণ প্রকৃতিস্থ না থাকি, তবে তা থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় না যে তারা আমাদের স্বাভাবিক খুদির আড়ালে কোনো পরিত্যক্ত প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ হয়ে থাকে । আমাদের স্বাভাবিক খুদির ওপর সময় সময় এসব অবদমিত উত্তেজনা এই যে হামলা করে, এতে বরং এ-ই প্রমাণিত হয় যে আমাদের মনের কোনো অন্ধ-কোঠায় তাদের উপস্থিতির চেয়ে স্বাভাবিক সাড়া তারা সাময়িকভাবে ব্যাহত করে, তারা মনের কোনো অন্ধ কোণে আবদ্ধ থাকে না ।
থিওরিটি এই : আমাদের পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে যখন আমরা নিজেদের খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করি, তখন আমরা নানা রকমের উত্তেজনার কবলে পড়ে থাকি । এই উত্তেজনায় আমরা যে সাড়া দিই, তা ক্রমে যেন একটা বিধিবদ্ধ নিয়মে পরিণত হয়। নব নব উত্তেজনা আসতেই থাকে। এই নিয়ম তার কতকগুলোকে আত্মস্থ করে, আর যেগুলোর সঙ্গে মিল না হয়, সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে। যাকে মনের অবচেতন লোক’ বলা হয়, তাতে এই পরিত্যক্ত উত্তেজনাগুলো চলে যায়। এই কেন্দ্রীয় খুদির ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য তারা সেখানে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এই অবদমিত আবেগ বা উত্তেজনাসমূহ আমাদের কার্যপরিকল্পনায় গোলযোগ ঘটাতে, চিন্তাকে বিকৃত করতে, আমাদের নানারূপ অদ্ভুত স্বপ্ন সৃষ্টি করতে বা বিবর্তনের ধারায় আমরা যেসব আদিম আচার-ব্যবহার পেছনে ফেলে এসেছি তাতে আমাদের ফিরিয়ে নিতে পারে ।
বলা হয়েছে, ধর্ম মানুষের এসব প্রত্যাখ্যাত আবেগের দ্বারা সৃষ্ট একটি নিছক কল্পবস্তু মাত্র, স্বাধীন ও অনাহত গতিবিধির জন্য একপ্রকার ‘পরিরাজ্যের প্রতিষ্ঠাই এর উদ্দেশ্য। এই মতবাদ অনুসারে ধর্মমত ও ধর্মবিশ্বাসগুলো প্রকৃতি সম্বন্ধে আদিম মতবাদ ছাড়া আর কিছু নয়। এর মারফত মানবজাতি নিজ সত্তাকে তার আদিম কদর্যতা থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করেছে আর দেখাতে চেষ্টা করেছে যে বাস্তব জীবনে এ সত্তাকে আমরা যেভাবে পাই, আসলে তা তার চেয়ে মনোজ্ঞ ও কাম্য। জীবনের বাস্তব সত্য থেকে ভীরুর মতো পলায়নের সুযোগ দান করে এমন ধর্ম ও শিল্পধারা যে আছে তা আমি অস্বীকার করছি না। তবে আমার কথা হচ্ছে, এটা সব ধর্মের বেলায় সত্য নয়। নিশ্চয়ই ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মমতের একটা দর্শনশাস্ত্রসম্মত মানে আছে। তবে এটা স্পষ্ট যে অভিজ্ঞতার যেসব মালমসলা প্রকৃতিবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়, ধর্মমত ও ধর্মবিশ্বাস সেসবের বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা নয়। ধর্ম কার্য-কারণের তত্ত্ব দ্বারা প্রকৃতির তাৎপর্য উঘাটন-প্রয়াসী পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নশাস্ত্র নয়। ধর্মের লক্ষ্য হচ্ছে মানবীয় অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণ এক ভিন্ন এলাকা, অর্থাৎ ধর্মীয় অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ। ধর্মীয় অভিজ্ঞতার উপাদানকে কোনো বিজ্ঞানের আলোচ্য উপাদানে পরিণত করা যেতে পারে না।
বস্তুত ধর্ম সম্বন্ধে এটা ন্যায়তই বলতে হবে যে বিজ্ঞানের বহু আগে এটা ধর্মীয় জীবনে বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। বাস্তব অভিজ্ঞতার অনুসন্ধান করতে গিয়েই বিজ্ঞান ও ধর্ম ভিন্নপথে চলেছে। এরা উভয়ে একই রকম অভিজ্ঞতার উপাদান ব্যাখ্যা করে, আমাদের এই ভুল বিশ্বাসের জন্যই আমরা মনে করি যে ধর্ম ও বিজ্ঞান পরস্পরবিরোধী। আমরা ভুলে যাই যে এক বিশেষ রকমের মানবীয় অভিজ্ঞতার প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধিই ধর্মের লক্ষ্য।
সমস্ত বিষয়টাই যৌন আবেগের কাণ্ডকারখানা, এই বলে ধর্মীয় চেতনাকে উড়িয়ে দেওয়া চলে না। যৌন চেতনা ও ধর্মীয় চেতনা—এ দুটো পরস্পরের বিরোধী, অন্তত তাদের বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য এবং তাদের দ্বারা সঞ্জাত আচরণের দিক দিয়ে তারা পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসল ব্যাপার হচ্ছে, আমরা ধর্মীয় আবেগের অবস্থায় আমাদের ব্যক্তিত্বের সংকীর্ণ আওতার বাইরে এক রকম বাস্তব সত্তার সন্ধান পাই। ধর্মীয় আবেগ আমাদের সত্তার গভীরে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি করে থাকে। এই কারণেই মনস্তাত্ত্বিকের কাছে ধর্মীয় আবেগ অবচেতন মনের কাজ বলে প্রতীয়মান হয়। প্রত্যেক জ্ঞানের ব্যাপারেই কিছু না কিছু আবেগ থাকবেই। এই আবেগের তীব্রতার হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানের বস্তুর বাস্তবতাও কমবেশি হয়ে থাকে। যে জিনিসটা আমাদের ব্যক্তিত্বের গোটা কাঠামোকে আলোড়িত করে তোলে, তা আমাদের কাছে খুবই বাস্তব। অধ্যাপক হকিং জোরের সঙ্গেই বলেছেন :
যদি কখনো কোনো ব্যক্তির বা সাধু পুরুষের অর্থহীন দিনের মতো দীর্ঘ সময়-পরিসরের মধ্যে কোনো স্বপ্ন উদিত হয়ে তার এবং আমাদের জীবনকে নতুন পথে পরিচালিত করে, তাহলে সেটা সম্ভব হতে পারে সেই কারণে যে সে স্বপ্ন সচেতন প্রস্তুতি এবং অবচেতন সংবেদন উভয় স্বীকার করে। অবচেতন সংবেদনই আমাদের চিরন্তন ব্যক্তিত্বের সমগ্রহ কাঠামোকে আন্দোলিত করে।
এইরূপ স্বপ্নের অর্থ যে অবচেতন প্রস্তুতি ও অবচেতন সংবেদন দুই-ই তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অব্যবহৃত বায়ু-প্রকোষ্ঠের সম্প্রসার দ্বারা এটা বোঝায় না যে আমরা বাইরের বায়ু গ্রহণ থেকে বিরত হয়েছি; বরং ঠিক এর উল্টোটাই বোঝায়।
কাজেই নিছক মনস্তাত্ত্বিক প্রণালির দ্বারা ধর্মীয় আবেগকে এক প্রকার জ্ঞানরূপে ব্যাখ্যা করা যায় না। এটা লক এবং হিউমের বেলায় যেরূপ ব্যর্থ হয়েছে, আমাদের নতুন মনস্তাত্ত্বিকদের বেলায়ও সেরূপ ব্যর্থ হবেই।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনাদের মনে নিশ্চয়ই এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জাগবে। আমি এই কথাই প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছি যে ধর্মীয় অভিজ্ঞতা হচ্ছে মূলত একপ্রকার অনুভূতি। অভিমত হিসেবে ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে এর মর্মার্থ অপরকে বুঝিয়ে বলা যায় না। তবে মানবীয় অভিজ্ঞতার যে এলাকার দ্বারা আমার কাছে রুদ্ধ, সেই ধর্মীয় অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা হিসেবে কোনো রায় যদি আমার সম্মতির জন্য আমার কাছে পেশ করা হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আমি জিজ্ঞেস করতে পারি, এর সত্যতার নিশ্চয়তা কী? এমন কোনো পরীক্ষা কি আমাদের জানা আছে, যার দ্বারা এর যথার্থতা নির্ণয় করা যেতে পারে? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যদি এরূপ অভিমত বা রায় স্বীকার করে নেবার একমাত্র ভিত্তি হতো, তাহলে ধর্মটা শুধু জনাকয়েক লোকেরই আয়ত্তের বিষয় হতো। সুখের বিষয়, এমন কতকগুলো পরীক্ষার উপায় আমরা পেয়েছি, যা অন্য রকমের জ্ঞানের বেলায় প্রযোজ্য পরীক্ষাপদ্ধতির চেয়ে ভিন্ন নয়। এগুলোকে আমি বলি বুদ্ধিগত পরীক্ষা এবং গুণাত্মক পরীক্ষা।
বিশেষরূপে বিশ্লেষণকে আমি বুদ্ধিগত পরীক্ষা বলতে চাই। এই পরীক্ষায় মানবীয় অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে কোনো পূর্বধারণার সাহায্য নেওয়া হয় না। ধর্মীয় অভিজ্ঞতায় যে সত্তার রূপ প্রতিভাত হয়, বিশ্লেষণের দ্বারা আমরা ঠিক সেরূপ সত্তার নাগাল পাই কি না, তা দেখাই হচ্ছে বুদ্ধিগত পরীক্ষার উদ্দেশ্য আর গুণাত্মক পরীক্ষায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার বিচার করা হয় তার ফলের দ্বারা। দার্শনিকেরা বুদ্ধিগত পরীক্ষা প্রয়োগ করেন আর পয়গম্বরেরা প্রয়োগ করেন গুণাত্মক পরীক্ষা। পরবর্তী বক্তৃতায় আমি বুদ্ধিগত বিচারই প্রয়োগ করব।
লেখক পরিচিতি:
মুহাম্মদ ইকবাল
বই – ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন
তর্জমা: মোহাম্মদ মোকসেদ আলী