Shikwa- Muhammad Iqbal
শিকওয়া
নেজদের গিরি নীরব নিথর ,
নাহি জিঞ্জির – ঝঞ্ঝনা ;
হাওদার মাঝে উঁকি দিয়ে আর
ফেরে না কায়েস উন্মনা ।
বক্ষ টুটিয়া চিরতরে হায়
উচ্চাকাঙ্ক্ষা গিয়াছে চলি
আঁধার কুটীর উজলিয়া মোর
রূপশিখা তব উঠে না জ্বলি ।
হেন শুভ দিন হবে কি আবার
ফিরিবে আনন শরমে ভরি
গুন্ঠহীন সুষমা তোমার
মোর সভা দিবে উজল করি ।
বেগানার প্রেম মশগুল যারা
বসিয়া স্নিগ্ধ নিঝর -তীরে
শুনে কুহুতান আবেশে বিভোর
হাতে লয়ে পান-পাত্রটিরে ।
সেই আনন্দ- কোলাহল হতে
বহু দূরে কারা বসিয়া হায় ,
চির বঞ্চিত প্রেমিক তোমার
কেবল হু - এর প্রত্যাশায় ।
বহ্নি- প্রীতি সঞ্চার পুন
পেলব পরাণে পতঙ্গের
নিরবাপিত বিদ্যুতে দাও
বজ্র- দাহন জ্বালাতে ফের ।
হইল আবার হেজাজ – মুখীন
ছত্রভঙ্গ অবোধ জাতি ,
পক্ষবিহীন বুলবুল উড়ে
নবীন আশার পুলকে মাতি ।
অফুট কোরকে কাঁদিছে গন্ধ
টুটিবারে কারা – বন্ধনের ,
দাও গো আঘাত বীণার তন্ত্রী
মিলন – পিয়াসী মেজরাবের ।
প্রকাশ – ব্যথায় চঞ্চল আজি
বক্ষে তাহার স্তব্ধ সুর ,
সেই প্রেমদাহে হইতে দগ্ধ
উন্মুখ পুন পাহাড় তুর ।
শান্তি - স্নিগ্ধ কর হে আবার
ভক্তের চির ব্যথিত প্রাণ ;
হোক পিপিলিকা সোলেমান - জয়ী
লভিয়া তোমার দয়ার দান ।
দুর্লভ তব প্রেমকাঞ্চন
আবার সুলভ করিয়া দাও ,
মন্দিরচারী মূর্তি- পূজকে
ইসলামে পুন দীক্ষা দাও ।
আশাহত মোর পুঞ্জর ভেদি
তপ্ত রুবির বহিয়া যায় ,
ক্ষতের আগার বক্ষ বিদারি
অধীর কাঁদন আসিছে হায় ।
যে গোপন বাণী ছিল গো শুপ্ত
পাতার সবুজ বক্ষ পর
কুসুম তাহারে করিল প্রচার
আপনি সাজিয়া গুপ্তচর
ফুলের ফসল ফলেনা কো আর
ছিন্ন আজিকে বীণার তার;
গায়ক পাখিরা উদ্যান – মাঝে
সুমধুর গীতি গাহে না আর ।
নির্জন বাগে এক বুলবুল
অতীত মহিমা করিছে গান ;
বক্ষে তাহার সুরের ঝটিকা ,
কন্ঠে বাজিছে গভীর তান।
কোন সে সুদূরে গিয়েছে কপোত
দেবদারু – শাখা শূন্য করি ,
কালের পীড়নে কোমল কুসুম
পল্লব দল পড়িছে ঝরি ।
চির সুশীতল উদ্যান – বীথি
শ্যামলিমাহীন হয়েছে আজ ,
নগ্নমূর্তির হের শাখীকুল
খুলিয়া হরিৎ পত্র- সাজ ।
ঋতুর প্রভাব মানে না এ পাখি
মুক্তকন্ঠ স্বাধীন প্রাণ ;
সুদিন আবার আসিত ফিরিয়া
কেহ যদি তার শুনিত গান ।
নাহি সুখ কিছু মৃত্যুবরণে
জীবনেও নাহি শান্তি আর ;
থাকে যদি কিছু শুধুই শোষণে
বুকের তপ্ত রক্তধার ।
জ্যোতির চমক কত না সুপ্ত
আমার পরাণ – মুকুর গায় ,
কত অশান্ত সুষমা – লহরী
হিয়ার – মাঝারে উথলে হায় !
হায়রে আজিকে নাহি দর্শক ,
হেরিবে কে রূপ – লহরী – মালা ?
বুকে দাগটুকু রাখিবে তুলিয়া
কই ফোটে সেই মোহন লালা ?
দ্বিধা হোক হিয়া শুনি গীতসুধা
সাথীহারা এই বুলবুলির ,
জাগিয়া উঠুক পরাণ আবার
তূর্য – নিনাদে অগ্রনীর ।
নবীন প্রেমের অনুরাগ পুন
করুক স্নিগ্ধ তাপিত প্রাণ,
তৃষ্ণাতুর হোক কন্ঠ আবার
পুরাতন সুরা করিতে পান !
পাত্র আমার নহে আরবের ,
আরবী সুরায় নিয়েছি পুরে ,
হোক না এ গান হিন্দুস্তানী ,
বাঁধিয়াছি সুর হেজাজী সুরে ।
- তামামশোধ*
তথ্য সূত্র: শিকওয়া- মুহাম্মদ ইকবাল
তর্জমা: মুহাম্মদ সুলতান