সুন্দর করে কথা বলা এক অনন্য শিল্প। শুধু শিল্প নয় তার চেয়েও অধিক। কেননা প্রিয় নবি (সা) বলেছেন, ‘সুন্দর কথা হলো সাদাকাহ’। শুধু কি তাই কুরআন বলেছে, ‘একটি ভালো কথা একটি ভালো গাছের মতো, মাটিতে যার বদ্ধমূল শিকড়, আকাশে যার বিস্তৃত শাখা, সবসময় সে দিয়ে যায় ফল আর ফল’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত : ২৪-২৫)। বাস্তব জীবনেও সুন্দর কথায় যেমন সম্পর্ক গড়ে, তেমনি মন্দ কথায় সম্পর্ক ভাঙ্গে ।

যাইহোক আজকের মূল কথায় আসি। সূরা লোকমান পড়ছিলাম। দুই তিনটি তাফসিরও দেখছিলাম । হঠাৎ এক ঘটনার মুখোমুখি হলাম । লোকমান (আ) কিভাবে সুবক্তা হয়েছিলেন ? শত শত মানুষ তাঁর মজলিসে খুব মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতেন ! কি আজিব বাত ! কি অদ্ভুত সেই রহস্য । একজন ধনহীন, বেটে, হাবশী গোলাম কিভাবে এই বাক শিল্প আয়ত্ত করেছিলেন? চলুন শুনি সেই গল্প । তার আগে একটু জেনে নেই হযরত লোকমান (আঃ) কে ছিলেন।
হযরত লোকমান (আঃ) সম্পর্কে অনেক বর্ননা পাওয়া যায়। তবে ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ‘তিনি একজন হাবশী ক্রিতদাস ও ছুতার ছিলেন’। হযরত সাইদ ইবনে মুসাইয়াব বলেন, ‘তিনি একজন মিশরে বসবাসকারী হাবশী ছিলেন’। অনেকে বলেন, ‘তিনি বনী ইসরাইলের একজন বিচারক ছিলেন’। আকারে তিনি ছিলেন বেটে, উচু নাক ও মোটা ঠোট বিশিষ্ট একজন জ্ঞানী মানুষ। তিনি একজন আল্লাহর ভালো বান্দা ছিলেন । মোদ্দা কথা হলো লোকমান (আঃ) নবী ছিলেন না ,তবে তাকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল, নবুওয়াত দেওয়া হয়নি।

এবার আসি সেই গল্পের কথায় । ইবনে কাসির (র) লিখেছেন একদা লোকমান (আঃ) কোন এক মজলিসে বয়ান করছিলেন।সেখানে অনেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন । এমন সময় এক রাখাল এসে লোকমান হাকিমকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তুমি কি সেই ব্যক্তি নও যে বনু হাসহাসের গোলাম ছিলে? আমার সাথে বিভিন্ন জায়গায় বকরি চাড়াতে?’ লোকমান হাকিম উত্তর দিলেন ‘জি আমি সেই ব্যক্তি’। তাঁর উত্তর শুনে রাখালের আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো। সেই আগুন্তক রাখাল আবার প্রশ্ন করলো, ‘তাহলে কিসে তোমার এই মর্যাদা দিলো? তোমার মধ্যে কি এমন গুণ আছে যার কারণে মানুষ তোমার মজলিসে সমাগত হয়, মনোযোগ দিয়ে তোমার কথা শ্রবন করে? কি সেই রহস্য?’
লোকমান হাকিম বললেন, ‘তুমি কি সত্যিই জানতে চাও কি সেই রহস্য ? তাহলে শুনো । আমি যা বলছি তা যদি আমল করতে পারো তাহলে তুমিও আমার মতো হতে পারবে। শত শত মানুষ তোমার কথা মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনবে। তারপর তিনি একে একে বলা শুরু করলেন , লোকমান হাকিম প্রথম বললেন:

১) হারাম জিনিস হতে চক্ষু বন্ধ রাখবে।
২) জিহ্ববাকে অশ্লীল কথা হতে সংযত রাখবে।
৩) হালাল খাদ্য খাবে
৪) নিজের গুপ্তাংগ হেফাজত করবে। ৫)সত্য কথা বলবে
৬)অঙ্গীকার পূরণ করবে।
৭) অতিথির সম্মান করবে।
৮) প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ্য রাখবে
৯)বাজে কাজ হতে নিজেকে বিরত রাখবে। এসব কাজই আমাকে এই মর্যাদা দিয়েছে।’
তার মানে হল, তুমি যদি এই ৯টি কাজ করতে পারো তা’হলে তুমি হবে সফল বক্তা ।
তাই আসুন এই আমল গুলো করে নিজেকে মর্যাদাবান করি ।

আতিক মুজাহিদ

পিএইচডি গবেষক
আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া |
সহ-সম্পাদক -পুনরুত্থান

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *