Relevance of Shah Waliullah in the history of revolution - Khalid Muhammad Saifullah

বিপ্লব চিন্তার উৎস নির্মাণ :

বিপ্লবকে কখনও নির্দিষ্ট সমীকরণে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না, বিপ্লবের কারণ ও প্রেক্ষাপটে বিভিন্নতা থাকে। থাকে নিজস্ব পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিবেচনা বোধ। নতুবা, সফলতার চেয়ে বিশৃঙ্খলা- ই প্রবল প্রতাপশালী হয়ে থাকে। আরো সহজ শব্দে বললে – সু-নির্দিষ্ট কাঠামোবদ্ধ ধারণা বা সূত্র মুখস্থ করে বিপ্লব চলে না। বরং , সেসব ধারণার প্রাসঙ্গিকতা অন্বেষণ ও নির্মাণের প্রশ্নকে হাজির করতে হয়। আপনি যদি দেশ ও কালিক প্রশ্নের মোকাবেলা না করে ‘ সাম্য , মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব’ কেই বিপ্লবের একমাত্র উপাদান হিসেবে বিবেচনা করেন , ভুল হবে বৈকি। সেই সাথে অর্থনৈতিক বৈষম্যকে বিপ্লবের প্রধান কারণ হিসেবে গণ্য করাও বাতুলতা।

আবার বিপ্লবের সূচনা যে ধর্ম ও ধার্মিকতাকে কেন্দ্র করেই রচিত হবে, তারও নিশ্চয়তা নাই। বরং, বিপ্লব রচিত হবে জনসাধারণের পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবকে আমলে নিয়ে। যখন, যেখানে, যেই বিষয়ের অভাব প্রকট হয়ে ওঠে, তার উপরেই বিপ্লবের ভিত্তি রচিত হয়।

সাম্য , স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ব – এই তিনটি প্রত্যয়ের ভিতরে ফরাসি বিপ্লবের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল। এই প্রত্যয় কেন্দ্রীকতার পেছনে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক কারণ বিদ্যমান ছিল , যার বিবেচনা তখনকার প্রেক্ষাপটে জরুরি ছিল। সংক্ষিপ্ত একটি ধারণা সামনে হাযির করা প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে –

এরিস্টটল বিপ্লব প্রসঙ্গে বলেন, ” সাম্যের ব্যাকুলতাই হচ্ছে রাজদ্রোহের মূল “। [১] এর অর্থ এই নয় যে, সাম্য ছাড়া অন্য কিছুকে বিপ্লবের সূত্র হিসেবে হাযির করা যাবে না। বরং , সাম্যের সাথে বিপ্লবের আরো কারণ উপস্থিত থাকতে পারে। ফরাসি বিপ্লবেই আমরা এর প্রমাণ পাই। তবে হ্যা! বিপ্লবের ক্ষেত্রে সাম্যের মৌলিকত্ব অনস্বীকার্য। ফ্রান্সে বিপ্লব-পূর্ব অভিজ্ঞতা বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, সাম্যের অভাব প্রকটাকারে হাযির ছিল – সম্ভ্রান্ত -শ্রেণীহীন , ধনী -দরিদ্রের মাঝে পষ্ট বিভেদ রেখা তৈরি করা হয়েছিল। ক্ষমতার প্রশ্নে সম্ভ্রান্তদের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল, অংশগ্রহণ মূলক রাজনীতি স্বীকৃত ছিল না।

অন্যদিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তারা থিওক্রেসি বা পোপতন্ত্রে নিষ্পেষিত ছিল। খৃষ্টধর্মকে পুঁজি বানিয়ে পুরোহিতরা জনসাধারণকে নির্যাতন করছিল, স্বাধীনতা খর্ব করছিল। এখানে ধর্মকেই যেহেতু অধিকার হরণের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল, তাই বিপ্লবের প্রশ্নে ধর্ম জাতিসত্তার ভাগ্য নির্ধারক হিসেবে ভূমিকা পালনে ব্যর্থ ছিল। সুতরাং, এই পর্যায়ে স্বাধীনতার প্রশ্নে লিবারেলিজম , অস্তিত্ববাদ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ ও মার্ক্সিজমের বিকল্প হিসেবে খৃষ্টধর্ম অ-প্রাসঙ্গিক থাকাই স্বাভাবিক। তবে সেই অর্থে ইসলামকে অপ্রসঙ্গিক ভাবার কোন অবকাশ নেই। কারণ, ইসলাম থিওক্রেসির বৈধতা স্বীকার করে না।

তাছাড়া, যেই সংকট উদ্ভব ও বিকাশ লাভ করেছে পশ্চিমে , বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থাকে করেছে বিপর্যস্ত তার দায়ভার প্রাচ্য বহন করবে না। ক্যাথলিক চার্চের সংকটকে ব্যাপকভাবে ধর্মীয় সংকট হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার প্রবনতা একপ্রকার আগ্রাসন । সে আগ্রাসনের নির্ভুল শিকার আজকের মুসলিম সমাজ ও তার বিশেষায়িত শ্রেণী । আধুনিক ইউরোপের সামাজিক ইতিহাস ও তার সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমার সকল অভিজ্ঞতা তাদের সমাজের পরিপার্শ্বিকতার ফসল। রেনেসাঁ পরবর্তী উদারনীতিবাদ, মার্কসবাদ, অস্তিত্ববাদ , ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ সহ মানবতা সংশ্লিষ্ট ধারণাগুলোর সূতিকাগারে রয়েছে তাদের জীবন-ব্যবস্থাগত সংকট। আধুনিক কালে সমস্যার এ কেন্দ্রীয় ধারণা সামনে ছিল না বলে অনেক মতাদর্শকে যেমন ইসলামীকরণের প্রবনতা দেখা গেছে, তেমনি ইসলামি জীবনব্যবস্থার উপর প্রশ্ন ছুড়তে উদ্যত হয়েছে কিছু শ্রেণী। বিবর্তনবাদের চরম বিকাশের যুগে ইসলামকে এর সাথে শ্লেষ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে , অপব্যাখ্যা ও ধূর্ততার আশ্রয় নিয়ে।এসবের পেছনে দুটি কেন্দ্রীয় সমস্যাকে চিহ্নিত করা যায় –

১ . জাতি সত্ত্বার স্বকীয় বিশ্বাস ও কর্মধারা সম্পর্কে অনবহিত থাকা। কারণ, কোন বিষয়ে মানুষের জ্ঞানশূণ্যতা তাকে অবিশ্বাস ও বিরোধিতার দিকে ঠেলে দেয়। আরবী প্রবাদ আছে – ‘ অজানা বিষয়ের প্রতি মানুষের বিদ্ধেষ লালন করার প্রবনতা তার সহজাত।

২ . পশ্চিমা সংস্কৃতির উন্মত্ত আগ্রাসন প্রাচ্যকে দীর্ঘকাল যাবত দুর্বল করে রেখেছিল। ফলে তারা চিন্তা ও বিশ্বাসগত স্বকীয়তা ভুলে প্রশ্নহীন ভাবে পশ্চিমের অনুকরণ করতে থাকে।

আবার প্রটেস্টান্ট ও ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মাঝে বিশ্বাসগত বিভাজন তাদের ভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে চরম ঘাতক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। ফলে ভ্রাতৃত্বের প্রশ্নকেও বিপ্লব প্রসঙ্গে হাযির করতে হয়েছিল।[২]

তুর্কি তরুণ প্রজন্মের বিপ্লবের অগ্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিলেন যিনি, আহমাদ রেজা – অগাস্ট কোঁতের রচনাবলী তিনি ব্যাপকভাবে অধ্যায়ন করেছেন। তারা বিপ্লবের জন্য জাতিসত্তার মৌলিক উপাদান হিসেবে ভ্রাতৃত্বের স্থানে ‘আদালত বা ন্যায়নিষ্ঠতার’ প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কারণ, তারা সকলেই মুসলিম হওয়ার সুবাদে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে অভাব ছিল না। হাদিসে রাসুল সা. বলেছেন – “আল মুসলিমু আখুল মুসলিম” প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। ফলে তাদের ভ্রাতৃত্বের সংকট ছিল না , সংকট ছিল ন্যায়নিষ্ঠতার। এজন্য একেই বিপ্লবের একটি উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।[৩]

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের খ্যাতিমান দুই অনুশীলনকারীর – রাশিয়া ও চীনের বিপ্লবী প্রেক্ষাপটকেই লক্ষ্য করুন, দেখবেন – অর্থনৈতিক বৈষম্যের ভিত্তিতে বিপ্লব পরিচালিত হলেও , এর প্রক্রিয়া কিন্তু অভিন্ন থাকেনি। শিল্প-শ্রমিক প্রাধান্যপূর্ণ দেশকে যেখানে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য অধিক সহায়ক বিবেচনা করা হয়েছিল, সেখানে মাও জে দং বিপ্লবের অনুশীলন করলেন কৃষি-প্রধান রাষ্ট্রের পরিসরে।

লেনিন রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের বিলোপ ও বিনির্মানের ধারণা রচনা করেন যারশাসিত রাশিয়ার পরিস্থিতিকে সামনে রেখে। ফলে বলপ্রয়োগের যন্ত্র হিসেবে তার সামনে উপস্থিত ছিল ‘মুলুকিয়াত’ ধরণের রাষ্ট্র কাঠামো। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণের শিল্প-শ্রমিক পাশে পেয়েছিলেন। আর তার বিপ্লবের আতুড়ঘর ছিল পেত্রোগ্রাদ ও মস্কোর শিল্পাঞ্চল। কিন্তু, মাওয়ের বিপ্লবী সহযোগীরা এসেছিল প্রধানত কৃষি সমাজ থেকে। এবং চীনের বিপ্লবের সূতিকাগারে ছিল অনেকাংশেই গ্রাম।[৪] সুতরাং, উভয় ক্ষেত্রেই বিপ্লবের উপাদান নির্বাচনে পরিস্থিতি ও পরিপার্শ্বিকতার ব্যাপক প্রভাব ছিল।

শাহ ওলিউল্লাহর বিপ্লব ভাবনা :

মোটকথা, যাদের নিয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন রচনা করা হবে তাদের মাঝে স্বার্থের ঐক্য জরুরি। এবং জাতিসত্তার স্বকীয় বিশ্বাস ও ভাবনাকে উপেক্ষা করে কখনও বিপ্লবের চিন্তা করা যায় না। ভারতীয় উপমহাদেশের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বিপ্লবের ধারণা এবং অনুশীলনের সূচনা বহু আগের , উপনিবেশ স্থাপনের আগে থেকেই। পরবর্তীতে অবিচ্ছিন্ন ভাবে, নানা সময়ে বিপ্লব পরিচালিত হয়েছে। উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে সর্বপ্রথম বিপ্লবের ধারণা হাযির করেছিলেন ‘ শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী’।

শাহ ওলিউল্লাহ এর বিপ্লবী চিন্তা নিয়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিন্তাবিদ উবাইদুল্লাহ সিন্ধীর একটি বক্তব্য এখানে ভূমিকা হিসেবে উপস্থাপন করাকে খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে , উবাইদুল্লাহ সিন্ধী বলেন – ” ইউরোপে অবস্থান-কালে ফরাসি বিপ্লব ও তার পরিনতি সম্পর্কে গভীরতার সাথে চিন্তা করেছি। ফলে বাদশাহ আলমগীরের পরে উপমহাদেশের রাজনীতিতে যে উত্তাল তরঙ্গের ঘাত-প্রতিঘাত দেখা দিয়েছিল ,তার মাঝে একটি আশার আলোকস্তম্ভ দেখতে পেলাম। ইমাম ওলিউল্লাহর বিপ্লবী আন্দোলন- ই সেই আলোকস্তম্ভ। তার দর্শন গভীরভাবে পর্যালোচনা করার পর আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, কার্ল মার্ক্সের তুলনায় শাহ ওলিউল্লাহর দর্শন যে পৃথিবীর জন্য অধিক প্রাসঙ্গিক, তা আমরা জোর গলায় বলতে পারি। তার আন্দোলন থেকে আমরা একটি বৈপ্লবিক চিন্তাধারার উত্তরাধিকার লাভ করেছি। বালাকোটের ঘটনার পর এদেশে যতো রাজনৈতিক আন্দোলন জন্ম নিয়েছে, তার কোনটাকেই খাটি বলা যায় না। তবে শাহ ওলিউল্লাহর আন্দোলনে কোন কৃত্রিমতা নাই।”[৫]

১৭৩১ খৃষ্টাব্দের ৫ মে ইমাম ওলিউল্লাহ দিল্লির রাজনৈতিক বিপর্যয় ও অস্থিরতা পর্যবেক্ষণ করে নিজস্ব উদ্যোগে একটি বৈপ্লবিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন। এ ঘটনা ছিল ফরাসি বিপ্লবের আটান্ন বছর আগের বাস্তবতা। ওলিউল্লাহ নিজেই এই আন্দোলনের কর্মসূচি ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছিলেন। কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠন করে এর শাখা বিস্তার করেছিলেন গোটা রাজ্যে। এভাবে একটি মুসলিম সংগঠনের সূচনা হয়, যা আদতে অস্থায়ী সরকারের রূপ লাভ করেছিল।

প্রথম শতকে এ বিপ্লবী আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন তিনজন নেতা – তারা একটি জাতীয় নেতৃত্বের সূচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে এ বিপ্লব একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে হাযির হয়েছিল। প্রথম শতকের তিন নেতা ছিলেন –

ক . ইমাম শাহ ওলিউল্লাহ রহ. (১৭৩১-১৭৬৩ খৃ)
খ . ইমাম আব্দুল আযীয রহ. (১৭৩১ -১৮২৪ খৃ)
গ . ইমাম মুহাম্মদ ইসহাক রহ.(১৮২৪-১৮৪৬ খৃ)

ইসলামি ফিকহের ফতোয়া প্রক্রিয়া একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে কতোটা গভীর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রাখে , উপমহাদেশের ইতিহাসে তার প্রত্যক্ষ নযির তৈরি করেছিলেন শাহ আব্দুল আযীয রহ.। তিনিই উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামকে শরিয়া অনুসারে ফরজ বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন। এবং উপনিবেশীয় উপমহাদেশকে তিনি ‘দারুল হারব’ বা শত্রু কবলিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার ফতোয়ার এই প্রভাব বিপ্লবের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় শ্লেষ হয়ে যে গতি সঞ্চারিত করেছিল, তাকে তত্ত্বের পাটাতনে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। পরবর্তী আন্দোলন সমূহে ফতোয়া তত্ত্বের আকারে হাযির ছিল , নানাভাবে। ইসলামি আন্দোলনে ফতোয়ার এই ভূমিকার প্রয়োজনীয়তাকে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হিসেবে উপস্থাপিত করেছিল ‘ফতোয়া বিরোধী’ আন্দোলন। নিতান্ত হালে হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরে ৫ মে’র গণ-বিপ্লবেও ফতোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ক্রিয়াশীল ছিল।

শাহ ওলিউল্লাহর বিপ্লবী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রত্যয় ও উপাদানকে মোটাদাগে উপস্থাপন করব , এবং কিভাবে তা পরিবেশ-পরিস্থিতি ও পরিপার্শ্বিকতাকে আমলে এনেছিল, বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব-

এক. বিপ্লবের তাত্ত্বিক ভিত্তি রচনার প্রকল্প হিসেবে তিনি তিনটি বিষয়কে হাযির করেছিলেন , তার প্রণীত ‘তাফহীমাতে ইলাহিয়া’ তে স্পষ্ট তুলে এনেছেন – প্রথমত, যুক্তি দর্শন – ব্যবহারিক দর্শন যার শাখা। সেসময়ে মুসলিমরা যেহেতু ব্যাপকভাবে বিতর্কমূলক অনুষঙ্গে গ্রীক-দর্শনের প্রয়োগ করতো , তাই বিপ্লবের তাত্ত্বিক ভিত্তির সিলসিলায় তিনি যুক্তিদর্শনকে বিযুক্ত করেন।

দ্বিতীয়ত, সেকালের বিপর্যস্ত বাস্তবতায় রুহানিয়াত বা সুফিবাদ একটি প্রবল প্রতাপশালী কাঠামো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। কোন ব্যাপারে একজন সুফি বা রুহানী ব্যক্তির মূল্যায়ন যতোটা গভীর রেখাপাত করতো , সে তুলনায় রাজনৈতিক ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের ক্ষমতা অতি নগন্য-ই ছিল। রুহানিয়াতের প্রতি উন্নাসিকতা প্রদর্শন করে কোন আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হতো না , লোকজন তাকে আমলে নিত না। ফলে ইমাম ওলিউল্লাহ দেখলেন- রুহানিয়াতের যথার্থ চর্চাকে গতিশীল করা ছাড়া বিপ্লবের স্বার্থকতা কল্পনা করা দুঃস্বপ্ন মাত্র।

গত শতকের ইরান বিপ্লবে রুহানিয়াত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে হাযির থাকাটা শাহ ওলিউল্লাহর বৈপ্লবিক দর্শনের খন্ড চিত্র হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে । একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতার প্রভাব কিভাবে একটি বিপ্লবের সূত্র হিসেবে ক্রিয়াশীল হচ্ছে, তা খুবই তাৎপর্য-পূর্ণ ঘটনা। এবং এটি শাহ ওলিউল্লাহর বৈপ্লবিক দর্শনের একটি প্রাসঙ্গিক নযীর মাত্র।

তৃতীয়ত, কুরান-সুন্নাহ যেহেতু মুসলিম সমাজের জীবনযাত্রার নীতি ও গতিকে প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতো , তাই তিনি স্বীয় বৈপ্লবিক চিন্তাধারার পাটাতন নির্মাণে এর ভূমিকাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। বিপ্লবের পটভূমি নির্মাণে কুরআন যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকবে , তাই কুরআনের পাঠ ও মর্মোদ্ধার যাতে সার্বজনীন ও ব্যাপক হয় সেজন্য তিনি ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান। তার প্রচেষ্টার বৈপ্লবিক কর্মপন্থা হিসেবে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে -ফারসি ভাষায় কুরআনের অনুবাদ। ‘ফাতহুর রহমান’ নামে কুরআনের অনুবাদ প্রকাশের সাথে সাথে সাধারণ আলেম ও জনসাধারণের মাঝে সর্বগ্রাসী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাকে কাফের বা অবিশ্বাসী হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

পাশাপাশি কুরআনের ব্যবহারিক দর্শন ও মূল্যবোধকে তিনি শিক্ষা সংষ্কারের প্রধান প্রকল্প হিসেবে প্রতিস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘কুরআনের মাহাত্ম্যকে যদি তার ভাষাগত সৌন্দর্যের মাঝেই সীমাবদ্ধ করা হয়, তাহলে অল্প লোকেই এর সুফল পাবে। তিনি মনে করতেন, মানবজাতির ব্যবহারিক জীবন সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্যের সর্বজনীনতাই মূলত কুরআনের অলৌকিকত্ব।

দুই. ঐক্য হচ্ছে বিপ্লবের জরুরি উপাদান ,যার অনুপস্থিতিতে বিপ্লবের ব্যর্থতা নিশ্চিত হয়ে যায়। ফলে তিনি অনৈক্যের বিবিধ সংকট গুলো নির্ধারণ করলেন। শাহ ওলিউল্লাহ দেখলেন যে, কালের শিক্ষিত লোকেরা চরম আত্মকেন্দ্রিকতার ব্যাধিতে জরাগ্রস্ত। কোন দুর্বোধ্য, জটিল বিষয়ের সমাধানে কেউ কখনও কারো সাথে আলাপ আলোচনার জরুরত অনুভব করতো না। সবাই নিজস্ব ধারণা ও উপলব্ধিকেই সঠিক বলে বিবেচনা করতো। ফলে মতের বিভিন্নতার সাথে সাথে বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা প্রগাঢ় হতে থাকে। বিশেষত, ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফেয়ী রহ . এর ফিকহের মাযহাবগত বিতর্ক তখন সর্বসমাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। ফিকহী বিতর্ক কেন্দ্রীক অনৈক্যের সমাধা করার জন্য তিনি একটি পুস্তিকা রচনা করেন ‘ আল ইনসাফ ফি বয়ানি সাবাবিল ইখতিলাফ’ নামে। তাছাড়া তার যুগশ্রেষ্ঠ রচনা ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’ তেও তাকলিদ ও মাযহাব প্রসঙ্গে ভারসাম্য বিবরণ তুলে ধরেন । গবেষণা ও অনুকরণকে কাঠামোবদ্ধ ধারণার ভেতর সুনিপুণ ভাবে উপস্থাপন করে গ্রন্থ লেখেন, সেই গ্রন্থ ‘ইকদুল জিদ ফি আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাকলিদ’ নামে প্রকাশিত হয়।

তিন. পূর্বেই এরিস্টটলের উক্তি উল্লেখ করেছি যে, ‘সাম্যের ব্যাকুলতাই হচ্ছে রাজদ্রোহের মূল’। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রসঙ্গকে ব্যাপকভাবে হাযির করা হয়েছে। এবং বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে প্রলেতারিয়েতের সংগ্রামকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এখানে সামান্য একটু পর্যালোচনা হতে পারে যে , ১৮১৮ সালের ৫ মে কার্ল মার্ক্সের জন্ম। শাহ ওলিউল্লাহর জন্ম ১৭০৩ সালে , আর তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭৮৭ বা এর কাছাকাছি সময়ে। অর্থাৎ, শাহ ওলিউল্লাহর ইন্তেকালের একত্রিশ বছর পরে এসে মার্কস অর্থনৈতিক সাম্যের ভিত্তিতে বিপ্লবকে উৎসাহিত করছেন। এই বিবেচনায় শাহ ওলিউল্লাহ অনেক বেশি অগ্রসর। তবে জরুরি একটি বিষয় হলো – শাহ ওলিউল্লাহর বিপ্লবের অর্থনৈতিক সাম্যের ভাবনা ইসলামের নৈতিক প্রশ্নকে সামনে রেখেই উপস্থাপন করা হয়েছিল। মার্ক্সের মতো ‘বলাত্মক বিপ্লবের’ মাধ্যমে অর্থনৈতিক সাম্যের সুরাহার কথা বলা হয়নি।

সুফিবাদী লেখকগন মানুষের নৈতিক জীবনের সাথে অর্থনীতির পারষ্পরিক সম্পর্ক , একটির উপর অন্যটির প্রভাব প্রতিক্রিয়ার গুরুত্ব মোটেও উপলব্ধি করে নি। পক্ষান্তরে শাহ সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা তে বারবার গুরুত্বারোপ করেন যে, ” যদি কোন মানবগোষ্ঠীর মাঝে সভ্যতার বিকাশধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে তাদের শিল্পকলা সম্পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। তারপর শাষকগোষ্ঠী যদি ভোগবিলাস, আরাম-আয়েশ, জাগতিকতায় মোহাবিষ্ট থাকে এবং তাদের উন্মত্ত যাপনের বোঝা মজদুর শ্রেণীর উপর চাপিয়ে দেয় , তখন সমাজের অধিকাংশই মানবেতর জীবন যাপন করে। মানবতার এ চরম নির্যাতন ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময়ে , এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা নিশ্চিতভাবেই কোন একটি পথের নির্দেশ করেন। অর্থাৎ, আল্লাহ নিজেই একটি বিপ্লবের আয়োজন করেন। জনগণের বুকের উপর থেকে বেআইনি শাষক চক্রের জগদ্দল পাথর অপসারণের ব্যবস্থা করেন। [৬]

মোটকথা, সমাজ জীবনে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিধান নিতান্তই জরুরি ব্যাপার। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তার প্রত্যাহিক জীবনের যাবতীয় প্রয়োজন মিটে যায়। জীবিকা সংস্থানের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হবার পর মানুষ নীতি, আদর্শের পথে প্রশান্তিতে চলতে সক্ষম হয়।

শাহ ওলিউল্লাহর বৈপ্লবিক চিন্তার প্রাসঙ্গিকতা :

কাল বা সময়কে যদি অখন্ড বিবেচনা করি , তাহলে বলতে হবে -কালের কোন সীমারেখা নাই , বিভাজন নাই। কাল তার সমগ্রটা সহকারে একটা কাল ; মহাকাল। আমরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে কালের যে বিভাজন করি , তা করি মূলত অতীতের ঘটনাবলী থেকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা হাসিলের জন্য। এবং সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে একটি সুখকর ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য। অতীতকে গত ভেবে যারা তৃপ্তির ঢেকুর তোলে , বর্তমানে হাযির করতে পারে না, অতীতের অভিজ্ঞতাকে বিনির্মান প্রক্রিয়ার অধীন করতে ব্যর্থ যারা – ভবিষ্যতে তাদের কোন ইতিহাস-ই ইতিহাস হিসেবে স্বীকৃতি পায় না।

এই যে শাহ ওলিউল্লাহর যুগ – এটা এতো দূরের নয় যে, অলিখিত বা বিলুপ্ত বলে অবজ্ঞা করা যাবে। আবার এতো নিকটেও নয় যে, বিবেচনাহীন ভাবে বর্তমানের সাথে একে শ্লেষ করতে পারবেন। বরং, তার যুগ ও বর্তমানের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। ইতিহাস বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটি সরল কথা হচ্ছে – অতীতের বয়ান বা চিন্তাকে বুঝতে হলে বর্তমান চিন্তার আলোকে নয়, বরং , সেই সময়ের পটভূমিতে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। নতুবা ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠ বোঝাপড়া সম্ভব না। হ্যা! অতীতের বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এটি অতি উত্তম প্রস্তাব।

কিন্তু, অতীতকে যখন বর্তমানের পটভূমিতে প্রয়োগ করা হবে, অতীতের প্রাসঙ্গিকতা নির্মাণের প্রচেষ্টা চালানো হবে, তখন বিভিন্ন বিষয়ের বিবেচনা এসে হাযির হবে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শাহ ওলিউল্লাহকে কিভাবে হাযির করা হবে, এদেশের ইসলামি রাজনীতিতে তার বৈপ্লবিক চিন্তাধারা কতোটা গভীর প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা রাখে – এসব দিকের বিবেচনা ছাড়া শাহ ওলিউল্লাহ রহ. এর চেতনা কখনও চৈতন্য পাবে না।

তৎকালীন আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শাহ ওলিউল্লাহ যতোগুলো বৈপ্লবিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছিলেন, তার সবই অতীতের মতোই বর্তমানেও হুবহু বিবেচনায় গ্রহণীয় ও প্রাসঙ্গিক। সবগুলোর বিশ্লেষণে গেলে লেখার দীর্ঘ হয়ে যাবে। এখানে সামান্য একটি বিষয়ে আলোচনা করবো, যা ইতিহাসের বিবর্তনে নতুনভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

বাদশাহ আলমগীরের মৃত্যুর চার বছর পূর্বে শাহ ওলিউল্লাহর জন্ম। জন্মের পর থেকেই তিনি দশজন শাসকের উত্থান-পতন , ঘাত-প্রতিঘাত লক্ষ্য করেছেন। নানামুখী বিপর্যয়কে সামনে রেখে তিনি বিপ্লবের ভিত্তি রচনা করেছেন। সর্বশেষ যখন অন্ধ শাসক শাহ আলমের হাত থেকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে লর্ড ক্লাইভ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দখল নিয়ে নেয় , এর দুই বছর পর শাহ ওলিউল্লাহ ইন্তেকাল করেন। উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে ওলিউল্লাহর বৈপ্লবিক চিন্তাধারার ফলাফল ছিল সুদীর্ঘ প্রসারিত। ৪৭ এর স্বাধীনতা পর্যন্ত ‘উপনিবেশ বিরোধী’ যতোগুলো ইসলামি আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল, কোন না কোনভাবে তাতে শাহ ওলিউল্লাহর বৈপ্লবিক দর্শনের প্রভাব ক্রিয়াশীল ছিল।

বাদশাহ আলমগীরের জীবদ্দশায় দুটি ভয়ঙ্কর আন্দোলন দানা বেঁধেছিল – পাঞ্জাবের শিখ আন্দোলন ও শিবাজির নেতৃত্বে খালেছ হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পরিচালিত ‘মারাঠা আন্দোলন’। এখানে বিজাতীয় আধিপত্যের সংকট লক্ষ্য করছিলেন শাহ ওলিউল্লাহ। তাই তার বৈপ্লবিক চিন্তাধারার একটি অন্যতম সূত্র হিসেবে আধিপত্যের প্রশ্নকে হাযির করা হয়।

উত্তর উপনিবেশিক পটভূমিতে সংকটের অন্যতম একটি উৎস হচ্ছে বিশ্বায়ন। জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তিতে উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা পেলেও বিশ্বায়নের কারণে এখন স্থানীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ পরিবর্তন এসেছে। শক্তিশালী দেশের সংস্কৃতি স্থানীয় সংস্কৃতির উপর প্রাধান্য বিস্তার করছে। ফলে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো, বিশেষত বাংলাদেশ তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে। শক্তিশালী ও প্রতাপশালী দেশ বাংলাদেশের উপর নানাভাবে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে আগ্রহী। প্রতাপশালী দেশ বলতে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপকে বুঝলে চলবে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতও কম শক্তিধর নয়। সীমান্ত প্রশ্নেই ভারতকে ভিন্নভাবে বিবেচনা করতে হবে।

একটি বিপ্লবী আন্দোলনের গাঠনিক প্রাতিষ্ঠানিকতা কতোটা প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ , তার নযির শাহ ওলিউল্লাহর আন্দোলনে আমরা পাই। তাছাড়া এটি কতোটা শক্তিমত্তার সাথে সমকালীন প্রেক্ষাপটে প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা রাখে , তা উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে দেখা গেছে। নেতা ও নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থার যে অসামান্য উদাহরণ শাহ ওলিউল্লাহ থেকে নিয়ে আহমদ শহীদ, শাহ ইসমাইল শহীদ সহ অন্যান্যদের প্রতি মুসলিম জনসাধারণগণ দেখিয়েছেন , একটি বিপ্লব পরিচালনা ও তার সফলতার জন্য সেটি খুবই জরুরি ছিল।

২০১৩ সালের মে’ মাসে শাপলা চত্বরে, মুসলিম যুবক ও ছাত্রদের মধ্যে যে শৃঙ্খলাবোধ , নেতা ও নেতৃত্বের প্রতি সীমাহীন আস্থা দেখা গেছে – সেটি অবশ্যই শাহ ওলিউল্লাহর বৈপ্লবিক চিন্তাধারার নিখুঁত বাস্তবায়ন। এখানে বিপুল একটি জনশক্তি একজনের আদেশের অপেক্ষা করছিল, জীবন দিয়ে সে আদেশ মান্য করছিল। ঠিক এই গুণাবলীর কারণেই কিন্তু উপমহাদেশে বিপ্লব সম্ভব ও সার্থক হয়েছিল।

নির্ঘণ্ট :

[১] পলিটিক্স, এরিস্টটল , অনুবাদ -নির্মল কান্তি মজুমদার, পঞ্চম খন্ড।

[২ ] কিতাবুছ ছাওরাত , সালামা মূসা, পৃ . ৫৬

[৩ ] ফালসাফাতুছ ছাওরা ফিল মিযান , আব্বাস মাহমুদ আল-আক্কাদ। পৃ . ৬

[৪] আলতাফ পারভেজের লেনিনের ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ বইয়ের পর্যালোচনা, পৃ-১০৭

[৫] শাহ ওলিউল্লাহ আওর উনকি সিয়াসি তাহরীক , উবাইদুল্লাহ সিন্ধী, পৃ . ১৩

[৬ ] ইযালাতুল খিফা আন খিলাফাতিল খুলাফা , শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভী, পৃ . ৭০

লেখক পরিচিতি:
খালিদ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ
জামিয়াতুল উলুমিল ইষলামিয়া ( মুহাম্মদপুর)
লেখক
গবেষক
অনুবাদক

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *