The Secrets of Selflessness- Muhammad Iqbal(Kalam-e-Iqbal)

ইসলামী সম্প্রদায়ের খিদমতে নিবেদন(প্রথম পর্ব)

প্রেমের শ্বাসে নিশাস নিলে অবিশ্বাসী হয় না কভু ;
এ মত্ততা নয় কো মম,
অন্য কারাে হয় বা তবু ।
–উরফী
তােমায় খুদা সষ্টি করেন পূর্ণতম শ্রেষ্ঠ জাতি,
তােমার মাঝে হরেক আদি সফল লভি’ পূর্ণ-ভাতি।
আউলিয়া তাের আমবিয়া-প্রায় মহান-আত্মা পুণ্যমনা,
হৃদয় বাঁধে প্রীতির ডােরে দিল-দরদী দিলীর জনা।
হাসীন কন্যা খৃস্টানদের মুগ্ধ রূপে নয়ন তব,
কাবার পুণ্য পথ ছেড়ে তাই ভ্রান্ত-গতি চরণ তব।
গগন, তােমার গমন-পথের চরণ-ধূলি মুষ্টিমেয়,
‘বদন তব বিনােদ ভূমি মগ্ধকারী বিশ্ব-প্রেয়।’
অগ্নি-শিখার উর্মি-সম ধাইছ কোথা ত্বরিত গতি ?
‘আনন্দেরি সন্ধানে হায় চলছ তুমি কোথায় নিতি ?
পতঙ্গেরই দহন দেখে মর্ম-দহন শিক্ষা করাে।
অগ্নি-শিখার কেন্দ্র মাঝে আবাস তব গঠন করে।
আপন প্রাণের গােপন কোণে প্রেমের ভিত্তি গঠন করো,
নবীর সাথে শপথ তব আবার তুমি নূতন করে।।
হৃদয় মম ক্লান্ত হলো বিধর্মীদের সঙ্গে বসে, হঠাৎ তব ঘােমটাখানি বদন হতে পড়ল খসে-।
সুর-সহচর পরকীয়ার রূপের স্ততি গাইল জোরে,
অলক বেণী, গোলাপ কপােল, বাখানিল মধুর স্বরে।
সাকীর দোরে ললাট ঘষে-’ ধর্ণা দিল সুরের সাথী;
অগ্নি-পূজক কন্যাগণের রূপ-কাহিনী গাইল গীতি।

তােমার ভুরুর বক্র অসির তীক্ষ্ম ঘাতে শহীদ আমি,
চরণ-রেণু তােমার পথের ভাগ্যে হলে হৃষ্ট আমি।
সুলভ স্তুতি চাটুকথার উর্ধ্বে আমি উচ্চ-শির,
হরেক রাজার দরবারেতে হয় না নত আমার শির।
দীপ্ত মুকুর গঠন করি বাণীর ইন্দ্রজালের দ্বারা, সিকান্দরের বিশ্ব-মকুর চাই না আমি মূল্য-হারা।
দুর্বহ-ভার দয়ার বােঝায় নয় কো নত স্কন্ধ মাের।
গােলাপ বনে প্রান্ত টেনে কোরক রচে বস্ত্র মাের।
খঞ্জর সম বিশ্বে আমি করছি সদাই শ্রম কঠোর,
কঠিন পাষাণ-সংঘাতে পাই হীরক-ভাতি তৈক্ষ্ম্যে মাের ।
সাগর বটি, কিন্তু নহে উত্তাল মাের ঊর্মিমালা;
আমার করে নাই তো কোন আবতর্ময় পানির জালা।
পরদা আমি রঙিন বটে, গন্ধবহ মলয় নই;
দখিন বায়ের ঊর্মি-দোলার নাচার আমি শিকার নই।
জীবন-সত্তা-অগ্নি মাঝে স্ফুলিংগ হই জলন্ত,
খিলাত মােরে প্রদান করে ভস্ম কালো নিবন্ত। পরাণ আমার বেদন জানায় করুণ সুরে তােমার দ্বারে,
অনুরাগের অর্ঘ্য লয়ে অশ্রুজলের মুক্তাহারে। নীল সাগর ওই আকাশ হতে বিন্দু , বিন্দু পানির রেখা,
তপ্ত মম হিয়ার পরে মুহুর্মুহু; আঁকছে লেখা।
কেন্দ্রীভূত করছি তাকে নদীর মতাে প্রখর স্রোতে,
সেচন করার মানস লয়ে তােমার পুষ্প -উদ্যানেতে।
আমার প্রিয়ের প্রিয় বলে’ আদর করে তােমায় বরি,
প্রাণের গভীর অন্তঃপুরে কলজে সম বক্ষে ধরি।
প্রেমের বেদন বক্ষ ছেদন করল যখন কান্না ভরে’
গড়ল মুকুর আনল তাহার হৃদয় আমার দ্রবণ করে।
দীর্ণ করি বক্ষ মম গােলাপ সম তােমার তরে। চোখের কাছে ধরব বলে হৃদয়-মুকুর তোমার তরে।

তােমার নিজের রূপের, পরে দৃষ্টি তােমার পড়বে যবে ।
কুন্তলেরি জিঞ্জিরেতে নিজেই তুমি বন্দী হবে।
প্রাচীন দিনের কিসসা গুলি আবার আমি বলছি হেন,
নূতন করে রক্ত ক্ষরে তোমার বুকের যখম যেন।
আত্মসত্তা বিষয়ে অজ্ঞ ঘুমন্ত এই জাতির তরে,
যাঞ্জা করি—দাও হে খুদা, সবল সফল জীবন তারে,
অর্ধরাতের, নিঝুম ক্ষণে বিলাপ করি করুণ স্বরে,
‘বিশ্ব যখন নিদ্রা মগন’ বক্ষ ভাসাই নয়ন-লােরে।
বঞ্চিত মাের পরাণখানি ধৈর্য এবং শান্তিহীন,
‘হে জীবন্ত পরাক্রান্ত’ জপ করেছি রাত্রিদিন।
লুপ্ত ছিল সেই বাসনা আমার মনের গােপন বনে,
রক্ত হয়ে পড়ল ঝরে অবাধ স্রোতে নয়ন-কোণে।
লালার মত লালিম আভায় জ্বলব কত নিরন্তর।
শিশির ভিক্ষা উষার দ্বারে করব কত নিরন্তর ?
শামা’র সম পড়ছে গলে আমার দেহে অশ্র মম,
আমার সাথে যুদ্ধ করি মােমের বাতির সমর সম,
উজল করি প্রদীপ-শিখা নিজের দেহ দাহন করে’
অধিক আলো হর্ষ-শােভা প্রদান করি সবার তরে,
নিমেষ তরে বক্ষ আমার দাহন হতে বিরাম না পায় ;
হপ্তা মম জুমু’আ বারে পরিশ্রমে লজ্জা না পায়।
পরাণ আমার বন্দী আছে ধড়ের মাঝে ভাংগাচোরা ,
মর্যাদা তার ধুলায় মলিন ,দীর্ঘ নিশাস বক্ষ-চেরা।
কালের ঊষার যখন খুদা আমার দেহে সৃজন করে ,
ক্রন্দন-গীতি উঠল বেজে আমার হৃদয় -সেতার পরে ।
প্রেমের যত গোপন কথা সেই সুরেতে প্রকাশ পেলো ,
প্রেম কাহিনীর করুণ ব্যথার ক্ষতিপূরণ আদায় হলো ।
নিছক তৃণে অগ্নি-শিখার স্বভাব রীতি সে সুর দানে ,
মৃত্তিকারই তুচ্ছ ঢেলায় পতঙ্গেরই সাহস দানে।

একটি চিহ্ন রক্ত-লালার প্রেমের তরে যথেষ্ট সেই,
বক্ষে তাহার বিলাপ-প্রতীক একটি গােলাপ যথেষ্ট সেই,
উষ্ণীষেতে এমনি গােলাপ একটি আমি পরাই তােমার
আওয়াজ তুলি’ প্রলয়-ডাকে নিদ্রা গভীর ভাঙ্গবাে তােমার।
মৃত্তিকাতে তোমার যেন পুষ্প ফোটে নূতন ক’রে,
তোমার শ্বাসে মধুর মলয় বয় যেন গাে নূতন করে।

তর্জমা – আবুল ফারাহ মুহম্মদ আবদুল হক

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *