Asrar e khudi -Allama Iqbal(The Secrets of the Self)
[ বিশ্বের গতিধারার মূল উৎস আত্ম। প্রতিটি মানবের জীবনের ধারাবাহিক গতি নির্ভর করে আত্মাকে শক্তিশালী করে তোলার উপরে।]
অস্তিত্বের রূপ হল আতার পরিণাম,
সবকিছুই আত্মার রহস্য-
যা দেখছ তুমি,
জাগ্রত হল যখন আত্মা চৈতন্যে।
প্রকাশ করলে সে।
চিন্তার বিশ্ব।
নির্যাসে তার শত বিশ্ব লুক্কায়িত :
আত্ম-অনুভূতি আনয়ন করে বে-খুদিকে
প্রকাশ আলোকে।
আত্ম দ্বারা।
ধরিত্রীর বুকে রোপিত হয়
বিরোধের বীজ :
অনুভব করে সে তার নিজেকে
অন্যতর রূপে
তার নিজের থেকে।
গঠন করে সে আপনার থেকে
অপরের রূপ
বর্ধন করার জন্য
দ্বন্দ্বের আনন্দ।
এত হত্যা আপনার বাহুবলে
যেন সে অনুভব করতে পারে
আপনার শক্তি।
তার আত্মপ্রবঞ্চনা হল
জীবনের নির্যাস ;
সে বেঁচে থাকে রক্তধারায় স্নান করে
গোলাবের মতো।
সে ধ্বংস করে শতেক গোলাব-বাগিচা
একটিমাত্র গোলাবের জন্য ;
জাগিয়ে তোলে শতেক আর্ত- বিলাপ
একটিমাত্র সুর সৃষ্টির জন্য।
এক আকাশের জন্য
সে প্রকাশ করে শতেক নবচন্দ্র,
একটি বাণীর জন্য শত শত কথার মালা,
এই অপব্যয় ও নিষ্ঠুরতার কৈফিয়ত
রূপ দেওয়া আর পূর্ণ করে তোলা
আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যকে।
শিরির সৌন্দর্য সমর্থন করে
ফরহাদের যাতনা,
একটিমাত্র মৃগনাভি সমর্থন করে
শতেক কস্তুরী-মৃগের মৃত্যু।
পতঙ্গের ভাগ্য
আত্মবিসর্জন করা জ্বলন্ত অগ্নিকাণ্ডে,
তার এ শাস্তি সমর্থন করে প্রদীপ।
আত্মার তুলি
চিত্রিত করে বর্তমানের শতেক দিবসকে
এগিয়ে আনতে ভবিষ্যতের
একটিমাত্র পূর্বাশা।
অগ্নি তার দগ্ধ করেছে শতেক ইব্রাহিমকে
প্রজ্বলিত করতে মুহাম্মদের একটি প্রদীপ।
কর্তা, কর্ম, কার্য, কারণ—
সবকিছুই রূপ সেই কর্মের উদ্দেশ্যের।
আত্ম হয় জাগ্রত, প্রোজ্জ্বল, পতনশীল,
আবার হয় বিভাময়, জীবন্ত,
সে হয় দগ্ধ, আলোময়, চলমান ও উড়ন্ত।
সময়ের বিস্তিৃতি তার লীলাক্ষেত্র ।
স্বর্গ তার পথের ধূলি-তরঙ্গ।
তার গোলাব-বাগ থেকে
বিশ্ব হয় গোলাবে ভরপুর ;
রাত্রি জন্ম নেয় তার নিদ্রায়,
দিন জেগে ওঠে তার জাগরণে।
বিভক্ত করেছে সে তার অগ্নিকুণ্ডকে ফুলিঙ্গে
আর জ্ঞানকে শিখিয়েছে ।
বৈশিষ্ট্যের পূজা।
সে ধ্বংস করেছে নিজেকে
আর সৃষ্টি করেছে পরমাণু,
সে বিস্তৃত হয়েছে ক্ষণিকের জন্য
আর সৃষ্টি করেছে বালুকারাশি।
তারপর সে তার ব্যাপ্তিতে হল কান্ত,
আবার একত্রীভূত হয়ে হল
পর্বতমালা।
এই হল আত্মার প্রকৃতি
নিজেকে প্রকাশমান করতে :
প্রতি পরমাণুতে
আত্মার শক্তি রয়েছে তন্দ্রালস।
শক্তি -যা রয়েছে অপ্রকাশ ও নিষ্ক্রিয়
কর্মশক্তিকে করে সুশৃঙ্খল।
বিশ্ব-জীবন যতবেশি করে আসে
আত্মশক্তি থেকে,
জীবন ততই এই শক্তির সাথে রাখে সামঞ্জস্য ।
একটি জলবিন্দু যখন লাভ করে আত্মার
শিক্ষা।
তার অন্তরে,
সে তার মূল্যহীন সত্তাকে করে তোলে একটি
মুক্তা।
সুরা রূপহীন,
কারণ ‘অহম’ তার দুর্বল ;
সে তার রূপ পরিগ্রহণ করে
পাত্রের করুণায়।
যদিও সুরাপাত্র গ্রহণ করে রূপ
তবু সে ঋণী আমাদের কাছে
তার গতির জন্য।
পর্বত যখন হারিয়ে ফেলে।
তার আপনাকে,
পরিণত হয় সে বালুকায়,
আর অভিযোগ করে যে সমুদ্র স্ফীত হয়ে
ওঠে।
তার উপরে ;
তরঙ্গ—যতদিন থাকে সে
সমুদ্রবক্ষে তরঙ্গ হয়ে,
আরোহী হতে পারে সমুদ্রপৃষ্ঠে।
আলোক গ্রহণ করলে চক্ষুর রূপ
আর দিগ্বিদিক চলতে লাগল
সৌন্দর্যের সন্ধানে।
তৃণ যখন পেল তার আত্মার ভিতরে
বর্ধনের শক্তি,
তার আকাঙ্ক্ষা বিদীর্ণ করে দিল বাগিচার
বুক।
মোমবাতি তার নিজেকে করলে একত্রীভূত
আর গড়ে তুললে তার আপনাকে
পরমাণু থেকে ;
তারপর সে লাগলে গলতে।
আর আপনার সত্তা থেকে পলায়ন করতে,
বেয়ে পড়তে লাগলে সে আপনার আঁখি থেকে
অশ্রুর মতো।
যদি অঙ্গুরীয়ের প্রস্তরাধার হত
স্বভাবতই আত্বসংরক্ষিত,
ভোগ করত না সে আঘাত;
কিন্তু যখন শিরোনামা দ্বারা
হয় তার মূল্য নিরূপিত,
স্কন্ধ তার আহত হয় অন্যের নামের বোঝায়।
যেহেতু বিশ্ব রয়েছে দৃঢ়রূপে স্থিত
তার আপন ভিত্তিতে,
বন্দি চন্দ্র ঘুরে চলে তার চারিদিকে
নিরবচ্ছিন্ন গতিতে।
সূর্যের সত্তা বলিষ্ঠতর ।
পৃথিবীর চেয়ে
বিশ্ব তাই আপনভোলা।
সূর্যের আঁখির আলোয়।
রক্তবর্ণ বীচের ‘রঙের মহিমা
নিবদ্ধ করে আমাদের আঁখিযুগ,
পর্বত হয় ঐশ্বর্যশালী
তার গৌরবে :
পরিচ্ছদ তার অগ্নিতে বোনা,
মূল তার একটি আত্মপ্রত্যয়শীল বীজের
মধ্যে।
জীবন যখন শক্তি সঞ্চয় করে
আত্মা থেকে,
জীবন-তটিনী বিস্তার লাভ করে
সমুদ্রের মহত্বে।
তরজমাঃ সৈয়দ আবদুল মান্নান