Interview with Muhammad Iqbal:

ইকবাল কবি হিসেবে বড় ছিলেন, না দার্শনিক হিসেবে? এত বিরোধের মীমাংসা না হলেও তিনি যে একজন বড় দার্শনিক- কবি ছিলেন-তাতে কারো দ্বিমত নেই। এ দার্শনিক-কবি জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি যেমন ছিলেন একজন প্রাক্ত রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট আইনবিদ, অন্যতম অর্থনীতিবিদ, আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ, তেমন একজন সূফী তাত্ত্বিক এবং প্রখ্যাত সংস্কারকও। তিনি তাসাউফে আস্থাশীল ছিলেন। সুতরাং সূফী তাত্ত্বিকদেরকে খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। বস্তুত উত্তরাধিকার সূত্রেও তিনি একজন তাসাউফপন্থী ছিলেন। বিখ্যাত সূফী সাধক খাজা হাসান নিজামীকে ১৯১৫ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর এক পত্রে তিনি লেখেন । আমার সম্পর্কে আপনি জ্ঞাত যে, আমার স্বভাব-প্রকৃতি ও বংশগত ঝোঁক তাসাউফের দিকে। যেহেতু মানুষের আত্মার বিকাশ ও উৎকর্ষণই ছিলো কবির আজীবনের সাধনা, সুতরাং যে তাসাউফ এ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ, সে তাসাউফে তিনি বিশ্বাস করতেন না। কারণ তিনি ছিলেন নির্ভেজাল ইসলামী তাসাউফে বিশ্বাসী। অতএব খাঁটি ইসলামী তাসাউফ বিষয়ক একটি পত্রিকা প্রকাশ করার জন্যে বন্ধু মুন্সী মুহম্মদ দীন ফওককে অনুরোধ করেন। অবশেষে ইকবাল কর্তৃক অনুরুদ্ধ হয়ে ফওক সাহেব ১৯১৪ সালের আগস্ট মাসে ‘তরীকত’ নামে একটি তাসাউফ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এ পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি উপমহাদেশেরে বিশিষ্ট মনীষী ও সুধীবৃন্দের জ্ঞানগর্ব রচনাবলী সমৃদ্ধ হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। এসব মনীষীর মধ্যে ছিলেন হযরত ইহসান শাহজাহানপূরী, খাজা হাসান নিজামী, আকবর এলাহাবাদী, খান আহমদ হোসাইন খান, মহারাজা কৃষ্ণপ্রশাদ শাদ ও খাজা আবদুর রউফ ইশরত প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
তবে পত্রিকার অন্যতম আকর্ষণ ছিলো ‘ফওক’ সাহেব কর্তৃক গৃহীত আল্লামা ইকবালের একটি সাক্ষাৎকার । এ সাক্ষাৎকারে তিনি সূফীতত্ত্ব, তাসাউফ, পীরের সিলসিলার। প্রয়েজনীয়তা ও কবর জিয়ারত প্রভৃতি বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন। কবির এ মূল্যবান সাক্ষাতকারটি দীর্ঘদিন ইতিহাসের পাতায়ী চাপা পড়েছিলো। বিশিষ্ট ইকবাল গবেষক মুহম্মদ আবদুল্লাহ্ ‘কোরাইশী’ অনেক পরিশ্রম করে রচনাটি উদ্ধার করেন। পুরাতন পত্রিকার পাতা থেকে উদ্ধার করে তিনি তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ ‘হায়াতে’ ইকবাল কি গুম শোদাহ কড়িয়াতে পত্রস্থ করেন। এখানে আমরা সাক্ষাৎকারের ভাষান্তর পেশ করছি।

প্রশ্নোত্তর-

ফওকঃ সূফীদের দ্বারা ইসলামের কি উপকার হয়েছে?

ইকবালঃ সূফী সাধকগণ সাধারণত, বিশেষ করে উপমহাদেশের সূফী সাধকগণ এদেশে ইসলামের সম্প্রসারণে অমূল্য অবদান রেখেছেন। তীর তলোয়ারের পরিবর্তে তাঁরা কেবল সদাচরণ ও মুহম্মদী চরিত্রের দ্বারা এমন ভাবে ইসলাম প্রচার করেছেন যে, হিন্দুস্তানের (উপমহাদেশের) সাতকোটি (১৯১৪ সালে) মুসলমানদের মধ্যে নিঃসন্দেহে ছয় কোটি এসব বুজুর্গের অবদান ও প্রচেষ্টার ফল।

ফওক: সূফীদের দ্বারা মুসলমানদের কি উপকার হয়েছে?

ইকবালঃ মুসলমানদের নৈতিক জীবনে সুফী সাধকগণ এক বিরাট প্রভাব ফেলেছেন-নৈতিকতার বিচারে যেমন মানবিক গুণাবলী রয়েছে এগুলো তো কেবল এ সমস্ত বুজুর্গদেরই। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দরুন বিস্তার লাভ করেছেন। তাঁরা প্রথমে মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করেছেন এবং পরে মুসলমানদেরকে প্রকৃত মুসলমান রূপে গড়ে তুলেছেন।

ফওকঃ তাদের দ্বারা মুসলিম রাজনীতির কি উপকার হয়েছে?

ইকবালঃ সূফীরা চিরকালই রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছেন। তাসাউফের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘তাযকিয়ায়ে নফস’ (আত্মশুদ্ধি), বাতিলের সংস্কার ও প্রবৃত্তির দমন, সুতরাং তাঁরা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে মোটেও দখল দেননি। তবে যে-সব সুলতান স্বীয় রাজকীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা দেখিয়েছে, রাষ্ট্রে গোলযোগ, অরাজকতা ও বিপর্যয় ডেকে এনেছে তাদেরকে শিক্ষামূলক ও সাবধানতামূলক উপদেশ দিয়েছেন। এসব কথা ইতিহাস অধ্যয়ন ও সূফীদের জীবনী আলােচনা করলে জানা যায়।

ফওকঃ ইসলামী তাসাউফ দুনিয়াদারী সম্পর্কে কি শিক্ষা দেয় ?

ইকবালঃ ইসলামী তাসাউফের শিক্ষা হচ্ছে দ্বীনের সাথে সাথে দুনিয়াকেও ধরে রাখা। ইসলাম বৈরাগ্যবাদের পরিপন্থী। ঘর-সংসার ও পরিবার-পরিজন ত্যাগ করে বনে-জংগলে গিয়ে নির্জনবাসে আল্লাহর ধ্যান ইসলাম পছন্দ করে না। যে ব্যক্তি কেবল নিজের জন্যে যোগ সাধনা করে, ইসলাম তাকে ফলহীন বৃক্ষ এবং শুষ্ক ঝর্ণার সাথে তুলনা করে। নিঃসন্দেহে একাগ্রতা লাভ করার জন্যে নির্জনতা ও নিঃসংগতা আবশ্যক। কিন্তু সমস্ত মানুষ এ কাজের উপযুক্ত নয়।বস্তুত দুনিয়াবাসীদের কল্যাণের দৃষ্টিতে বৈষয়িকতা ত্যাগ করা হলো একটা খারাপ দৃষ্টান্ত। বরং এটা হচ্ছে ঐশ্বরিক বিধানের একান্ত পরিপন্থী। ঐশ্বরিক বিধান মানব বংশ বৃদ্ধি, তার বিকাশ ও উৎকর্ষের দাবীদার।।

ফওকঃ ‘ওরস’ প্রথার সূত্রপাত কখন হয়েছে?

ইকবালঃ আরব ও অন্যান্য ইসলামী রাষ্ট্র সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে হিন্দুস্তান সম্পর্কে ধারণা হলো যে, হিন্দু সমাজে যেহেতু দীর্ঘদিন থেকে যাত্রার প্রথা অব্যাহত রয়েছে এবং কোন কোন তীর্থ যাত্রায় তারা দূর দেশ থেকে আসতো, সুতরাং ধীরে ধীরে তারা ইসলামে দীক্ষিত হতে আরম্ভ করলে তাদেরকে ইসলামের সাথে পরিচিত করানোর উদ্দেশ্যে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। কারণ, এটা তাদের সাবেক ধর্মীয় ও জাতীয় প্রথার সাথে কোন না কোন রূপে সাদৃশ্য রাখে। এটা আমার একটা অনুমানবিশেষ, নিশ্চিত জ্ঞান নয়।

ফওকঃ ওরস উদযাপনের উদ্দেশ্য কি?

ইকবালঃ বস্তুত ওরসের অর্থ হচ্ছে যে বুজুর্গের ‘ওরস’ উদযাপন করা হয় তাঁর জীবনের শিক্ষণীয় বিষয়াদি আলোচনা করা এবং মানুষকে তাঁর আচরিত সব কর্মাদি অবলম্বন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো যে, বর্তমানে উদ্যাপিত ওরসের বেশীর ভাগই তার মূল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে গেছে। মানুষ উদ্দেশ্যহীনভাবে ওরস উদযাপন করছে।

ফওকঃ আধুনিককালের সংগ্রামে সুফী সম্প্রদায় কি করে আমাদের জন্যে উপকারী হলে পারেন?

ইকবালঃ তাহলে তাসাউফ, বিশেষ করে যে সমস্ত প্রভাবশীল সূফী সাধক স্বীয় ভক্তবৃন্দের বিরাট বৃত্তের অধিকারী, এসব ভক্তবৃন্দ ও দোয়া প্রার্থীদেরকে স্বীয় প্রভাব বৃত্তে ধরে রাখা একান্ত জরুরি এবং ধর্মীয় ও নৈতিকতার দিক থেকে তাদের জীবনকে সফল জীবনে পরিণত করা খুবই আবশ্যক। সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্যে চেষ্টা সংগ্রাম করাও এক প্রকার জাগরণ। আর এ জাগরণ যখনই আসবে, সূফী সাধকদের পবিত্র জীবন ও তাদের অবদানে মাধ্যমেইআসবে।

ফওকঃ অলি আল্লাহদের কেরামত সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?

ইকবালঃ আমি কেরামতে আস্থা রাখি এবং আমি মনে করি যে, যে-সব নিস্পাপ জীবনের অধিকারীদেরকে আল্লাহ তা’য়ালা বিশেষ হৃদয় ও মন দান করেছেন, আর তাযকিয়ায়ে নফসে যারা কামালিয়াত অর্জন করেছেন- তারা ধনুক থেকে নির্গত তীর আর শুষ্ক যবেও পানি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।

ফওকঃ কবর যিয়ারতে যাওয়া উচিৎ কি অনুচিত?

ইকবালঃ এর উদ্দেশ্য যদি কবর পূজা হয় অর্থাৎ কবরবাসীর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করা যদি এর উদ্দেশ্য হয়, কোন কিছু ভিক্ষা করা যদি এর উদ্দেশ্য হয়, যেমন আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে তাঁর কাছে প্রার্থনা করা হয়; তা হলে আমি এর ঘোর বিরোধী বরং এ কাজকে আমি জঘন্য পাপ মনে করি। আর কবরে যাবার উদ্দেশ্য যদি ফাতেহা পাঠ করা হয়, শিক্ষা গ্রহণ করা কিংবা মৃত্যুকে স্মরণ করা হয় তাহলে আমার মতে এ কাজ দোষণীয় নয়, বরং অবশ্য করণীয়। আর আমি এও বিশ্বাস করি যে, কবরস্তানে গেলে; বিশেষ করে কোন হৃদয়বান মহাপুরুষের মাজারে হাজিরী দিলে মানুষের অন্তরের কলুষতা দূর হয় এবং আত্মা পরিশুদ্ধ হয়।

ফওকঃ পীর ধরার প্রয়োজন আছে কি?

ইকবালঃ পীর বা মোর্শেদের প্রয়োজন রয়েছে। পীরের পথ প্রদর্শন ছাড়া মানুষ সঠিক, নির্ভুল ও কামেল পথের সন্ধান লাভ করতে পারে না। এসব বুজুর্গের কাছে আত্মিক কল্যাণ কেবল তারাই লাভ করতে সক্ষম যারা হৃদয়বান। যাদের অন্তরে সংবেদনা বিদ্যমান। যাদের হৃদয়ে উচ্চতা ও মনে ব্যাকুলতা রয়েছে। কিন্তু নূ্ন্যতম নৈতিক কল্যাণ প্রত্যেক মুরিদই লাভ করতে সক্ষম। পীরের সান্নিধ্যে থেকে (ধর্ম ব্যবসায়ী পীর না হওয়া শর্ত) প্রত্যেক মুরীদই তার চরিত্র ভাল, যার কর্ম সৎ, যার আমলকে সৎ আমল রূপে অভিহিত করা যায়-তার চাইতে উত্তম মানুষ আর কে হতে পারে?

ফওকঃ অতীতের মত পীর বর্তমানে সৃষ্টি হচ্ছে না কেন?

ইকবালঃ এর কারণ হলো যে, বর্তমান সমাজ ঐ সমস্ত গুণাবলী শূন্য, যার কারণে এ ধরনের সৎ লোক সৃষ্টি হয়। ইউরোপ ও আমেরিকায় বড় বড় জ্ঞানী গুণী দার্শনিক এবং আবিষ্কারক উদ্ভাবক সষ্টি হয়, বরং দুনিয়ার বৈষয়িক ক্ষেত্রে তারা যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিল ও নিত্য-নর্তন বস্তু । আবিষ্কারের দ্বারা যে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে, তা গোটা বিশ্বকে এবং বিশেষ করে হিন্দুস্তানকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ সম্পর্কে কি কেউ কোন দিন চিন্তা করে দেখেছে যে, ইউরোপ ও আমেরিকার মত বিশিষ্ট পন্ডিত, দার্শনিক ও আবিষ্কারকদের মত বিশিষ্ট ব্যক্তি অন্য দেশে কেন সৃষ্টি হচ্ছে না? এ প্রশ্নের উত্তরে এ সমাজ সম্পর্কে এ ছাড়া আর কোন মন্তব্য করা সম্ভব নয় যে, যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা নেই, যেখানে মস্তিষ্ক দ্বারা চিন্তা-ভাবনা করা হয় না, সেখানে কি করে দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক সৃষ্টি হতে পারে? তবে কিছু ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা তাঁর আপন কুদরতে কামেল দেখাবার জন্যে কোন কোন সময় এমন কতিপয় বিষয়ও প্রকাশ করে থাকেন যে, সমাজের প্রভাব সেই তিমিরেই থেকে যায়। আর মানুষকে স্বীয় অক্ষমতা ও তাঁর দাসত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হতে হয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ গৌতম বুদ্ধের রাজ বংশে জন্মগ্রহণ করা ও পরে অন্যান্য জীবন অবলম্বন করা। এখানে গৌতমের পারিপার্শ্বিক সমাজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, তার পারিপার্শ্বিক সমাজে রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য ও কান্না একেবারেই অনুপস্থিত ছিলো। তার আশে-পাশে আনন্দ-উৎসব ও বিলাসীতার প্রাচুর্য বিদ্যমান ছিলো। এ অবস্থায় একজন সম্রাটের সুখ-দুঃখ যন্ত্রণাকে হৃদয় দ্বারা অনুভব করে। সে বিশ্বের সমস্ত দুঃখ-যন্ত্রণাকে স্বীয় বেদনা রূপে বিবেচনা করে। অতএব যন্ত্রণায় ব্যাকুল হয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রাজত্ব পায়ে ঠেলে দেন।
যে আরবের চতুর্দিকে এমন জাহেলিয়াত, বর্বরতা ও অসভ্যতা বিরাজমান ছিলো যে, দাঙ্গা,ফাসাদ, নরহত্যা ও কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবরদান এবং অন্যান্য গর্হিত অপরাধ কেবল সাধারণ ব্যাপারই জ্ঞান করা হতো। সেখানে এক ব্যক্তি (স.) অসাধারণ হৃদয় নিয়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত হন। এবং গোটা বিশ্বে এক অবিনশ্বর বিপ্লব সাধন করেন ও মানুষের হৃদয়ের অমোহনীয় অবস্থা সৃষ্টি করেন। এখানে আমি হযরত মুহম্মদ (স.)-কে বোঝাতে চেয়েছি, যিনি হচ্ছেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মহাপুরুষ ও আল্লাহর রহমত কৃপা ও অনুগ্রহের বিশেষ অভিব্যক্তি এক দৃষ্টান্ত। তাঁর (স.) আশেপাশে ও প্রতিবেশে যে প্রকার চিন্তাধারা এবং পরিস্থিতি বিরাজমান ছিলো মাওলানা হালী তাঁর এক গদ্যে তার নিখুঁত চিত্র অংকন করেছেন। সংক্ষেপে বলা যায় যে, আরব ব্যবসায়ীরা তখন কথায় কথায় ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়তো। একবার যুদ্ধ বাধলে শত শত বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতো। এক আল্লাহকে ছেড়ে তারা শত শত দেব-দেবীর পূজা করতো। আপন হাতে গড়া প্রতিমা পূজায় তারা লিপ্ত ছিলো।
সে সমাজে ব্যক্তি পূজোর জম জমাট প্রচলন ছিলো। মদপান ও প্রবৃত্তি পূজার বাজার ছিলো। সমাজে ন্যায়বিচার ও আইন-কানুনের চিহ্নমাত্র ছিলো না। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা অকল্পনীয় ব্যাপার ছিলো। এ প্রতিকূল অবস্থাতেও তিনি এ জাহল ও বর্বর আরব ভূখন্ডকে গৌরবযোগ্য অঞ্চলে পরিণত করেছেন। বর্তমানে গোটা বিশ্বের মুসলমানরা আরব ভূখন্ডকে বিশ্বের সেরা ভূখন্ড বিবেচনা করে এবং মক্কা মোকাররমা ও মদীনা মোনাওয়ারার
নামে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার জন্যেও সদা প্রস্তুত থাকে। বস্তুত এটা একটা ঐশ্বরিক বিধান যে, বিশ্বের সেরা মহাপুরুষগণ ঐ খানে আবির্ভূত হন। বাহ্যত যেখানে তাঁদের আবির্ভাবের কোন সম্ভাবনা দেখা যায় না।

ঋণস্বীকার: আল্লামা ইকবাল সংসদ পত্রিকা
সম্পাদনা: পুনরুত্থান

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *